চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার কড়ইয়া গ্রামের আলহাজ জাকির হোসেন জ্বালানি কাজে বায়োগ্যাস ব্যবহার করে অর্থের সাশ্রয় করছেন। জাকির হোসেন জ্বালানি কাজে প্রতি মাসে ১ সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করতেন ১ হাজার থেকে ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা ব্যয়ে। তাতে বছরে বছরে তার খরচ হতো প্রায় ১৩ হাজার টাকা। বিকল্প জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করেও দেখা যায় প্রায় অনুরূপ অর্থ ব্যয় হয়। এমতাবস্থায় জাকির হোসেন বিকল্প জ্বালানি ও অর্থ সাশ্রয় নিয়ে ভাবতে শুরু করেন।
দুই বছর আগের কথা। জাকির হোসেনের সঙ্গে দেখা হয় বায়োগ্যাস প্রকল্পের টেকনেশিয়ানদের। তাদের সঙ্গে কথা বলে বায়োগ্যাস ব্যবহারের সুবিধা সম্পর্কে জানতে পেরে ওই টেকনেশিয়ানদের দ্বারা ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে বায়োগ্যাস উৎপাদনের প্লান্ট তৈরি করেন বসতঘর ও গোয়ালঘরের পেছনে (সংলগ্ন)। প্লান্ট তৈরিতে দুইটি পাশাপাশি ট্যাঙ্কি স্থাপন করা হয়। একটি ১০ ফুট গভীর ও ১০ ফুট চওড়া ব্যাস এবং অপরটি ৮ ফুট গভীর ও ৮ ফুট চওড়া। বড় ট্যাঙ্কিটির সঙ্গে বসতঘরে বসানো চুলার এবং গো-শালার পাইপ সংযুক্ত করা হয়। জাকির হোসেন চারটি গরু পালন করছেন। প্রতিদিন সকালে গো-শালার গরুর গোবর ও মূত্র এবং সেইসঙ্গে কয়েক বালতি পানি মোটর সংযুক্ত পাইপের দ্বারা ট্যাঙ্কিতে ঢালা হয়। এতে গোবর ও গো-মূত্র বড় ট্যাঙ্কিটিতে গিয়ে জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গ্যাস উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। উৎপাদিত গ্যাস চলে যায় চুলায় এবং গ্যাস উৎপাদনের পর উচ্ছিষ্ট গোবর পাশর্^বর্তী ছোট ট্যাঙ্কিটিতে গিয়ে জমা হয়, যা জৈব সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ জৈব সার ইরি-বোরোসহ যে কোনো শাকসবজি চাষে উত্তম সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ গ্যাস উৎপাদনের পর টানা ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা চুলায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। জাকির হোসেন বলেন, ব্যায়োগ্যাস ব্যবহার করে আমি খুবই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি। কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। শুধু সকালে গোবর ও মলমমূত্রে একটু পানি ঢেলে দেওয়াই হচ্ছে আমার কাজ। ছয় সদস্যের পরিবারের প্রধান জাকির হোসেন বলেন, দুই বছর আমার জ্বালানি খাতে অন্তত ২৬ থেকে ২৭ হাজার টাকার সিলিন্ডার গ্যাস বা জ্বালানি কাঠের অর্থের সাশ্রয় হয়েছে। দুই বছরে কমপক্ষে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকার জৈব সার নিজে ব্যবহার করেছি; সেইসঙ্গে বিক্রিও করেছি। বায়োগ্যাসের এ ধরনের সুবিধার কথা জেনে একই গ্রামের মোল্লাবাড়ির মফিজুল ইসলাম, মো. সুজন মিয়া ও অজিত কুমার কর বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরির ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।