ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে সরকারিভাবে খাদ্য গুদামে গম ক্রয়ের জন্য লটারির মাধ্যমে বিক্রেতা কৃষক নির্বাচন করা হয়। কৃষি অধিদপ্তর ও খাদ্য বিভাগের বিরুদ্ধে লটারিতে নির্বাচিত কৃষকের নাম বদলিয়ে পছন্দমতো লোকের নাম তালিকায় ঢোকানোর অভিযোগ উঠলে কৃষকের দাবির মুখে গম কেনা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সরকারিভাবে গম কেনার লক্ষ্যে কৃষক নির্বাচনে ১৬ মে বিকালে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আখতারুল ইসলাম, কৃষি কর্মকর্তা এসএম গোলাম সারওয়ার, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল মোমিনসহ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে লটারি করা হয়। উপজেলার ২১ হাজার গম চাষিকে লটারির আওতায় এনে ১ হাজার ৬১৮ কৃষককে নির্বাচন করা হয়। তবে লটারিতে কৃষকের নাম না দিয়ে ক্রমিক নম্বর ব্যবহার করা হয়। পরে চূড়ান্ত তালিকা করার জন্য কৃষি কর্মকর্তা এমএম গোলাম সারওয়ার, পীরগঞ্জ খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মাহবুব হাসান ও লোহাগাড়া খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শাহিন আলমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। চূড়ান্ত তালিকায় লটারিতে ওঠা প্রকৃত কৃষকের নাম ও ক্রমিক নম্বর বদলিয়ে পছন্দের লোকজনের নামে তারা তালিকা তৈরি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ তালিকায় একই পরিবারের সাত থেকে আটজন এবং একই পাড়ার ৩০ থেকে ৩৫ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ তালিকা অনুযায়ী ২০ মে খাদ্য বিভাগ গম ক্রয় কার্যক্রম উদ্বোধন করে। এ সময় খাদ্য গুদাম চত্বরে কৃষকরা বিতর্কিত তালিকা দেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে গম কেনা বন্ধ করার দাবি জানান। এরপরও ২১ মে পীরগঞ্জ খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মাহবুব হাসান বিতর্কিত তালিকায় নাম থাকা পৌর শহরের জগথা গ্রামের একটি প্রভাবশালী পরিবারের সাতজনসহ বেশ কিছু কৃষকের প্রায় ৩০০ বস্তা গম গুদামে ঢোকান। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারাও প্রতিবাদ জানান। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ক্রয় কমিটির সভাপতি এডব্লিউএম রায়হান শাহ তালিকা তদন্ত করে কৃষকের নাম ও ক্রমিক নম্বর রদবদলের প্রমাণ পান। তাই তিনি বুধবার বিকালে গম কেনা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, তালিকায় যাদের নাম রাখা হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই প্রকৃত কৃষক নন। এ দুর্নীতিতে প্রায় ২৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কৃষি কর্মকর্তা এসএম গোলাম সারওয়ার বলেন, লটারির তালিকায় কোনো রদবদল করা হয়নি। দপ্তরের নথিপত্র থেকে তালিকা করা হয়েছে। এখানে বাড়তি কারও নাম দেওয়া হয়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল মোমিন সরকার বলেন, কৃষকের তালিকা থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন জগথা গ্রামের প্রভাবশালী পরিবারটি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এডব্লিউএম রায়হান শাহ বলেন, আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে লটারি করার চেষ্টা করেছি। কিছু বিষয়ে সমস্যা রয়েছে, যা নলেজের বাইরে ছিল। বিতর্কিত লটারি বাতিল করে শিগগিরই নতুন লটারি করে প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকেই গম কেনা হবে।