সড়ক ও নৌপথে কঠোর প্রশাসন

আসন্ন ঈদুল ফিতর সামনে রেখে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার সড়ক যোগাযোগের একমাত্র রুট সিরাজগঞ্জের ১২৩ কিলোমিটার মহাসড়ক। ঈদ ঘিরে এ মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ করতে ঈদের অনেক আগেই মহাসড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এছাড়া দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ঘরমুখো মানুষের নির্বিঘেœ যাতায়াতের জন্য নানামুখি উদ্যোগ নিয়েছে জেলা পুলিশ। এরই মধ্যে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে জেল-জরিমানা, ফিটনেসবিহীন লঞ্চ চলাচল বন্ধ, স্পিডবোটের লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার, লঞ্চের প্রয়োজনীয় বয়া এবং অন্য সরঞ্জমাদি ব্যবহারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঈদের সময় ঘাটের নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, কোস্ট গার্ড, সাদা পোশাকে পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ সদস্য ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হবে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরÑ
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতি বছরই এ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজট ও দুর্ঘটনাসহ নানা ভোগান্তির আশঙ্কা দেখা দেয়। এজন্য এবার ঈদের অনেক আগেই মহাসড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। সওজ বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে এরই মধ্যে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সংস্কারের কাজ প্রায় শেষের দিকে। সেইসাথে ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে এ মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ। সোমবার বিকালে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপারসহ উত্তরাঞ্চলের পুলিশ সুপার ও হাইওয়ে পুলিশের এসপি সংশ্লিষ্ট থানা ও ফাঁড়ি পুলিশকে মহাসড়ক পথে পুলিশের কঠোর ভূমিকা পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই মধ্যে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা মহাসড়কে টহল শুরু করছেন। 
সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বিনা কারণে মহাসড়কে পুলিশ সদস্যরা যানবাহনে তল্লাশি ও হয়রানি করতে পারবে না। 
এদিকে দূরপাল্লার বাস চালকরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে উত্তরবঙ্গ প্রবেশে প্রায় ১৯ কিলোমিটার আসার পর ঝুঁকিপূর্ণ নলকা সেতু, হাটিকুমরুল গোলচত্বরের অদূরে ধোপাকান্দি সেতুতে। এতে গাড়ির গতি অনেকটাই কমাতে হয়। হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের মহিষলুটি ও মান্নান নগরের মাঝামাঝি স্থানে বেশ কয়েকটি এলাকায় বড় বড় গর্ত রয়েছে। 
সিরাজগঞ্জের সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল প্রামাণিক বলেন, নলকা সেতু থেকে নাটোর মহাসড়কের কাছিকাটা সেতু পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার ও বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের চান্দাইকোনা থেকে বাঘাবাড়ী সেতু পর্যন্ত ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে বেশিরভাগ অংশেরই মেরামত কাজ শেষ হয়েছে। তবে শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা মুলিবাড়ী থেকে নলকা পর্যন্ত ২১ দশমিক ৬ কিলোমিটার মহাসড়কের সংস্কারের কাজ চলছে এবং ঈদের আগেই শেষ হবে। 
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি সৈয়দ শহীদ আলম ও হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আবদুল কাদের জিলানী জানান, এ বছর মহাসড়কের বেশিরভাগ অংশ সংস্কার কাজ শেষ হওয়ায় অনেকটাই স্বস্তি রয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কের কড্ডার মোড়ে সরু লেন, নলকা সেতু ও ধোপাকান্দি সেতুর কারণে যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মহাসড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধসহ ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ কঠোর দায়িত্ব পালন করবে। 
মানিকগঞ্জ : ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে নানামুখি উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লউিটিএ মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন। ঈদের তিনদিন আগে ও পরের তিন দিন সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকবে। তবে জরুরী পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার স্বাভাবিক থাকবে। বর্তমানে ১৬টি ফেরি চলাচল করলেও ঈদের আগেই বহরে যুক্ত হবে আরও চারটি ফেরি। ফেরির পাশাপাশি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে চলাচল করবে ছোট বড় মিলে মোট ৩৪টি লঞ্চ। যাত্রী সেবায় পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় কাজ করবে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম। বিআইডব্লিউটিসির আরিচা ঘাট শাখার উপ-মহাব্যাবস্থাপক জিল্লুর রহমান জানান, বর্তমানে এই নৌরুটে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে এবং ঈদের সময় আরও তিনটি ফেরি অর্থাৎ ২০টি ফেরি চলাচল করবে। 
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএফএম ফিরোজ মাহমুদ জানান, ঈদ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্টের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি কন্টরুম ও মেডিকেল ইউনিট গঠন করা হবে। যাত্রীদের জন্য ২০ টয়লেট ও আলোর ব্যবস্থা করা হবে। 
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম জানান, যাত্রীদের নিরাপত্তায় প্রায় ৫০০ পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবে। 
মুন্সীগঞ্জ : আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া ঘাটে ঘরমুখী মানুষের নির্বিঘেœ যাতায়াতের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ। 
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাবিরুল ইসলাম খান জানান, ঈদের তিন দিন আগে ও পরে মোট ছয় দিন ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে। ঈদ উপলক্ষে নৌরুটে ৮৭টি লঞ্চ, ১৮টি ফেরি ও দুই ঘাট মিলিয়ে ৫৪০টি স্পীডবোট চলাচল করবে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম (বার) জানান, ঈদে ঘরমুখী মানুষের যাতায়াত নিশ্চিত করতে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ও শিমুলিয়া ঘাট মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। সিসি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার, কন্ট্রোল রুম, প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করার কাজ চলছে। যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করবে। বিআইডব্লিউটিসির সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সিফাত রহমান জানান, চলাচলতরত ১৬ ফেরির সঙ্গে নতুন করে তিনটি ফেরি সংযুক্ত হয়ে ঈদে সর্বমোট ১৯ ফেরি যানবাহন পারাপারে নিয়োজিত থাকবে।