আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৮-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

রমজানে নারীর জান্নাতের ঘোষণা

আলী হাসান তৈয়ব
| প্রথম পাতা

আবদুর রহমান বিন আউফ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি নারী তার পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ পড়ে; তার (রমজান) মাসের রোজা করে; নিজ লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, তাকে বলা হবে : তুমি যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (মুসনাদ আহমদ : ১৬৬১)।

একটি অনন্য চমৎকার হাদিস। পৃথিবীর তাবৎ মুসলিম নারী যদি শুধু এ একটি হাদিসকেই সারা জীবনের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করেন, এটিই যথেষ্ট হতে পারে তার জান্নাত লাভের জন্য। প্রত্যেক মা-বোনের উচিত, হাদিসটিকে গলার মালার মতো হৃদয়ে সংরক্ষণ করা। কিয়ামতের দিন দয়াময় আল্লাহ তার বান্দা-বান্দিকে নানা অজুহাত তৈরি করে জান্নাত দেবেন। তাই আমাদের দয়ার নবীও (সা.) বিভিন্ন হাদিসে জান্নাতে যাওয়ার অনেক সহজ ও সংক্ষিপ্ত পথ বলে দিয়েছেন। তার মূল্যবান ওই বাণীগুলো শুধু সঠিকভাবে অনুধাবন, বিশ্বাস স্থাপন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা সহজে বেহেশতের অধিকারী হতে পারি। সোমবারের এ কলামে আমরা পুরুষের জন্য জান্নাতে প্রবেশের চারটি সহজ আমল তুলে ধরেছিলাম সহিহ মুসলিমের একটি হাদিসের আলোকে। আজ 

আমাদের মা-বোনদের জান্নাত নিশ্চিত করার সহজ চারটি আমলের কথা দেখছি উপর্যুক্ত হাদিসে। সহিহ ইবনে হিব্বান, মুসনাদ বাজ্জার, তাবারানি ও জামে সগিরসহ বিভিন্ন গ্রন্থে সংকলিত হাদিসটিও সূত্রের দিক থেকে গ্রহণযোগ্য।
হাদিস বিশারদদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, যে নারী প্রথমত. তার ওপর ফরজ দৈনিক (মাসিক ও প্রসব-পরবর্তী স্রাবের দিনগুলো ব্যতীত) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন, দ্বিতীয়ত. পবিত্র রমজান মাসজুড়ে রোজা রাখবেন (মাসিকের দিনগুলো ছাড়া, সেগুলো রমজানের পর কাজা করতে হবে), তৃতীয়ত. নিজ লজ্জাস্থানের হেফাজত করেন তথা শরিয়তের ফরজ পর্দাবিধি পরিপূর্ণ মেনে চলবেন এবং চতুর্থত. স্বামীর আনুগত্য করবেন (যতক্ষণ না তিনি আল্লাহ-রাসূলের বিপরীত আদেশ করেন), তার জন্য জান্নাতের আট দরজার সবগুলো খুলে দেওয়া হবে। তিনি যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন। পৌঁছতে পারবেন সবচেয়ে কাক্সিক্ষত ও মর্যাদাপূর্ণ জান্নাতুল ফিরদাউসে। অবশ্য এ চার গুরু দায়িত্বের পাশাপাশি তাকে বেঁচে থাকতে হবে কবিরা গুনাহগুলো থেকে। অনভিপ্রেতভাবে কবিরা গুনাহ হয়ে গেলেও তওবা করবে অবিলম্বে। 
হাদিসটির সমর্থন মেলে পবিত্র কোরআনের আয়াত থেকেও। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুমিনরা সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়-নম্র; যারা অনর্থক কথাবার্তায় নির্লিপ্ত, যারা জাকাত দান করে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানকে সংযত রাখে। ... আর যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুশিয়ার থাকে। এবং যারা তাদের নামাজসমূহের খবর রাখে। তারাই উত্তরাধিকার লাভ করবে। তারা (জান্নাতুল) ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী হবে। তারা তাতে থাকবে চিরকাল। (সূরা মুমিনুন : ১-১১)। 
প্রিয় মা-বোনরা, পুরুষের জান্নাতে যেতে যেখানে বহু হিসাব-নিকাশের পথ পাড়ি দিতে হবে, আপনাদের সেখানে এত সহজে জান্নাতের পথ উন্মুক্ত। তারপরও যদি কেউ সুযোগটি গ্রহণ না করতে পারেন, সেটা হবে তার সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্যের কারণ। যারা এ চারটির কোনোটির ব্যাপারে এতদিন উদাসীন ছিলেন, নিজেকে গড়ার ও পরিশুদ্ধ করার এ মাসে আজই অতীতের জন্য তওবা করে ভবিষ্যতের জন্য অঙ্গীকার গ্রহণ করুন। আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন।