বাংলাদেশে গর্ভধারণ এবং প্রসবজনিত জটিলতায় প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৫ জন মায়ের মৃত্যু হয়। এ হিসাবে বছরে এ মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪৭৫ জন। এ মাতৃমৃত্যুর ৫৫ ভাগই প্রসব-পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটে। অবস্ট্রেটিক্যাল অ্যান্ড গাইনিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) রোববার এ তথ্য জানায়। সকালে বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস-২০১৯ উপলক্ষে বাংলাদেশ মেডিকেল আসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবনে আয়োজিত সভায় ওজিএসবি এ তথ্য জানানো হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ওজিএসবি সভাপতি অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী, মহাসচিব অধ্যাপক সালেহা চৌধুরী
ছাড়াও অধ্যাপক ফেরদৌসি বেগম, অধ্যাপক রাশিদা বেগম, অধ্যাপক দিপি বড়–য়া, অধ্যাপক সায়েবা বেগম, অধ্যাপক লায়লা আরজুমান্দ বানুু, অধ্যাপক নাজিয়া করবী, অধ্যাপক লতিফা শামসুদ্দিন প্রমুখ চিকিৎসক।
সভায় প্রসূতি বিশেষজ্ঞরা এসডিজি অর্জনে প্রতিটি পরিবারের দোরগোড়ায় মাতৃস্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে সরকার ও জনগণকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। দেশে অনাকাক্সিক্ষত মাতৃমৃত্যু হ্রাসে মানসম্মত গর্ভকালীন সেবা নিশ্চিত, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব ও নারীর স্বাস্থ্য অধিকারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্তমানে ৫৩ শতাংশ মাতৃমৃত্যু হচ্ছে বাড়িতে। এটি রোধ করতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বাভাবিক প্রসবের বিকল্প নেই। এজন্য প্রতিটা উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সসহ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে লেবার রুম থাকা এবং প্রতি রুমে অন্তত চারজন করে দক্ষ মিডওয়াইফারি সেবা নিশ্চিত করতে হবে। প্রসূতির সেবায় মিসপোস্ট্যাল জাতীয় ওষুধের সরবরাহ থাকতে হবে। যেসব মায়েদের উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস অ্যামিনিয়া (রক্তস্বল্পতা) ও একলাম্পশিয়ার (খিঁচুনি) সমস্যা আছে তাদের বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া মাতৃমৃত্যু রোধে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে ই-ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে সব গর্ভবতী মাকে অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা, প্রসব-প্রস্তুতি পরিকল্পনায় গর্ভবতী নারী এবং তার পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করতে জোর দিতে হবে।
সভায় আরও বলা হয়, বর্তমানে দেশে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির হার ৪৭ শতাংশ। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রসব পরবর্তী সেবা গ্রহণের হার ৩২ শতাংশ। প্রসব পরবর্তী সময় ৭৩ ভাগ মাতৃমৃত্যু ঘটে যার ৫৬ ভাগই মারা যায় সন্তান প্রসবের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। এসব মৃত্যুর ৩১ শতাংশ কারণ রক্তক্ষরণ, ২৪ শতাংশ একলাম্পসিয়া বা খিঁচুনি, ৭ ভাগ কারণ গর্ভপাত, ২ ভাগ বাধাগ্রস্ত বা অবিরাম প্রসব বেদনা। এছাড়া ৭ ভাগ প্রত্যক্ষ ও ২০ ভাগ পরোক্ষ কারণে। পরোক্ষ কারণ হলো উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন বিষয়।
উল্লেখ্য, এবছর দিবসটি উপলক্ষে জনসচেতনতা বাড়াতে ‘মর্যাদা ও অধিকার স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রসূতি সেবার অঙ্গীকার’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় অবস্ট্রেটিক্যাল অ্যান্ড গাইনিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের উদ্যোগে আলোচনা সভা, মিরপুরের ওজিএসবি হাসপাতাল অ্যান্ড আরআইসিএইচে দিনব্যাপী বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। পাশাপাশি আজ দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সচিবালয়ে দেশের মাতৃস্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।