খুলনা আধুনিক রেলস্টেশনে কাক্সিক্ষত সেবা মিলছে না। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ঈদের আগ মুহূর্তে এ ভোগান্তি আরও বেড়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছেন, জনবল সংকটের কারণে সমস্যা হচ্ছে। তবে, জনবল নিয়োগ হলে সব সমস্যা সমাধান হবে।
খুলনা রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর খুলনা আধুনিক রেলস্টেশনের যাত্রা শুরু হয়। ভবন ছাড়া এ স্টেশনে আর কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। এখানে ছয়টি টিকিট কাউন্টারের মধ্যে বর্তমানে চালু আছে তিনটি। জনবল সংকটের কারণে বাকি তিনটি কাউন্টার চালু করা যাচ্ছে না। ছয়টি কাউন্টার চালু রাখতে প্রয়োজন হয় ১৮ জন। সেখানে প্রধান বুকিং সহকারীসহ রয়েছেন মাত্র ৯ জন। নতুন স্টেশনে ২৬টি পয়েন্ট (যেখান থেকে গাড়ির দিক পরিবর্তন হয়) রয়েছে ১৫ জন পয়েন্ট ম্যান। এখানে কমপক্ষে প্রয়োজন ২৬ জন। ওয়েটিং রুমের জনবল মাত্র দুইজন। আরও দুইজন প্রয়োজন। ফলে অনেক সময় সকালে দেরিতে ওয়েটিং রুম খোলা হচ্ছে।
সূত্র মতে, খুলনা রেলস্টেশনে পরিবহন বিভাগে জনবল থাকার কথা ৭৮ জন। সেখানে কর্মরত রয়েছেন ৫৩ জন। এখানে দীর্ঘদিন ধরে ২৫টি পদ খালি রয়েছে। এছাড়া বাণিজ্যিক বিভাগে ৪৮টি পদ রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ বিভাগে খালি রয়েছে ২৪টি পদ। সব মিলিয়ে খুলনা রেলস্টেশনে ১২৬টি পদের মধ্যে বর্তমানে ৭৭টি পদ খালি রয়েছে। বিপুলসংখ্যক জনবল সংকটের কারণে রেলওয়ের যাত্রীসেবা ব্যাহত হচ্ছে।
নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা বসানোর কথা থাকলেও তা আজও হয়নি। ২ কিলোমিটার দীর্ঘ প্লাটফর্মে আধা কিলোমিটার আলোর ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি দেড় কিলোমিটারে কোনো আলোর ব্যবস্থা নেই। রেলের নিরাপত্তার জন্য কোনো নতুন নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করা হয়নি। সে কারণে প্রতিনিয়ত চুরি হচ্ছে বাথরুমের ফিটিংসহ ছোট-বড় নানা রকম মালামাল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এ স্টেশনে পর্যাপ্ত জনবল নেই, রাতের আলো নেই, নিরাপত্তা প্রহরী নেই। স্টেশনের সামনে পার্কিংয়ের জায়গায় লোক নেই। এতে চরম যাত্রী হয়রানি হচ্ছে। ইজিবাইক, রিকশা এসে দাঁড়িয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অনেক যাত্রী মালামাল নামাতে পারেন না। টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা তানজিব আলম বলেন, লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পেতে দেরি হচ্ছে। অনেকে লাইন ভেঙ্গে টিকিট নিচ্ছে। স্টেশন মাস্টারকে বললেও কোনো কাজ হয়নি। এ বিশৃঙ্খলা দেখার যেন কেউ নেই। নগরীর মুন্সীপাড়ার বাসিন্দা জাহানারা বেগম বলেন, স্টেশনের সামনে পার্কিংয়ের স্থানে গাড়ির জট। দেখার কেউ নেই। লাগেজ নামাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া ওয়েটিং রুমের বাথরুমগুলো নোংরা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নগরীর বয়রা এলাকার বাসিন্দা তানজিলা খাতুন বলেন, মহিলা কাউন্টার থাকলেও সেটা বন্ধ। ফলে পুরোনো রেলস্টেশনের মতোই পুরুষ কাউন্টারে গিয়ে টিকিট নিতে হচ্ছে। এতে বেশ সমস্যা হচ্ছে। টিকিট রুমে নেই পাখার ব্যবস্থা। রেলস্টেশনের মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, ঈদের আগে যাত্রীদের চাপ ভীষণ বেড়েছে। জনবল সংকটের কারণে কাক্সিক্ষত যাত্রীসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জনবল নিয়োগ হলে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।