আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৭-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

জোয়ারে ভেসে গেছে লবণ

চকরিয়ায় আড়াই শতাধিক প্রান্তিক চাষির পথে বসার উপক্রম

একেএম ইকবাল ফারুক, চকরিয়া
| দেশ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় তিনটি পোলবোট খুলে দেওয়ায় জোয়ারে ভেসে যাওয়া লবণের মাঠ- আলোকিত বাংলাদেশ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় অতর্কিতভাবে তিনটি পলবোট খুলে দেওয়ায় সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে লবণ চাষির মাঠে মজুদ করা অন্তত ৩৫ হাজার মণ লবণ। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের সাতডালিয়ার বেড়িবঁাঁধের পাশের ২ নম্বর বড় লবণ মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে স্থানীয় আড়াই শতাধিক প্রান্তিক লবণ চাষির পথে বসার উপক্রম হয়েছে বলে জানান তারা। ক্ষতিগ্রস্ত লবণ চাষিদের মধ্যে রয়েছে বদরখালী ইউনিয়নের সাতডালিয়া ও নতুনঘোনা গ্রামের অন্তত ২৬০টি পরিবার। এসব পরিবারের মালিকানাধীন ২ নম্বর বড় মাঠ এলাকার মোট লবণ জমির পরিমাণ ৪৮০ একর (১ হাজার ২০০) কানি। বর্ষাকালে বদরখালী সমিতি প্রকল্পটি মৎস্য চাষের জন্য ইজারা দেয়। সমবায় আইনের আলোকে ইজারার টাকার একটি অংশ জমির মূল মালিকদের দেওয়া হয়। অবশিষ্ট টাকা সমিতির তহবিলে এলাকার সার্বিক উন্নয়নে ব্যয় করার জন্য রক্ষিত থাকে। ক্ষতিগ্রস্ত লবণ চাষিরা জানান, বদরখালী সমিতি থেকে লবণ মাঠের ওই জায়গা গেল বছর দুইসনা মেয়াদে মৎস্য চাষের জন্য ইজারা নিয়েছেন সমিতির বর্তমান সভাপতি হাজী নুরুল আলম সিকদার। তাই চাষিদের মাঠ ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন তিনি ও তার লোকজন। মাঠে মজুদ থাকা লবণ ও মালামাল অপসারণের জন্য চাষিরা আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় চেয়ে গেল বৃহস্পতিবার সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কাছে মৌখিক আবেদন জানান। কিন্তু শুক্রবার দুপুরে বেশিরভাগ চাষি মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে গেলে অতর্কিত ৮ থেকে ১০ জনের একটি দল লবণ মাঠের চার পাশের তিনটি পলবোট খুলে দেয় এবং কয়েকটি স্থানে মাটির বাঁধ কেটে দেয়। এতে সামুদ্রিক পানি ঢুকে আড়াই শতাধিক চাষির অন্তত ৪৮০ একর লবণ মাঠ মুহূর্তে তলিয়ে যায়। মসজিদ থেকে আসার আগেই চাষিদের মজুতকৃত লবণ পানিতে বিলীন হয়ে যায়। বদরখালী ইউনিয়নের নতুনঘোনা ও সাতডালিয়া গ্রামের বাসিন্দা লবণ চাষি আবুল কাশেম, নুরুল আমিন, আমির হোসেন, রিদুয়ানুল হক, মোহাম্মদ আলী, মাহামুদুল করিম, জয়নাল আবেদিন ও মো. ইলিয়াছ অভিযোগ করেনÑ অতর্কিতভাবে তিনটি পলবোট খুলে দেওয়া ও কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ কেটে দেওয়ায় সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে উৎপাদিত লবণ ও মাঠ। এতে আড়াই শতাধিক চাষির মাঠে মজুদ অন্তত ৩৫ হাজার মণ লবণ পানিতে ভেসে গেছে। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে বদরখালী সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতির সভাপতি হাজী নুরুল আলম সিকদারের মুঠোফোনে কল করা হলে রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। বদরখালী সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতির সম্পাদক জয়নাল আবেদিন খাঁন বলেন, লবণ মৌসুম শেষ হয়ে গেছে অনেক আগে। বর্তমানে বেশিরভাগ মাঠে লবণ মজুদ নেই। চাষিরাও মাঠ ছেড়ে দিয়েছেন। বদরখালী সমিতির ২ নম্বর বড়মাঠ প্রকল্পটি যেহেতু মৎস্য চাষের জন্য সমিতি কর্তৃপক্ষ আগে ইজারা দিয়েছে, সেজন্য আমরা চাষিদের মাঠ ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেছি। তবে মজুদ লবণ সরিয়ে নিতে চাষিরা বৃহস্পতিবার সমিতি কার্যালয়ে এসে মৌখিকভাবে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় চেয়েছেন বলে তিনি স্বীকার করেন।