ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কোনাবাড়ী এলাকায় যানজটমুক্ত উড়ালসেতু- আলোকিত বাংলাদেশ
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড়। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। দুই ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের ছুটিতে এই পথে গ্রামের বাড়িতে ফিরেন অসংখ্য মানুষ। এমন কেউ নেই এই চন্দ্রা ত্রিমোড়ে যানজটে আটকা পড়ে নাজেহাল হননি। বিভিন্ন ছুটি ছাড়াও ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকত এই মোড়ে। একই চিত্র ছিল গাজীপুরের কোনাবাড়ীতেও। ২৫ মে কোনাবাড়ি ও চন্দ্রা উড়ালসড়কসহ কয়েকটি সেতু খুলে দেওয়ায় সুফল পেতে শুরু করেছেন এ মহাসড়কের চলাচলরত চলাচলকারীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কোনাবাড়ি ও চন্দ্রা ত্রিমোড়ে যানবাহন আর থামছে না। গাজীপুরের দিক থেকে উত্তরবঙ্গের দিকে আবার উত্তরবঙ্গের দিক থেকে গাজীপুরের দিকে যে পরিবহনগুলো যাবে, তারা উড়ালসড়ক ব্যবহার করে চলে যাচ্ছে। কোথাও তাদের থামতে হচ্ছে না। অন্যদিকে যে পরিবহনগুলো উত্তরবঙ্গের দিক থেকে সাভারের নবীনগর হয়ে ঢাকা প্রবেশ করবে আবার ঢাকার দিক থেকে সাভারের নবীনগর হয়ে উত্তরবঙ্গের দিকে যাবে, তারা চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় উড়ালসড়কের নিচ দিয়ে চলে যাচ্ছে। যার কারণে কোনাবাড়ি ও চন্দ্রা ত্রিমোড়ে চিরচেনা সেই যানজট দেখা যাচ্ছে না। উড়ালসড়ক ও সেতু খুলে দেওয়ায় যানজটমুক্ত এ মহাসড়ক। চন্দ্রা ত্রিমোড়ে বাসচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, আগে এ মহাসড়কে ৩০ মিনিটের পথ অতিক্রম করতে ৩ থেকে ৮ ঘণ্টা লাগত। এখন চন্দ্রা ও কোনাবাড়ি এলাকায় ফ্লাইওভারের কারণে সেই পথ অতিক্রম করতে সময় লাগে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ মিনিট। এখন আর যানজটে বসে থাকতে হয় না। বাস চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, চন্দ্রা ও কোনাবাড়ি ফ্লাইওভার খুলে দেওয়ার পর নিচ দিয়েও যানজট ছিল না। তবে কোনাবাড়ি এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে এখনও অনেক কাজ বাকি। এ কারণে সেখানে একটু ধীরগতিতে চলতে হচ্ছে। এলাকাবাসী, যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক ও পুলিশ জানায়, দেশের উত্তরবঙ্গের ২৩টি জেলার ১১৮টি রোডের হাজার হাজার যানবাহন প্রতিদিন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগের একমাত্র সহজ এটি। কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড় উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। যানজটে আটকে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনে বসে থাকতে হতো। ভাঙাচোরা সড়কে এলোমেলো গাড়ি চলাচল ও ধুলোয় ধূসর হয়ে উঠতো মহাড়সকটি। এসব কারণে অসুস্থ হয়ে পড়তেন অনেক যাত্রী। আবার সময় মতো পৌঁছতে না পেরে অনেকেই নানা সমস্যার সম্মুখীন হতেন। বিশেষ করে দুটি ঈদের ছুটিতে ঘরমুখো মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এছাড়া পহেলা বৈশাখ, পূজাসহ বিভিন্ন উৎসব ছুটিতেও দুর্ভোগ কম ছিল না। এ মহাসড়কের গাজীপুরের কড্ডা, কোনাবাড়ী এবং কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড় ছিল যানজটের অভয়াশ্রম। এখানকার হাইওয়ে, জেলা ও থানা পুলিশ, কমিউনিটি পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসনের লোকজন এসব এলাকার যানজট নিরসনে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু তারা যানজট নিরসনে ছিল বরাবরই ব্যর্থ। ফলে দুটি ঈদে অন্য জেলা-থানা পুলিশ এসব এলাকায় যানজট নিরসনে কাজ করেছে। তাদের পাশাপাশি স্কাউট শিক্ষার্থীরা যানজট নিরসনে কাজ করে। তবুও লেগেই থাকত সেই চিরচেনা যানজট। ফলে এ পথে যাতায়াতের কথা শুনলেই শরীরে গাম ঝরা শুরু হতো। ফলে এ মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীতকরণ কাজটি হাতে নেয় বর্তমান সরকার। এ প্রকল্পে ৯টি উড়াল সড়ক, ২টি রেলওয়ে ওভারপাস ব্রিজ, ২৬টি সেতু নির্মাণ, ৭৪টি কালভার্ট সম্প্রসারণ, ৭টি আন্ডারপাস ও ১৩টি পথচারী সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে কালিয়াকৈর উপজেলার গোয়ালবাথান এলাকার এবং টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার দেওড়া এলাকার দুটি রেলওভার ব্রিজ খুলে দেওয়া হয়েছে আগেই। এবার ঈদে নিরাপদে ও নির্বিঘেœ ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরার জন্য কোনাবাড়ি ও চন্দ্রা ত্রিমোড়ে দুটি উড়ালসড়ক খুলে দেওয়া হয়। এছাড়া দুটি সেতুসহ চারটি ওভারপাস খুলে দেওয়া হয়। ২৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব উড়াল সড়ক ও সেতু উদ্বোধনের পরপরই যান চলাচলের চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। সুফল পেতে শুরু করেছেন এ মহাসড়কের চলাচলরত চলাচলকারীরা। উড়ালসড়কের ওপর উঠলে মনে হয় উন্নত বিশ্বের কোন যানজটমুক্ত মহাসড়ক। সংশ্লিষ্টদের দাবি, এটি খুলে দেওয়ার ফলে এবার ঈদে এ মহাসড়ক দিয়ে নিরাপদে ও নির্বিঘেœ বাড়ি ফিরবে ঘরমুখো মানুষ। সালনা (কোনাবাড়ী) হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান জানান, উড়ালসড়ক সেতু খুলে দেওয়ার পর কোনাবাড়ী ও চন্দ্রা ত্রিমোড়ে আর কোনো যানজট নেই। তারপরও ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ করতে জেলা পুলিশের পাশাপাশি ২৫০ জন হাইওয়ে পুলিশ সদস্য বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হবে। তবে এবার মহাসড়কটি নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক হবে।