আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৮-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

মুসাফিরের রোজার বিধান

মাওলানা দৌলত আলী খান
| আলোকিত বিশ্ব

ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও শান্তিময় ধর্ম। এ ধর্মে মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক বিষয়ে সহজ করা হয়েছে, যাতে মুসলমানরা নিজের ধর্মীয় বিধানগুলো পালন করতে কষ্টের শিকার না হয়। যেমন পানির অভাবে অথবা পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে অজুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করা, নামাজ অনাদায়ে ফিদিয়ার বিধান ইত্যাদি। একইভাবে রোজা বিষয়েও বান্দার জন্য অনেকটা সহজ করে দেওয়া হয়েছে। কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ যদি মাহে রমজানে সফর করে, তখন তার জন্য রোজা রাখা বা না রাখা উভয়টির অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। এটা রোজাকালে একজন মুসাফিরের জন্য স্বীয় প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করার সুবর্ণ সুযোগ। 
মুসাফির শব্দটি সফর থেকে নির্গত। সফর অর্থ ভ্রমণ করা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় কোনো ব্যক্তি নিজের বাসস্থান থেকে আটচল্লিশ মাইল দূরত্বে যাওয়ার জন্য বের হয় এবং সেখানে পনেরো দিনের কম থাকার নিয়ত করে, তখন তাকে মুসাফির বলবে। সফরের সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে খুব কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এতে রোজা রেখে সব পরিস্থিতির সামাল দেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তাই ইসলামি শরিয়তে রমজানের সময় সফরকালে রোজা রাখার ব্যাপারে বান্দাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। চাইলে রোজা রাখবে অথবা রাখবে না। তবে সফরে রোজা রাখতে কষ্ট না হলে রাখাটা উত্তম। কিন্তু রোজা না রাখলে পরবর্তী সময়ে তা কাজা আদায় করা ওয়াজিব। কারণ সফরের দরুন রোজা মাফ হয় না, বরং ভাঙা রোজার কাজা ওয়াজিব হয়। সফরে যে পরিমাণ রোজা ভাঙবে সে পরিমাণ রোজার কাজাও আদায় করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোগগ্রস্ত থাকে অথবা ভ্রমণে থাকে আর রোজা না রাখে, সে যেন অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূর্ণ করে।’ (সূরা বাকার : ১৮৪)। 
হাদিসে আছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হামজা ইবনে আমর আসলামি বেশি রোজা রাখত। একদিন সে নবী করিম (সা.) কে জিজ্ঞেস করল, হুজুর! আমি কি সফরে রোজা রাখতে পারব? হুজুর (সা.) বললেন, যদি চাও রাখতে পার আর যদি চাও না-ও রাখতে পার। (বোখারি : ১৯৭৮; মুসলিম : ২৬৮১)। 
সফরকালে মুসাফিরের কষ্টের কারণে রোজা রাখা-না রাখার স্বাধীনতা দিয়েছে ইসলামি শরিয়ত। তবে সফরে রোজা রাখতে কষ্ট না হলে, তখন রোজা রাখাটাই উত্তম। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যার এমন বাহন রয়েছে, যা তাকে আরামের সঙ্গে সঙ্গে ঘরে পৌঁছিয়ে দেবে, সে যেন রোজা রাখে যেখানেই সে রোজা পায়। অর্থাৎ সফর হলেও।’ (আবু দাউদ : ২৪১২)।