আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৭-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

ঈদে বাড়ি ফেরা

ভোগান্তিতে শেষ ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক
| শেষ পাতা

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অগ্রিম টিকিট বিক্রির শেষ দিনে রোববার রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট পেয়ে দেখাচ্ছেন এক নারী - আলোকিত বাংলাদেশ

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রির শেষ দিন ছিল রোববার। যাত্রীসেবা বাড়ানো ও ভোগান্তি কমাতে এবার ঈদুল ফিতর সামনে রেখে বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেনের মোট টিকিটের ৫০ শতাংশ ই-টিকেটিংয়ের জন্য রাখলেও রেলের ওয়েবসাইট ও নতুন তৈরি মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে টিকিট করতে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে মানুষ। রোববার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে টিকিট বিক্রি। টিকিট নিতে ভোররাত থেকেই অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছেন। অনেকে আবার শনিবার ইফতার করে রোববার ভোরে সেহরিও করেছেন স্টেশনেই। এর সঙ্গে তীব্র গরম মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রির মধ্যে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন ১৩ জোড়া ট্রেনের টিকিট দেওয়া হয়েছে। রয়েছে খুলনা, ঈশ্বরদী ও লালমনিরহাটের ঈদ স্পেশাল ট্রেন। প্রতিদিন বিক্রি করা হয়েছে ১৪ হাজারেরও বেশি টিকিট এবং মোবাইলের অ্যাপে বিক্রি হয়েছে প্রায় সাত হাজার টিকিট। কমলাপুর রেলস্টেশনের কাউন্টার থেকে বিক্রি হয়েছে পাঁচ হাজার ১৫১টির মতো টিকিট।

এদিকে ঈদের আগাম টিকিট বিক্রির চতুর্থ দিন অনলাইনে ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কিনতে না পারার অভিযোগ করছেন অনেকে। বাধ্য হয়ে তাদের ছুটতে হয়েছে কমলাপুর স্টেশনসহ বিভিন্ন গন্তব্যের জন্য নির্দিষ্ট কাউন্টারে। ফলে দ্বিগুণ ভোগান্তির শিকার হয়েছেন টিকিট প্রত্যাশীরা।

সরকারি তিতুমীর কলেজের হিসাববিজ্ঞানের ছাত্র জাহাঙ্গীর আলম জানান, রাজশাহী যাওয়ার সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট মোবাইল অ্যাপে কিনতে ব্যর্থ হয়ে কমলাপুর এসেছেন। তিনি বলেন, অনেক চেষ্টা করেও মোবাইল অ্যাপে ঢুকতেই পারিনি। জাহাঙ্গীর জানান, সকাল থেকে অনলাইনে এবং অ্যাপে চেষ্টা করেছি। রেলওয়ের ওয়েবসাইটে তবুও ঢোকা যায় কিন্তু অ্যাপে ঢুকতেই পারি না। অ্যাপ ডাউনলোড করেও আবার ডিলিট করে দিয়েছি। পরে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছি। 

একই অভিযোগ করলেন মুগদার বাসিন্দা সোহেল মাহবুব। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সোহেল মাহবুব বলেন, অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দুই দিন তিনি মোবাইলের অ্যাপে টিকিট কেনার চেষ্টা করে বিফল হয়েছেন। রেলওয়ের অনলাইন

টিকিট সেবা দিচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিএন?এসবিডি। রোববার দেওয়া হয়েছে ৪ জুনের টিকিট। ঢাকার স্টেশন থেকে অনলাইনে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১০ হাজার ৫৬১টি টিকিট। এর মধ্যে দুপুর একটা ২০ মিনিট পর্যন্ত ৬ হাজার ৫৭৩টি টিকিট বিক্রি হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে সিএন?এসবিডি। তবে কমলাপুর স্টেশনের মনিটরে প্রদর্শিত সিএনএসবিডির এ তথ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কিনতে আসা নাবিল আহমেদ। 

ঈদের পর ই-টিকেটিংয়ের অব্যবস্থাপনার অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘তারা (সিএনএসবিডি) আমাদের বলছে, একসঙ্গে প্রায় ৪ লাখ লোক অনলাইনে টিকিট কিনতে চেয়েছে। এ কারণে সবাইকে টিকিট দেওয়া সম্ভব হয়নি। ঈদের পর আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখব। তাদের যুক্তি সঠিক প্রমাণ না হলে আমরা অন্য চিন্তা করব। কাউন্টারে পাওয়া যাচ্ছে টিকিট : অনলাইনে টিকিট না পেলেও কাউন্টার থেকে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার কমলাপুর স্টেশনের কাউন্টারে টিকিট বিক্রির নির্ধারিত সময় ৪টার পরও টিকিট নিতে দেখা গেছে। একই চিত্র দেখা গেছে টিকিট বিক্রির শেষ দিন রোববারও। রেল কর্মকর্তারা জানান, অন্য বছরের মতো এবার টিকিটের জন্য কারও ‘ডিও’ না নেওয়ায় কোনো টিকিট ‘ব্লক’ করে রাখার প্রয়োজন পড়ছে না। এ কারণে কাউন্টার থেকে টিকিট পাচ্ছেন টিকিট প্রত্যাশীরা। যাত্রীরা মনে করছেন, টিকিট বিক্রির প্রথম দিন দুদকের কর্মকর্তারা কমলাপুর স্টেশনে হানা দেওয়ায় চিত্র পাল্টে গেছে। টিকিট বিক্রির ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে ভালো বলে মন্তব্য করে রাজশাহীর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট প্রত্যাশী সরকারি চাকরিজীবী আবুল হাসেম বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় টিকিট বিক্রি করায় এখানে ভিড় কম। এখানে সারা দেশের ঈদের ট্রেনের টিকিট বিক্রি হতো। অনেক লোক সমাগমের কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো। এবার সেটি নেই। এছাড়া এবার কাউন্টারে টিকিট বেশি আছে মনে হচ্ছে। কারণ গতবার দেখেছি সাড়ে ৮টার দিকেই এসি টিকিট শেষ হয়ে যেত। ১১টা সাড়ে ১১টায় শোভন চেয়ারের টিকিট শেষ। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম।