আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৭-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

রাজশাহীতে সড়কে চাঁদাবাজি চলছেই

ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ

রাজশাহী ব্যুরো
| নগর মহানগর

রাজশাহী মহানগরীর ভেতর তিনটি স্থানে এখনও পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নামে চাঁদা তোলা হচ্ছে। চাঁদাবাজি বন্ধে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশন স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনকে চিঠি দিলেও চাঁদা তোলা বন্ধ করা হচ্ছে না। পুলিশ প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে স্থানীয় শ্রমিক নেতারা চাঁদা তুলে লুটপাট করছেন বলে অভিযোগ সাধারণ শ্রমিকদের।
রোববার সকালে সরেজমিন গেলে রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল বাস টার্মিনালের সামনের সড়কে পরিবহন থেকে চাঁদা তুলতে দেখা গেছে। রেলওয়ে স্টেশনের সীমানা প্রাচীরঘেঁষে ওই দুই যুবক ছাতার নিচে বসে চাঁদা তুলছিলেন। একইভাবে নগরীর নওদাপাড়া আমচত্বর এবং তালাইমারী মোড়ে বাস ও ট্রাক থেকে চাঁদা তুলতে দেখা গেছে। তবে পুলিশ বলছে, চাঁদা তোলার বিষয়টি তাদের জানা নেই। যদিও শিরোইল পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ১০০ গজ দূরেই চাঁদা তোলা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথভাবে পরিবহন থেকে চাঁদা তুলে থাকে। মাত্র কয়েক দিন আগেও রাজশাহী মহানগরীর চারটি স্থানে ট্রাক ও বাস থেকে চাঁদা তোলা হতো। এ নিয়ে ১২ মে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার, সিটি করপোরেশনের মেয়র, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার, একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা, র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক, জেলা প্রশাসক ও জেলার পুলিশ সুপারকে (এসপি) চিঠি দিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন।
এর পরের দিনই রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় চার চাঁদাবাজকে আটক করে কারাদ-ও দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর সেখানে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়। কিন্তু নগরীর অন্য তিনটি স্থান থেকে এখনও চাঁদা তোলা হচ্ছে। এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না নগর পুলিশ প্রশাসন। অথচ ওই চিঠি পাওয়ার পর রাজশাহীর ডিআইজির নির্দেশে জেলার পুঠিয়া, নাটোর ও সিংড়া এলাকায় চাঁদা তোলা বন্ধ করেছে পুলিশ।
সাধারণ শ্রমিকরা জানান, রাজশাহী মহানগরীতে পরিবহন থেকে যে চাঁদা তোলা হয়, তার ৬০ শতাংশ পায় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন। আর ৪০ ভাগ থাকে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের। প্রতিটি বাস থেকে নেওয়া হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা। আর ট্রাক থেকে নেওয়া হয় সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতিদিন ট্রাক থেকে চাঁদা ওঠে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। আর বাস থেকে ওঠে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। গড়ে মোট টাকার পরিমাণ প্রায় ১ লাখ। অথচ শ্রমিক সংগঠনের তহবিলে তেমন টাকা নেই।
জানতে চাইলে রোববার জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক কামাল হোসেন রবি চাঁদা তোলার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, শ্রমিকরা আহত হলে চিকিৎসা করাতে হয়। মেয়ের বিয়ে হলে অনুদান দিতে হয়। আরও নানা খরচ আছে। তাই আমাদের টাকা আমরাই তুলি। এতে কারও কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আর একটি টাকাও লোপাট হয় না বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, সড়কে চাঁদাবাজি নতুন না। কিন্তু রাজশাহীতে আম-লিচুর মৌসুমে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা হয়রানি হচ্ছেন। বাধ্য হয়ে তারা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। আর চাঁদার ভাগ পুলিশও পাচ্ছে। তাই তাদের সামনেই চাঁদাবাজি চললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আমরা এ চাঁদাবাজি বন্ধের জোর দাবি জানাই।