আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৬-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

চট্টগ্রামবাসী মেগা প্রকল্প শেষের অপেক্ষায়

দুই দিনের বর্ষণে নগরীতে জলাবদ্ধতা

সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম
| শেষ পাতা

জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্প শেষের অপেক্ষায় আছেন চট্টগ্রাম নগরবাসী। আশা করা হচ্ছে, ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প কাজ শেষ হলে মুক্তি মিলবে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে। মেগা প্রকল্পের কাজ চলাকালীন সময় শুক্রবার রাত ও শনিবার ভোরে দুই দফায় প্রবল বর্ষণে আবার ডুবে যায় নগরী। জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ কিছুতেই কমছে না। বারবার নগরী জলমগ্ন হওয়ায় নগরবাসীর হতাশা কেবল বাড়ছে। অনেকের মতে, সঙ্কট নিরসনে সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব। আবার অনেকেই বলছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তব কোনো উদ্যোগ নেই। যা প্রকল্প কাজ চলছে তা দিয়ে দ্রুত সঙ্কট কাটবে না। দ্রুত ফলপ্রসূ হয় এমন কোনো প্রকল্প কিংবা তৎপরতা না থাকায় মহা এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলছে না।

তবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্প নিয়ে তারা যথেষ্ট আশাবাদী। প্রকল্প কাজ শেষ হলে নগরী ভারীবর্ষণে জলমগ্ন হবে না। দুর্ভোগ অনেক কমবে। প্রকল্প কাজ সম্পূর্ণ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সংকট নিরসনে নানাভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অধীনে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত নগরের সাতটি খালের মুখে ও ভেতরে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এসব বাঁধের কারণে বৃষ্টির পানি দ্রুত নামতে পারছে না। ফলে গেল দুদিনের ভারিবর্ষণে বরাবরের মতো তলিয়ে যায় নগরী। জলাবদ্ধতার চিত্র ভয়াবহ। তাই আগামী বর্ষায় জলাবদ্ধতা আরও চরম রূপ নেওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। সিডিএ সূত্র জানায়, ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ ও সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর তীরে সড়ক নির্মাণে আরেকটি প্রকল্পের কাজ চলছে। সিডিএ এ দুটি প্রকল্পের অধীনে নগরের সাত খালে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে এসব বাঁধ দেওয়া হয়। সম্প্রতি সিডিএর বিদায়ী চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেছিলেন, প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ, সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্প পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত জলাবদ্ধতার সমস্যা সম্পূর্ণ দূর হবে না। তিনি তার বক্তব্যে স্বীকার করে নিয়েছিলেন জলাবদ্ধতা সংকটের সহসা নিস্তার মিলছে না। বাস্তবে তাই দেখা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের অনেকেই খালের মুখে বাঁধ দেওয়ার কারণে পানি দ্রুত নিষ্কাশন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন। নগরের পাথরঘাটার টেকপাড়া, কলাবাগিচা ও মরিয়ম বিবি খাল, ফিরিঙ্গিবাজার খাল, চাক্তাই খাল ও রাজাখালী খালে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এগুলো কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত। খালগুলো দিয়ে নগরের ১১টি ওয়ার্ডের পানি প্রবাহিত হয়ে নদীতে পড়ে। এসব এলাকায় প্রতিবছরই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া সøুইসগেট নির্মাণের জন্য মহেশখালেও বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে পানি দ্রুত সরতে না পেরে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। অন্তত শুক্রবার রাত ও শনিবার ভোরের বৃষ্টি তা সত্য বলে প্রমাণিত করেছে। কারণ ওই সময় ভারিবর্ষণে নগরীর নিচু এলাকা আবার জলমগ্ন হয়ে পড়ে। তবে সিডিএর কর্মকর্তারা জানান, খাল খনন এবং দুই পাশে প্রতিরোধ দেওয়াল নির্মাণের জন্য সাময়িকভাবে এসব বাঁধ দেওয়া হয়েছে। খালের ভেতর থেকে পানি নদীতে নিষ্কাশনের জন্য বাঁধগুলোতে পাইপ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ২০টি খালে খনন কাজ চলছে। এসব খাল খনন শেষ হলে পানি নিষ্কাশন দ্রুত হবে। কমবে জলাবদ্ধতা সমস্যা।