বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন’ বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়া এখন রোজাও রাখছেন। হাসপাতালে খালেদার সঙ্গে থাকা গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম প্রতিদিন তার পছন্দমতো যা ইফতার তৈরি করছেন তাই তিনি খাচ্ছেন। বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একে মাহবুবুল হক বুধবার নিজ
কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান। মাহবুবুল হক বলেন, ‘উনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে। উনি ইনসুলিন নিচ্ছেন এবং ডায়াবেটিসের ওষুধ মুখেও গ্রহণ করছেন। আর্থ্রাইটিসের ব্যথা অনেক কমে গেছে। উনার দুর্বলতা অনেক ইমপ্রুভ করেছে। নতুন কোনো সমস্যার কথা বলেননি। উনি কমফোর্টেবল আছেন, ভালো আছেন।’
তিনি বলেন, ১ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। যেসব সমস্যা নিয়ে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল সে সব সমস্যার অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে কয়েক দিন ধরে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে মনগড়া বক্তব্য প্রকাশিত হচ্ছে। কিছুদিন আগে খালেদা জিয়ার জিহ্বায় ঘা (ফাংগাল ইনফেকশন) হলেও তা ৯০ শতাংশ সেরে গেছে বলে জানিয়ে মাহবুবুল হক বলেন, ‘এখন উনি নরমাল খাবার খাচ্ছেন। রোজা রাখছেন। ছোলাসহ অন্যান্য ইফতারের আইটেমগুলো খাচ্ছেন। উনার চয়েজ মতো ইফতারের আইটেমগুলো উনার সঙ্গে যে মেয়েটা আছে সে রান্না করে দেয়। কেবিনের পাশে ছোট একটা কিচেন আছে সেখানে চুলা রয়েছে।’
বিএসএমএমইউতে খালেদার সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না এমন অভিযোগ তুলে তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তির দাবি জানিয়ে আসছেন বিএনপি নেতারা। এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক মাহবুবুল হক বলেন, ‘আমি তো প্রতিদিন যাই না। আমার বোর্ড প্রতিদিন যায়। যত দিন আমি উনার কাছে গিয়েছি, উনি সহজ, সানন্দে, হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা প্রায় দুই মাসে কখনও দেখি নাই যে, উনি একটু এনোয়েড হয়েছেন, আমাদের ওপর আনসেটিসফাইড।’
হাসপাতাল পরিচালক বলেন, ‘মিডিয়া গরম করার মতো যে বক্তব্য মানুষকে জানানো হয়, তা না জিজ্ঞাসা করেই। একজন রোগী সম্পর্কে যদি বলতে হয় আমাদের জিজ্ঞাসা করবে না? আমাদের বোর্ডকে জিজ্ঞাসা করবে না? এটা সঠিক নয়। উনি চিকিৎসায় সেটিসফাইড।’
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা খাটছেন খালেদা জিয়া। তাকে রাখা হয়েছে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারে। সেখানে বন্দি তিনি একাই।
খালেদা জিয়া নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারে যাওয়ার পর থেকে তার কয়েকটি মামলার বিচার সেখানে অস্থায়ী আদালতে চলছিল। সম্প্রতি অস্থায়ী আদালত কেরানীগঞ্জের কারাগারে সরিয়ে নেওয়ার গেজেট জারি হয়েছে। চিকিৎসার পর খালেদাকে কেরানীগঞ্জের কারাগারে নেওয়া হবে বলে এরই মধ্যে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
কবে নাগাদ তাকে কারাগারে নেওয়া হবে এমন প্রশ্নে হাসপাতাল পরিচালক মাহবুবুল হক বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আমাদেরকে কিছু বলেননি। আসলে আমরা চাচ্ছি যে, উনার সেটিসফেকশন। উনি যদি নিজেই ফিল করেন যে, আমি সম্পূর্ণ ভালো আছি, এখন আমি যেতে চাই...সিদ্ধান্তটা উনিই দিক। আমরা সেটাই চাই। আমরা কোনো ধরনের প্রেসার ক্রিয়েট করছি না যে, আপনি চলে যেতে পারেন বা যান। উনি যদি মনে করেন, কমফোর্টেবল আর উনার হসপিটালে থাকার দরকার নাই।’
খালেদার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. জিলান মিয়া সরকার, হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক নাজমুল করীম, উপ-পরিচালক খুরশেদ আলম, সহকারী পরিচালক বেলাল সরকার ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।