আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ২৯-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

প্রেমময় সান্নিধ্যের ইতিকাফ

আলী হাসান তৈয়ব
| প্রথম পাতা

রমজানের শেষ ১০ দিনের অন্যতম সেরা আমল ইতিকাফ। ইতিকাফ হলো, আল্লাহর আনুগত্য করার জন্য পার্থিব ঝুটঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে মসজিদে অবস্থান করা। আল্লাহর প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে আল্লাহর দরবারে পড়ে থাকা। উম্মতের সর্বসম্মতিক্রমে ইতিকাফ করা সুন্নাত। যা কুরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ তাআলা বলেনÑ‘তোমরা মসজিদে ইতিকাফ অবস্থায় তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে মেলামেশা করো না।’ (সূরা বাকারা : ১৮৭)। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফ করতেন। সাহাবায়ে কেরাম ইতিকাফ করতেন। নবীজির পর তাঁর স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন। আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলেন, এরপর দ্বিতীয় ১০ দিন ইতিকাফ করলেন, তারপর বললেন, ‘আমি প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করে এ মহান রাতটি খুঁজলাম, তারপর দ্বিতীয় ১০ দিন ইতিকাফ করলাম, কিন্তু তাতে কদর নামক রাতটি পেলাম না। এরপর আমাকে বলা হলো, এ রাতটি শেষ ১০ দিনের মাঝে নিহিত রয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই ইতিকাফ করতে চায়, সে যেন শেষ 

দশকে ইতিকাফ করে।’ (মুসলিম : ১১৬৭) 
আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত রমজানের শেষ ১০ দিনে ইতিকাফ করেছেন। তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর স্ত্রীগণও ইতিকাফ করতেন।’ (বোখারি : ২০২৬; মুসলিম : ১১৭২) আয়েশা (রা.) থেকে আরও বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। আর তিনি যে বছর মারা যান, সে বছর ২০ দিন ইতিকাফ করেছেন।’ (বোখারি: ২০৪৪) আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন, পুরো বছর আর কোনো ইতিকাফ করতেন না। পরবর্তী বছর রমজানে ২০ দিন ইতিকাফ করেছেন।’ (তিরমিজি : ৮০৩)
আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফ করতেন, ফজরের সালাত আদায় করতেন, তারপর ইতিকাফের জন্য নির্ধারিত স্থানে প্রবেশ করতেন। একবার আয়েশা (রা.) তাঁর কাছে অনুমতি চাইলেন, তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন, এরপর তার জন্যও তাঁবু টাঙানো হলো। এরপর হাফসা (রা.) আয়েশার কাছে তার জন্য রাসূলের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার অনুরোধ জানালেন, তিনি তাই করলেন, ফলে তার জন্যও তাঁবু টাঙানো হলো, এরপর যখন জয়নাব (রা.) সেটা দেখলেন, তিনি তাঁর জন্য তাঁবু টাঙানোর নির্দেশ দিলেন, ফলে তাই করা হলো। তারপর যখন রাসূল (সা.) অনেকগুলো তাঁবু দেখে বললেন, এটা কী? তারা বলল, এ হচ্ছে আয়েশা, হাফসা ও জয়নাবের তাঁবু। তখন রাসূল (সা.) বললেন, ‘তারা কি এর মাধ্যমে সাওয়াব পাওয়ার ইচ্ছা করছে? তোমরা এগুলোকে খুলে ফেল, আমি এগুলোকে দেখতে চাই না। ফলে এগুলো খুলে ফেলা হলো, আর রাসূল (সা.) রমজানের ইতিকাফ পরিত্যাগ করলেন; শেষ পর্যন্ত রাসূল (সা.) শাওয়ালের প্রথম দশকে ইতিকাফ করলেন।’ (মুসলিম : ১১৭১)
ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্য, ‘জনমানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহর ঘর তথা কোনো মসজিদে বসে তাঁর অনুগ্রহ, সাওয়াব এবং লাইলাতুল কদর লাভের আশায় একান্তভাবে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করা। ইতিকাফের সবচেয়ে বড় লাভ ‘লাইলাতুল কদর’ পাওয়া। কারণ রাতটি এ ১০ দিনের মধ্যেই নিহিত। দ্বিতীয় লাভ, রমজানের সবচেয়ে মূল্যবান সময়গুলো আল্লাহর প্রিয়তম স্থানে মসজিদে কাটাতে পারা, তৃতীয় লাভ, ১০ দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তাকবিরে উলার সঙ্গে জামাতে পড়তে পারা, চতুর্থ লাভ, নিভৃতে আল্লাহর সান্নিধ্যে মোরাকাবা তথা আত্মপর্যালোচনা করার সুযোগ। এ ছাড়াও আরও বহু ইহ-পরকালীন কল্যাণ নিহিত রয়েছে এ ইবাদতে। 
প্রত্যেক ইতিকাফকারীর উচিত আল্লাহর যিকির, কোরআন তিলাওয়াত, সালাত ও অন্যান্য ইবাদতে ব্যস্ত থাকা এবং দুনিয়াবী অনর্থক কথাবার্তা থেকে বেঁচে থাকা। তবে পরিবার বা অন্য কারও সঙ্গে কোনো বৈধ বিষয়ে অল্প কথাবার্তায় কোনো দোষ নেই। কারণ, উম্মুল মুমিনীন সাফিয়্যাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহর (সা.) ইতিকাফ অবস্থায় রাতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলাম এবং কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললাম, আলোচনা শেষে যখন বাড়িতে ফিরে আসতে চাইলাম, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বিদায় দেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন।’ (বোখারি: ২০৩৮; মুসলিম: ২১৭৫)