২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে এবং ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গড়তে বর্তমান সরকার দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প। প্রকল্পটি ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করে। খুলনা জেলায় প্রকল্পটি এখন পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করে ১২৮ কোটি ৩১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। বিতরণকৃত অর্থ গেল এক বছরেও আদায় হয়নিÑ এমন টাকার পরিমাণ ৩৮ কোটি ৮৮ হাজার ৯৫ হাজার টাকা, যা বর্তমানে খেলাপি ঋণের তালিকায়।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ কর্তৃক প্রকল্পটি পরিচালনা হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সালের ১৬ মে পর্যন্ত প্রকল্পটি ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প নামে কাজ করেছে। এ প্রকল্পের সদস্যদের আমানত সংগ্রহের জন্য পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক স্থাপন করা হয়। এ বছরের মার্চ মাস থেকে প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়, ‘আমার বাড়ি আমার খামার’।
পাশাপাশি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৯-২০ মোট ৪ অর্থবছরের জন্য নতুন প্রকল্প চালু করা হয়, যা এ প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী। একজন পুরুষ ও দুজন নারী অনুপাতে ৩০ থেকে ৬০ জন সদস্য নিয়ে প্রতিটি গ্রামে সমিতি গঠন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় খুলনার ৯টি উপজেলায় ১ হাজার ২৬টি সমিতি রয়েছে। সদস্য রয়েছে ৪০ হাজার ২১৮ জন। তাদের সবজি, মৎস্য, গরু, ছাগল, ভেড়া ও হাঁস-মুরগি পালনের জন্য প্রকল্পের সমিতির মাধ্যমে ঋণ প্রদান করা হয়। বর্তমানে প্রকল্পের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৯ কোটি ২৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ কাগজে-কলমে পৃথক করা হলেও দুইটি প্রকল্পের জন্য একই ব্যক্তি কাজ করেন। এ প্রকল্পের খুলনা জেলা সমন্বয়কারী জানান, জেলায় একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় মোট ১ হাজার ২৬টি সমিতি গঠন করা হয়েছে। এর সদস্য সংখ্যা ৪০ হাজার ২১৮ জন।
জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মার্চ মাসের সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন সভাপতির বক্তৃতায় বলেন, প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গৃহীত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা নিয়মিত মনিটরিংয়ের জন্য সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ জানান। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে প্রকল্পের কার্যক্রম নিয়ে প্রতি মাসে সভা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি এ প্রকল্পে বিতরণকৃত এক বছরের অধিক খেলাপি ঋণ আদায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এবং উপজেলা চেয়ারম্যানরা সহযোগিতা কামনা করেন। প্রকল্পের খুলনা জেলা সমন্বয়কারী মো. হাবিবুর রহমান জানান, এ মাসের মধ্যে ২ কোটি টাকা ঋণ আদায় হবে বলে তিনি আশাবাদী।
অন্য সূত্রগুলো জানান, এ প্রকল্পের শুরুতেই সমিতির সদস্যরা গাভী, ছাগল ও ঢেউটিন পান। এসব উপকরণ তারা সব ব্যবহার করতে পারেনি। ঋণের টাকা নিয়ে অনেকেই পরিশোধে গাফিলতি করছের। কেউ কেউ সমিতির সভায় প্রায় অনুপস্থিত থাকেন।
বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ জিয়াউর রহমান জানান, বাড়ি খামার প্রকল্পে খেলাপি ঋণ আদায়ে তৎপরতা চলছে। এর অগ্রগতির জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের নিয়ে তিন দফা বৈঠক হয়েছে। আদায় বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এপ্রিল মাসে ঋণ আদায়ের অগ্রগতি হয়েছে।
গেল ১৯ মে ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পে জেলা বাস্তবায়ন ও তদরকি সভায় উল্লেখ করা হয়, প্রতি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একজন করে উপজেলা পর্যায় কর্মকর্তাকে প্রতি ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসারের আন্তরিক উদ্যোগের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। বৈঠকে বলা হয়, নিয়মিত উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সমিতির সভাপতি ও ম্যানেজারের প্রত্যক্ষ তদারকিতে খেলাপি ঋণ হ্রাস করা সম্ভব।
উল্লেখ্য, বাড়ি খামার প্রকল্পে জেলা বাস্তবায়ন ও তদারকি কমিটির সভায় উল্লেখ করা হয়, মেয়াদোত্তীর্ণ খেলাপি ঋণের হার ৩৮ শতাংশ।