তিন আসরের রানার আপ ইংল্যান্ড ও চারবারের সেমিফাইনালিস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠ কাঁপানো ম্যাচ দিয়েই পর্দা উঠছে দ্বাদশ বিশ্বকাপ আসরের। লন্ডনের কেনিংটন ওভালে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী লড়াইটি শুরু হবে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টা ও বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৩টায়। দারুণ ফর্ম নিয়েই বিশ্বকাপ শুরু করতে
যাচ্ছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত গত বিশ্বকাপ আসরের প্রথম পর্ব থেকেই বিদায় নেওয়া ইংল্যান্ডের ৫০ ওভারের ফরম্যাটে যেন পুনর্জন্ম হয়েছে! সাদা বলে স্পেশালিস্ট একঝাঁক ক্রিকেটারের সুবাদে ৫০ ওভার ফরম্যাটে বর্তমান র্যাঙ্কিংসেরা দলটিও ইংল্যান্ড। নিজেদের আঙিনায় আয়োজিত এবারের আসরের অন্যতম শিরোপা দাবিদার হিসেবেই গণ্য করা হচ্ছে ইংলিশদের। এবারের টুর্নামেন্টে রান সংগ্রহে সবাইকে বিস্ময় উপহার দিতে পারে স্বাগতিকরা। দুর্দান্ত ব্যাটিং সক্ষমতায় অসম্ভবকে সম্ভব করার মিশনেই যেন নামছে ইয়ন মর্গানের দল। গত বিশ্বকাপের পর সর্বাধিক চারবার ৪০০’র অধিক রান করা দলটি ইংল্যান্ড। ওয়ানডেতে কোনো রানই যেন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তে পারছে না ইংলিশদের। এবারের বিশ্বকাপে ৫০০ রান অতিক্রমের পরিকল্পনা রয়েছে স্বাগতিকদের। গত বছর নটিংহ্যামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬ উইকেটে ৪৮১ রানের স্কোর করে ইংলিশরা জানান দিয়েছে, ৫০০ অতিক্রম করার সামর্থ্য তাদের রয়েছে। প্রস্তুতি ম্যাচে আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে মোটামুটি সব বক্সেই টিক মার্ক রেখে টুর্নামেন্ট শুরু করতে যাচ্ছে ইংল্যান্ড। অন্যদিকে নিজেদের সেরাটা নিয়ে এবারের আসর শুরু করতে পারছে না দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপ মিশন শুরুর আগেই দুঃসংবাদ শুনতে হয়েছে প্রোটিয়া শিবিরে। আইপিএলে পাওয়া কাঁধের ইনজুরির কারণে উদ্বোধনী ম্যাচে পেসার ডেল স্টেইনকে পাচ্ছে না দক্ষিণ আফ্রিকা। টপ অর্ডার অনেকটাই অনভিজ্ঞ এবং ফর্মে নেই দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হাশিম হামলা। তবে ফাফ ডু প্লেসিসদের জন্য ব্যাটিং অর্ডারে অন্যতম আস্থার নাম প্রতিভাবান কুইন্টন ডি কক। এছাড়া লুঙ্গি এনগিডি, কাগিসো রাবাদা ও পেস বোলিং অলরাউন্ডারদের আধিক্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে যে কোনো দলের জন্যই শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে তুলে ধরেছে। প্রোটিয়াদের বোলিং আক্রমণভাগ দারুণ সমৃদ্ধ। ওয়ানডের সেরা ১০ বোলারের দু’জন রয়েছে দলটির স্কোয়াডে। তাদের মধ্যে ইমরান তাহির রয়েছেন তালিকায় চতুর্থস্থানে এবং পরের স্থানে রয়েছেন কাগিসো রাবাদা। সদ্য সমাপ্ত আইপিএলেও সেরা দুই উইকেট শিকারী ছিলেন এই দুই বোলার। এছাড়া লুঙ্গি এনগিডির ওয়ানডেতে মাত্র ১ বছর হলেও ১৮ ম্যাচে ২১.৬ রান গড়ে ৩৪ উইকেট নিয়ে সে তার সামর্থ্য বুঝিয়ে দিয়েছে। এছাড়া ক্রিস মরিস ও ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসদের আন্দিলে ফেহলুকাওয়োর যে কোনো উইকেটেই প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের বিপদের কারণ হতে পারেন। তাই বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ইংল্যান্ডের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং আক্রমণের লড়াইটা জমে উঠতে পারে। ওয়ানডেতে জয়ের পরিসংখ্যানে ইংলিশদের চেয়ে এগিয়ে প্রোটিয়ারা। দুই দলের ৫৯টি লড়াইয়ের মধ্যে ২৯টিতে জয়ী দক্ষিণ আফ্রিকা। ইংল্যান্ড জিতেছে ২৬টি ম্যাচে। এক ম্যাচ ড্র এবং তিনটিতে কোনো ফল হয়নি। তবে বিশ্বকাপ আসরে দুই দলই সমান ৩টি করে ম্যাচ জিতেছে।
কেনিংটন ওভালে এবারের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচের ফল জানান দিচ্ছে ফাস্ট বোলাররা ব্যাটসম্যানদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে পারেন। এই মাঠে প্রস্তুতি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট ৪ উইকেট নিয়ে ভারতীয় ইনিংসে একাই ধস নামান। অন্যদিকে জফরা আর্চার ৩ উইকেট নিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের বড় জয়ের ভিত্তি গড়ে দেন। তবে এই উইকেটে ম্যাচ যতই এগুবে পেসারদের কার্যকারিতা ততই কমতে শুরু করবে এবং ব্যাটসম্যানরা সুবিধা পাবেন। কেনিংটন ওভালে প্রথম ইনিংসের গড় রান ২৪৭ এবং দ্বিতীয় ইনিংসের গড় ২১৩। এখানে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি নিউজিল্যান্ডের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তারা ৫ উইকেটে ৩৯৮ করেছিল। আর সফল রান তাড়ার রেকর্ডটি শ্রীলঙ্কার। ভারতের বিপক্ষে ৩ উইকেটে ৩২২ করেছিল লঙ্কানরা।
ইংল্যান্ড সম্ভাব্য একাদশ : জ্যাসন রয়, জনি বেয়ারস্টো, জো রুট, ইয়ন মর্গান (অধিনায়ক), বেন স্টোকস, জস বাটলার (উইকেটরক্ষক), মঈন আলি, ক্রিস ওকস, লিয়াম প্লাঙ্কেট/টম কুরান, জফরা আর্চার ও আদিল রশিদ।
দক্ষিণ আফ্রিকা সম্ভাব্য একাদশ : হাশিম আমলা, কুইন্টন ডি কক (উইকেটরক্ষক), এইডেন মার্করাম/ র্যাসি ফন ডার ডুসেন, ফাফ ডু প্লেসিস (অধিনায়ক), জেপি ডুমিনি, ডেভিড মিলার, আন্দিলে ফেহলুকাওয়ো, ক্রিস মরিস, কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডি, ইমরান তাহির।