কম্পিউটারে কাজ করার আগে চোখ পরীক্ষা করে চোখের কোনো পাওয়ার থাকলে অবশ্যই চশমা ব্যবহার করতে হবে। ৪০ বছরের বেশি ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি কম্পিউটার আই গ্লাস ব্যবহার করতে হবে
কম্পিউটার মনিটরে নিয়মিত ও অনেকক্ষণ কাজ করলে চোখে নানা সমস্যা ও উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এ অবস্থাকে বলা হয় কম্পিউটার ভিশন সিনড্রম। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বে যারা প্রতিদিন কম্পিউটারে কাজ করেন, তাদের ৮৮ শতাংশের সামান্য থেকে বেশি এবং নানা মাত্রার চোখের উপসর্গ রয়েছে।
উপসর্গ
মাথাব্যথা, চোখে ব্যথা, চোখ জ্বালাপোড়া করা, চোখে ক্লান্তি বোধ করা, ঝাপসা দেখা বা মাঝেমধ্যে একটি বস্তু দুইটি দেখা, ঘাড়ে ও কাঁধে ব্যথা।
চোখ পরীক্ষা
কম্পিউটারে কাজ করার আগে চোখ পরীক্ষা করে চোখের কোনো পাওয়ার থাকলে অবশ্যই চশমা ব্যবহার করতে হবে। ৪০ বছরের বেশি ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি কম্পিউটার আই গ্লাস ব্যবহার করতে হবে।
সঠিক আলোর ব্যবহার
ঘরের ভেতর বা বাইরে থেকে আসা অতিরিক্ত আলো চোখের ব্যথার কারণ হতে পারে। বাইরে থেকে আলো এসে চোখেও লাগে না বা কম্পিউটার পর্দায়ও পড়ে নাÑ সেজন্য পর্দা, ব্লাইন্ড ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরের আলো, টিউবলাইট বা ফ্লোরেসেন্ট বাল্বের আলো হলে এবং স্বাভাবিক অফিসের আলোর চেয়ে কিছুটা কম হলে চোখের জন্য আরামদায়ক।
গ্লেয়ার কমানো
কম্পিউটার মনিটরে আন্টি গ্লেয়ার স্ক্রিন ব্যবহার করে এবং চশমায় অ্যান্টি রিফ্লেকটিভ প্লাস্টিকের কাচ ব্যবহার করলে গ্লেয়ার কমানো যায়।
মনিটরে ‘ব্রাইটনেস’ সমন্বয়
ঘরের আলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে কম্পিউটার মনিটরের আলো কমানো বা বাড়ানো যায়, যাতে মনিটরে লেখাগুলো দেখতে আরামদায়ক হয়।
ঘন ঘন চোখের পলক ফেলুন
কম্পিউটারে কাজ করার সময় চোখের পলক পড়া কমে যায়। ফলে চোখের পানি কমে যায় ও চোখে শুষ্কতা বা ড্রাই আই হতে পারে। এ অবস্থায় চোখে কাঁটা কাঁটা ভাব অনুভূত হবে। চোখে অস্বস্তি ও ক্লান্তি আসবে। কম্পিউটারে কাজের সময় ঘন ঘন চোখের পলক ফেলুন। এরপরও সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চোখের কৃত্রিম পানি ব্যবহার করুন।
চোখের ব্যায়াম
৩০ মিনিট কম্পিউটারে কাজ করার পর অন্যদিকে দূরে তাকান। সম্ভব হলে ঘরের বাইরে কোথাও দেখুন এবং আবার কাছে অন্য কিছু দেখুন। এতে চোখের বিভিন্ন ফোকাসিং মাংসপেশির ব্যায়াম হবে। এভাবে কয়েকবার করে আবার কিছুক্ষণ কাজ করুন।
মাঝেমধ্যে কাজের বিরতি দিন
কাজ করার সময় মাঝেমধ্যে কয়েক মিনিটের বিরতি দিন। ১ ঘণ্টা কম্পিউটারে কাজ করে ৫ থেকে ১০ মিনিটের বিরতি দিয়ে অন্য কোনো দিকে দেখুন বা অন্য কোনো কাজে সময় কাটিয়ে আবার কম্পিউটারের কাজ শুরু করতে পারেন। বিশেষজ্ঞের মতে, ২ ঘণ্টা একটানা কম্পিউটারে কাজ করে ১০ থেকে ২০ মিনিটের বিরতি দিলেও একই রকম ফল পাওয়া যায়।
কাজের জায়গার পরিবর্তন
কম্পিউটারে কাজ করার চেয়ারটি হাইড্রোলিক হলে ভালো হয়। এতে কাজের সময় চোখের উচ্চতা কম্পিউটার মনিটরের চেয়ে সামান্য উঁচুতে থাকে। মনিটর চোখের বরাবর থাকতে হবে। মনিটর বাঁকা থাকলে অক্ষরগুলোর পরিবর্তন হতে পারে, এটি চোখ ব্যথার কারণ হতে পারে। অনেক সময় টাইপ করার কপি এখানে-সেখানে রেখে বারবার মনিটর থেকে অনেক দূরে কপি দেখতে হয়। এতেও মাথাব্যথা ও চোখে ব্যথা হতে পারে। মনিটরের পাশে পরিমিত আলো ফেলে কপি স্ট্যান্ডে লেখাগুলো রাখা যেতে পারে। তাতে বারবার চোখের অ্যাকোমোডেশনের পরিবর্তন কম হবে ও কাজ আরামদায়ক হবে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে ব্যায়াম করা
কম্পিউটারে কাজের সময় শুধু চোখের বা মাথাব্যথা হয় না, অনেকেরই ঘাড়ে ব্যথা, কাঁধে ব্যথা, কোমরে ব্যথাÑ এসব উপসর্গ হতে পারে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে দাঁড়িয়ে হাত-পা ও কাঁধের নাড়াচাড়া বা ব্যায়াম করা গেলে ওপরের উপসর্গগুলো থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
অধ্যাপক ডা. এম নজরুল ইসলাম
চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ, চক্ষু বিভাগ
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা