আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৩০-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

তৈরি পোশাক কারখানায় পাইকারদের ভিড়

কেরানীগঞ্জে ঈদুল ফিতরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার পোশাক বিক্রির সম্ভাবনা

মোস্তফা কামাল, কেরানীগঞ্জ
| দেশ

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত বিপণিবিতান থেকে শুরু করে ফুটপাতের মার্কেট দখল করে নিয়েছে কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগর ও কালীগঞ্জের তৈরি বাহারি রং ও ডিজাইনের আধুনিক সব পোশাক। দামে কম ও কাপড়ের গুণগতমান উন্নত হওয়ায় ক্রেতারাও লুফে নিচ্ছেন এ অঞ্চলের তৈরি পোশাক। বিশেষ করে রমজানের ঈদ এবং শীতকালীন সময়Ñ এ দুই মৌসুমই এখানকার ব্যবসায়ীদের মূল মৌসুম। এখন রমজান তাই পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন দর্জিরা। যদিও বছরজুড়েই চলে নানা ধরনের পোশাক তৈরির কাজ তবে শীত অথবা ঈদ এলেই কারিগরদের হতে হয় গলদঘর্ম। 
এখানকার পোশাক কারখানার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের ঈদের পোশাকের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পোশাক কেরানীগঞ্জ থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হবে না। 
কালীগঞ্জ, আগানগর ও শুভাঢ্যার বিভিন্ন কারখানায় ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার তৈরি পোশাকের বাজারে রমজানের শুরুতেই ব্যাপক পাইকার সমাগম। তাই দিন-রাত চলছে বাহারি সব পোশাক তৈরির কাজ। সারা বছরজুড়েই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা এখান থেকে তাদের চাহিদা মাফিক তৈরি পোশাক নিয়ে বিক্রি করে থাকেন। তবে বিশেষ করে ঈদ-পূজা বা শীত মৌসুমে এখানকার ব্যবসায়ীদের কদর বেড়ে যায় সারা দেশের পাইকারদের কাছে। কাজেই আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে এখন জমজমাট পূর্ব আগানগরের তৈরি পোশাকের পাইকারি বাজার। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাইকাররা এখনও ভিড় জমাচ্ছে কেরানীগঞ্জের তৈরি পোশাকের বাজারে। এ ব্যাপারে নুরু সুপার মার্কেটের ভিআইপি গলির ন্যাশনাল প্যান্ট হাউজের মালিক হাজী মো. মনির বলেন, মূলত শীত ও ঈদ মৌসুমই আমাদের সবচেয়ে বড় মৌসুম। তাই পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে এখানকার প্রায় ১০ সহাস্রাধিক তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক। ছোট-বড় মিলিয়ে কেরানীগঞ্জে প্রায় শতাধিক মার্কেট আছে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বিপুল পরিমাণ পাইকারের সমাগম ঘটবে। এ বছর প্রায় ৪ কোটি টাকার প্যান্ট তৈরি করেছি। কারখানার শ্রমিকরা রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। রোজার মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে তাদের এ ব্যস্ত সময়। এবার ঈদুল ফিতরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার তৈরি পোশাক বিক্রয় হতে পারে। এ বছর গেল বছরের তুলনায় বিক্রয় ভালো। আমার এখানে দেশি প্যান্ট তৈরি হয়। এর গুণগত মান চীন, ভারতের তুলনায় কোনো অংশে কম নয়। প্রতিটি প্যান্ট ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে। 
পূর্ব আগানগর খাজা-সুপার মার্কেটের ওমর ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক নুরুল আমীন লিটন জানান, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাকের মার্কেট এটি। গেল রোজার এবং কোরবানির ঈদেও তাদের ব্যবসা মোটামুটি ভালো হয়েছে। এ বছরের পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখেও এরই মধ্যে ক্রেতা সাধারণ ভিড়তে শুরু করেছেন আমাদের এ পোশাকের পাইকারি বাজারে। তিনি বলেন, গত বছরগুলোয়ে বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে তাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হতো। কিন্তু কেরানীগঞ্জে এখন আর কোনো বিদ্যুৎ সমস্যা নেই। যে কারণে তাদের উৎপাদন এ বছর আগের তুলনায় অনেকটাই বেশি। 
কথা হয় আলম সুপার মার্কেটের গ্রুভী পাঞ্জাবির মালিক জহির উদ্দিনের সঙ্গে। এলাকায় তার তিনটি শোরুম রয়েছে। ৬৫০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা মূল্যের পাঞ্জাবি রয়েছে তাদের শোরুমে, যা রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমলে অনেক বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে। তিনি বলেন রং আর ডিজাইনের দিকে খেয়াল রেখে আমরা একটু ভিন্ন স্টাইলের পাঞ্জাবি বাজারজাত করে থাকি। ঠিক একই ধরনের মন্তব্য ওই মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী জিলাস গার্মেন্টের মালিক হাজী মো. নাজিম উদ্দিনের। তার মতে, আমরা বর্তমান সময়ের সঙ্গে রুচিশীলতাকে প্রধান্য দিয়ে পোশাক তৈরি করে থাকি। আলম শপিংমলের বেবি পয়েন্ট ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী জয়নাল দেওয়ান বলেন, ঈদ মৌসুম সামনে রেখে এরই মধ্যে পাইকার সমাগম শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, যে কোনো রুচিশীল তৈরি পোশাক এখানে অত্যন্ত সহজ মূল্যে পাওয়ার কারণে পাইকারদের তেমন বেশি ঘোরাঘুরি করতে হয় না। এছাড়া রাজধানীর যে কোনো পাইকারি বাজারের তুলনায় আমাদের এখানে কেনাকাটা করে পাইকার সাধারণ কোনো রকম যানজট ছাড়াই নিরাপদে তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। যে কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাইকারদের কাছে দিন দিন আমাদের কদর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম নূরু বলেন, বছরের প্রতিদিন কেরানীগঞ্জের পোশাক কারখানাগুলো সচল থাকে। তবে ঈদ ঘিরে কেরানীগঞ্জের পোশাক পল্লীর কারখানাগুলোর ব্যস্ততা বহু গুণ বেড়ে যায়। তিনি বলেন, দেশে এখনও স্বল্প আয়ের মানুষের সংখ্যা বেশি। তাদের ক্রয়ক্ষমতার বিষয়টি মাথায় রেখেই কেরানীগঞ্জের কারখানাগুলোয় পোশাক তৈরি হয়। 
এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল আজিজ শেখ বলেন, এখানে কোনো শ্রমিক অসন্তোষ নেই। নেই কোনো চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী। নৌ-পথ ও সড়ক পথে দেশের যে কোনো অঞ্চলে সহজে যোগাযোগ এবং যানজটমুক্ত এলাকা হওয়ায় দেশের যে কোনো এলাকার পাইকাররাই পছন্দ মাফিক কেনাকাটার জন্য এখানে আসেন। প্রতিদিন প্রায় ১০ সহাস্রাধিক শ্রমিক কাজ করেন কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট পল্লীতে। নেই কোনো শ্রমিক অসন্তোষ। ব্যবসায়ীরা নির্ভিগ্নে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।