নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বাস্থ্য খাতের সব শাখায় মনোযোগ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য সূচকে বিস্ময়কর উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস-২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু উভয়ই কমেছে। ২০১৭ সালে গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৭৬ জন থাকলেও বর্তমানে তা ১৭২ জন। এছাড়া ২০১৫ সালে প্রতি হাজার নবজাতকের মধ্যে মৃত্যুহার ২০ জন থাকলেও বর্তমানে তা হ্রাস পেয়ে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সরকার মাতৃ ও শিশু মৃত্যুরোধে সব সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সরকার মাতৃমৃত্যু কমানোর লক্ষ্যে নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রসূতি মায়েদের নিরাপদ ও জরুরি সেবায় আনার লক্ষ্যে প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ৫৯টি জেলা হাসপাতাল, ৬৮টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং ১৩২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জরুরি সেবা কার্যক্রম চালু করেছে। বাড়িতে নিরাপদ প্রসব সম্পন্ন করা, গর্ভকালীন জটিলতা নিরূপণ ও জরুরি প্রয়োজনে উচ্চতর হাসপাতালে রেফার করার লক্ষ্যে কমিউনিটি পর্যায়ে সিএসবিএ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এ পর্যন্ত ১১ হাজার ২৫৭ জন মহিলা মাঠকর্মী ও প্রাইভেট শিক্ষার্থী সিএসবিএ কোর্স সম্পন্ন করে কমিউনিটি পর্যায়ে কাজ করছেন। তাছাড়া জাতিসংঘের ৬৫তম সাধারণ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ৩ হাজার জন মিডওয়াইফ তৈরির লক্ষ্যে মিডওয়াইফারী কোর্স চালু করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬০০ নার্স ছয় মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে সার্টিফাইড মিডওয়াইফের সনদ পেয়েছেন। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। এছাড়া ৩ হাজার ৫৪৪ জন ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা মিডওয়াইফারি কোর্স সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ১৮৩ জনকে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পদায়ন করা হয়েছে। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক ও নিরাপদ প্রসব নিশ্চিত হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকার স্বাস্থ্য খাতের পাশাপাশি পরিবার পরিকল্পনা খাতেও বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমেও অনেক সাফল্য এসেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধিও হার ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক শিক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে কমিউনিটিকে সম্পৃক্তকরণ, পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রীর নিয়মিত সরবরাহ নিশ্চিত করার ফলে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কমেছে মোট প্রজনন হার। কিন্তু এখনও সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ধনী-গরিব, শহর-গ্রাম, শিক্ষিত-অশিক্ষিতদের মধ্যে অনেকটা পার্থক্য রয়েছে। বাল্যবিয়ে এখানও একটি বড় সামাজিক সমস্যা হিসেবে বিদ্যমান। বর্তমান সরকার এ বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সম্প্রতি টক্সিকোলজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোলগেট টুথপেস্টে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এটি ব্যবহারে ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছেÑ এ সম্পর্কে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কি নাÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কোলগেট টুথপেস্টে ক্ষতিকারক উপাদান রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও অধিদপ্তরের প্রতি আহ্বান জানান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টুথপেস্ট একটি প্রসাধনী বা কসমেটিকস সামগ্রী। এটি আমদানি ও দেখভালের সঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিএসটিআই জড়িত। এ কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয়, এর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের।
প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব সচিব জিএম সালেহ উদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।