ওদের যখন জিজ্ঞেস করা হয়, বড় হয়ে কী হবে? প্রায় ৭০ ভাগ বাচ্চা উত্তর দেয় পুলিশ হব! প্রথমে মনে হয়েছে এটা হয়তো আমাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে, পরে জানলাম তারা সত্যিই এটা অন্তরে লালন করে! আমার পুলিশ হওয়াটা আরও একবার সার্থক মনে হয়। এ অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা আমি কী দিয়ে ধরে রাখি, আমার জানা নেই। আমার মাঝে মাঝে নিজের জীবনকে খুব অর্থবহ মনে হয়। যেটুকু সময়-সুযোগ হয় সুবিধাবঞ্চিত ওদের সঙ্গে কাটাই, আমার আকাশটুকু আরও বিস্তৃত হয়ে যায়! সুবিধাবঞ্চিত এসব ফুলের মতো পবিত্র আত্মাদের নিয়ে কাজ করছে অনেক সংগঠন। তার মধ্যে আমার জানামতে উল্লেখযোগ্য মজার ইশকুল, প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন, হিউম্যান সেফটি ফাউন্ডেশন ও আলোকিত বন্ধু ফোরাম ইত্যাদি! এটি খুব ভালো লাগার বিষয় যে, রাষ্ট্রের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও বেসরকারি উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিত এ ছোট্ট শিশুদের নিয়ে ভাবা হচ্ছে। মজার ইশকুলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেক গাঢ় ও গভীর। এ বাচ্চাগুলো আমার নিজ সন্তানের মতোই! আমাকে দেখলে ওরা রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়ে আমার ওপর। এত এত ভালোবাসা আরিয়ান, জাকিয়া, শাকিল আর এ বাচ্চাগুলো শুধু আমার উপস্থিতির জন্য আমাকে ফিরিয়ে দেয় যে, আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো আটকে থাকি। আমার চাকরির সেই শুরু থেকে ওদের সঙ্গে আমার বন্ধন। আমি ওদের খারাপ ও ভালো সময় দুটোরই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাক্ষী! আমার অতি আবেগের ও ভালোবাসার জায়গা এ মজার ইশকুল। আমি খুব আশাবাদী হয়ে স্বপ্ন দেখি এ বাচ্চাগুলো একদিন শিক্ষক, ডাক্তার, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট ও অন্যান্য পেশায় গিয়ে দেশ দাপিয়ে বেড়াবে! ওদের পেছনে শক্তি হয়ে আছে ওদের প্রিয় ভাই-আপুরা। আর যতদিন আমি, আমরা আছি ওদের আগলে রাখতে নিজ বুক নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে দিতে একটুও দ্বিধা করব না। ভালো থাক আমার প্রিয় ফুলেরা, আমার প্রাণের বাচ্চারা। তোমাদের একটু খুশিই আমাদের হৃদয়কে নাড়িয়ে যায়। যে স্বপ্ন সুবিধাবঞ্চিত বাচ্চারা দেখছে এবং যারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করার সংগ্রাম চালাচ্ছে, সেটি অব্যাহত থাকুক এবং আরও বেগবান হোকÑ এ আমার প্রত্যাশা।