শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকলে হলে খাতভিত্তিক উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে খাতভিত্তিক গবেষণা সেল ও পৃথক কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটি প্রয়োজন অনুযায়ী সভা আয়োজন করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিল্পপণ্য বৈচিত্র্যকরণ ও শিল্প দক্ষতা বাড়ানোর কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
রোববার শিল্প মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় উৎপাদনশীলতা পরিষদের (এনপিসি) ত্রয়োদশ সভায় তিনি এ কথা বলেন। শিল্প ও সেবাসহ বিভিন্ন খাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে কর্মকৌশল নির্ধারণে এ সভার আয়োজন করা হয়। শিল্পমন্ত্রী এতে সভাপতিত্ব করেন। এতে শিল্পসচিব মো. আবদুল হালিমসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়Ñ কৃষি খাতে শ্রমিক সংকট নিরসনে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অরগানাইজেশন (এনপিও)। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার প্রতিও আগ্রহ সৃষ্টি করা হবে। এছাড়া, প্রথাগত কৃষি উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বাণিজ্যিক রূপ লাভ করায় এ খাতে উৎপাদনশীলতার বৃদ্ধির বিদ্যমান সুযোগ পরিকল্পিতভাবে পণ্য বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে কাজে লাগানো হবে।
সভায় শিল্পমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকলে হলে খাতভিত্তিক উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে খাতভিত্তিক গবেষণা সেল ও পৃথক কমিটি গঠন করতে হবে। এ কমিটি প্রয়োজন অনুযায়ী সভা আয়োজন করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিল্পপণ্য বৈচিত্র্যকরণ ও শিল্প দক্ষতা বাড়ানোর কর্মসূচি গ্রহণ করবে। এ দায়িত্ব পালনে এনপিসির সদস্যভুক্ত মন্ত্রণালয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পারস্পরিক দায় এড়ানোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প ২০২১, রূপকল্প ২০৪১ এবং এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে সব খাতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কার্যকর প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। পরে শিল্পমন্ত্রী জাতীয় উৎপাদনশীলতা বার্তা’র (এনপিও বার্তা) মোড়ক উন্মোচন করেন।
সভায় শিল্প, সেবা ও কৃষি খাতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় জানানো হয়, বাংলাদেশে শিল্প কারখানায় উৎপাদনশীলতার হার এখনও ৫০ শতাংশের নিচে। এশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোয় উৎপাদনশীলতার হার ৬০ শতাংশের বেশি। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্য টিকে থাকার জন্য শিল্প খাতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কারখানা ব্যবস্থাপনায় জড়িত মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় জানানো হয়, কৃষি ও শিল্প খাতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এনপিও নির্ধারিত বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প খাতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এনপিও’র উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। চামড়া শিল্প এবং রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি ও সার শিল্প কারখানার উৎপাদনশীলতা উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটি বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
সভায় শিল্প প্রতিমন্ত্রীকে জাতীয় উৎপাদনশীলতা পরিষদের (এনপিসি) সহ-সভাপতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া, জাতীয় পর্যায়ে উৎপাদনশীলতা উন্নয়ন কর্মসূচি জোরদারের লক্ষ্যে বছরে চারবার এনপিসির সভা আয়োজন এবং এনপিও পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফল ও সুপারিশ পরবর্তী এনপিসির সভায় উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।