ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে রাস্তায় ফেলে যাওয়া বৃদ্ধার হাতে মঙ্গলবার শাড়িসহ ঈদসামগ্রী তুলে দেন পুলিশ কর্মকর্তারা- আলোকিত বাংলাদেশ
যে বয়সে বন্ধু-বান্ধবের মতো নাতি-নাতিনিদের সঙ্গে হই-হুল্লোড় করে সময় পার করার কথা, সে বয়সে হাজেরা বেগম নামে অশীতিপর এক বৃদ্ধাকে বৃহস্পতিবার তার ছেলে ও নাতি খোলা আকাশের নিচে ফেলে রেখে আসে। খবর পেয়ে শনিবার রাতে গফরগাঁও থানার ওসি আবদুল আহাদ খান দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠান। পরে পুলিশ, গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয় ইউপি সদস্যের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে হাসপাতালে ছুটে যান ওসি আবদুল আহাদ খান। অশীতিপর বৃদ্ধার সার্বিক চিকিৎসার খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি সঠিক বিচারের আশ^াস দেন। ঘটনাটি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার উথুরী গ্রামে।
ওসি আবদুল আহাদের কঠিন মনোভাব বুঝতে পেরে ওই বৃদ্ধার তিন ছেলে সোমবার রাতে তাদের মায়ের কাছে মাফ চেয়ে ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়। পরে গফরগাঁও থানার পক্ষ থেকে ওই বৃদ্ধার হাতে ঈদ উপহার হিসেবে শাড়ি, সেমাই, চিনি, তেল, নারকেল ও সাবান তুলে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গফরগাঁও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী, গফরগাঁও থানার ওসি আবদুল আহাদ খান, গফরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল আলম খোকনসহ অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা। প্রসঙ্গত বছর দুয়েক আগে ওই বৃদ্ধার তিন ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে সাইফুল কৌশলে মায়ের ১২ কাঠা জমি লিখে নেয়। এর পর থেকে অপর দুই ছেলে বৃদ্ধা মায়ের প্রতি চরম অসন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি অসদাচারণ শুরু করে। পরে বৃহস্পতিবার ছোট ছেলে সাইফুল তার মাকে মারধর করে বাড়ির সামনের সড়কের পাশে খোলা আকাশের নিচে ফেলে রেখে আসে। তিন দিন পর্যন্ত খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে শনিবার রাতে পুলিশ, গ্রাম পুলিশ, স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুস সোবহানের সহায়তায় হাজেরা বেগমকে উদ্ধার করে গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে শনিবার রাতেই ইউপি সদস্যের সহায়তায় ছেলেদের নামে থানায় অভিযোগ করেন ওই বৃদ্ধা মা। পরে পুলিশ রোববার সন্ধ্যায় বৃদ্ধা হাজেরা খাতুনের বড় ছেলে আবদুুস সাত্তার ও নাতি তাফাজ্জল হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল আহাদ খান বলেন, ওই বৃদ্ধার তিন ছেলে তাদের ভুল স্বীকার করে বৃদ্ধা মায়ের কাছে মাফ চেয়ে ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ায় এখন খুবই ভালো লাগছে। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সঙ্গে কোনো সন্তানই যেন এমন নিষ্ঠুর আচরণ না করে সবার কাছে এ প্রত্যাশাই করি।