অভিনব কায়দায় উচ্চ পদে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের মূল হোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মূল হোতা কুমিল্লার বারেক সরকার ওরফে হাজী বারেক (৬৩), যশোরের হাবিবুর রহমান (২৪), কুমিল্লার জাকির হোসেন (৫৮), ভোলার আক্তারুজ্জামান (২৮) ও বরিশালের শাহরিয়ার তাসিম (১৯)। তারা সবাই ‘রয়েল চিটার ডেভেলপমেন্ট-(আরসিডি)’ নামে কথিত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির নামে প্রতারণা করত। রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির। গেল ২ মার্চ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এ চক্রের ২২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা থেকে বারেকসহ পাঁচজনকে শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির আরও জানান, স্কুলের গ-ি পেরুতে না পারা কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকার বাসিন্দা বারেক সরকারকে ১৮ বছর বয়সে সৌদি আরব পাঠিয়ে দেন বাবা-মা। তবে সেখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে না পারলেও মানুষ ঠকানোর নানা কৌশল আয়ত্ত করে। দুই বছর পর দেশে ফিরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেয় প্রতারণার জাল। দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে প্রতারণার মাধ্যমে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও কৌশলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়িয়ে গেছে। এ সময় বারেকের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, রয়্যাল চিটার ডেভেলপমেন্ট (আরসিডি) নামে একটি প্রতারণা কোম্পানি খোলে বারেক। এই নামে অফিস নেওয়াসহ সব কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও কোম্পানির প্রকৃত নাম সবার অজানা ছিল। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আরসিডির ছোট ছোট গ্রুপ রয়েছে। যারা সুসজ্জিত অফিস ভাড়া করে বিত্তবানদের ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়।
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, এই চক্রটি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবসরের আগে থেকেই টার্গেট করে।
তাদের কোম্পানিতে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে অফিসে নিয়ে আসে এবং প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। অফিস কর্মকর্তাদের চালচলনে অভিভূত হয়ে টার্গেট করা ব্যক্তিরা অবসরকালীন প্রাপ্ত পেনশনের টাকা বিনিয়োগ করতেন। এর কয়েক দিন পরেই অফিসসহ উধাও হয়ে যেত অফিসের কর্মকর্তারা। এছাড়া ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকার অর্ডারের ফাঁদে ফেলে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার স্যাম্পল নিত। কয়েক কোটি টাকার মালামাল তৈরিতে যে পরিমাণ কাঁচামাল প্রয়োজন তা সরবরাহের কথা বলে অগ্রিম হিসেবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করে আসছিল চক্রটি। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের জমি বা নির্মাণাধীন ভবনের ওপর ইন্টারনেট টাওয়ার স্থাপনের প্রলোভন দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন।
তিনি বলেন, ৪৩ বছরে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রতারণার মাধ্যম অন্তত শত কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছে বারেক। ঢাকা শহরে নিজের নামে ফ্ল্যাট, গাড়ি এবং গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় জমিজমাসহ অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছে প্রতারণার মাধ্যমে।