আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৭-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

শিশু আবিরের চোখে মুখে বাঁচার আকুতি

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
| খবর

মানুষ দেখলেই মুখের দিকে ফ্যালফেলিয়ে চেয়ে থাকে সাড়ে তিন বছরের শিশু আবির। এটা যেন তার বেঁচে থাকার আকুতি। অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে তার শরীর অস্থি-চর্মসার। দূর থেকে দেখে মনে হয় একটি কঙ্কাল। কথা বলা তো দূরের কথা নিজের হাত-পা পর্যন্ত নাড়াতে পারে না সে। এমন অসুস্থ শিশুটিকে তার বাবা-মা কোনো খোঁজখবর নেয় না। নানা-নানির কাছেই থাকে সে। নানা লিয়াকত আলী পেশায় দিনমজুর। ফলে সারা দিন নানি মঞ্জুরাকেই আবিরের দেখভালের দায়িত্ব পালন করতে হয়। তিনি যখন কাজে থাকেন, অসুস্থ আবিরকে যেভাবে শুইয়ে রাখা হয় বিছানায় সে সেভাবেই শুয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর পর তাকে অন্য কাথি করে শোয়াতে হয়। এভাবে দারিদ্র্যের কারণে এখন প্রায় বিনা চিকিৎসায় নানা বাড়িতে পড়ে আছে শিশু আবির। সে যশোরের সাতমাইল এলাকার বেলেডাঙ্গা গ্রামের আলামিন হোসেনের ছেলে। বাবা-মা নিজ সন্তানের খোঁজখবর না নেওয়ায় নানাবাড়ি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের পৌর এলাকার কাশিপুর গ্রামই তার এখন একমাত্র ঠিকানা। 

আবিরের নানা লিয়াকত আলী জানান, তিনি অত্যন্ত গরিব। বসতভিটার দেড় শতক ছাড়া তার নিজের কোনো জমি নেই। পরের ক্ষেতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসার চালান। তার কোনো ছেলে সন্তান নেই। চার মেয়েÑ রোজিনা, স্বপ্না, রতœা, রুনাকে বিয়ে দিয়েছেন। এদের মধ্যে আবিরের মা রতœা খাতুনকে বিয়ে দিয়েছেন যশোরের বেলেডাঙ্গা গ্রামের রাজমিস্ত্রি আলামিনের সঙ্গে। বিয়ের এক বছর পর আবির জন্ম নেয়। তখন প্রায় সময়ই জামাই-মেয়ে তার বাড়িতে থাকতেন। এ সময় নানা-নানি ভেবেছিলেন নিজেদের ছেলে নেই, তাই নাতিকে লালন-পালন করতে পারলে সে বৃদ্ধ বয়সে তাদের দেখাশুনা করতে পারবে। তাই আবিরের জন্মের ৮ মাস পরই তারা নিজ বাড়িতে সন্তানের মতো লালন-পালন শুরু করেন। কিছুদিন পর জামাই বাড়িতে নিয়ে তাকে টিকা দেওয়ার পর প্রচ- জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হয় তার। এক পর্যায়ে আবির প্রচ- অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে ডাক্তার দেখানো হলেও আর সুস্থ হয়নি। ক্রমেই সে দুর্বল হয়ে পড়ছে। বর্তমানে তার হাত-পা সরু হতে হতে কঞ্চির মতো হয়ে গেছে। একটু দূর থেকে তাকে দেখলে মনে হয় মানুষের কঙ্কাল পড়ে আছে। তিনি জানান, পরের ক্ষেতে কামলার কাজ করে যে পয়সা আয় হয় তা দিয়ে সংসারের খরচ মেটানোও কষ্ট হয়ে যায়। এরপরও নাতি আবিরের জন্য দুধ ও ঔষধ কিনতে হয়। অনেক সময় পয়সার অভাবে নিজেদের খাবার না কিনে আবিরের ব্যবস্থা করা লাগে। 

আবিরের নানি মঞ্জুরা বেগম জানান, জন্মের আট মাসের পর আবিরকে জামাই বাড়িতে নিয়ে টিকা দেওয়া হলে তার জ্বর হয়। এরপর সে অসুস্থ হয়ে গেলে ছোটবেলা থেকেই আবির এখানে থাকে। অসুস্থতায় সারাক্ষণ তার পেছনে সময় দিতেই সময় চলে যায়। অভাবের সংসারে অসুস্থ নাতিকে দেখাশুনা চিকিৎসা করাতে গিয়ে তারা প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি বলেন, আবিরের দেড় বছর বয়সি আপন নামের আরেকটি ভাই আছে। সে তার বাবা-মায়ের আদর ¯েœহে মানুষ হচ্ছে। কিন্তু অসুস্থ আবিরের জন্য তার বাবা-মা কিছুই করে না। কিন্তু মায়ার জালে আটকে আমরা আবিরকে ফেলে দিতে পারছি না। 

কাশিপুর গ্রামের বাসিন্দা আকরাম হোসেন জানান, টানাটানির সংসারেও আবিরের চিকিৎসায় তার নানা-নানি সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অসুস্থ শিশুটিকে মা-বাবা না দেখলেও তার নানা-নানি যেভাবে কষ্ট করে যাচ্ছে, এটা আসলেও বিরল ঘটনা। অসহায় আবিরের জন্য তিনি সামর্থ্যবান মানুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। 

এ ব্যাপারে ডা. আলতাফ হোসেন (সাবেক অধ্যক্ষ ম্যাটস বাগেরহাট) বলেন, শিশুদের টিকা দেওয়া হয় বিভিন্ন রোগ প্রতিষেধকের জন্য। টিকা দেওয়ার কারণে শিশু আবিরের এমন হয়েছেÑ কথাটি অভিভাবকরা ঠিক বলেননি। কারণ, টিকাগুলো অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত। তিনি বলেন, শিশুটির শরীরের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে হবে, কেন এমনটি হচ্ছে।