আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৩১-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

ধান চাষিদের দুরবস্থা ও আগামীর করণীয়

খালিদ ফেরদৌস
| সম্পাদকীয়

কৃষকের পণ্য উৎপাদন খরচ কমাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ঝামেলাহীনভাবে বিক্রির জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। সরকারি উদ্যোগে আলুর কোল্ডস্টোরেজ বা হিমাগারের মতো শাকসবজি ও পচনশীল কৃষিপণ্যের জন্য হিমাগার নির্মাণ করতে হবে

‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ এটা আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্যের মহান সেøাগান। তাই ভরত চন্দ্র বলেছেন, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে’। আমরা ভাত ব্যতিরেকে অন্য যত দামি খাবারই খাই না কেন, মনে হয় কী যেন খাইনি। এটা আমাদের খাঁটি বাঙালিয়ানার পরিচায়ক। আমরা বাংলায় হাসি, বাংলায় কাঁদি, আমরা বাংলায় ভাত খাই।
কিন্তু বর্তমানে ধানচাষিদের তথা কৃষক সমাজের দুরবস্থা দেখে এসব বুলি আওড়াতে কৃষকের কাছে সচেতন মহলের লজ্জায় পড়তে হয়। কারণ যারা আমাদের মাছ-ভাতের জোগান দেয় তাদের প্লেটে সন্তুষ্টির মাছ-ভাত নেই। তারা ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন করে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। 
বলতে দ্বিধা নেই, বাংলাদেশ আর্থসামাজিকসহ বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ কথা বর্তমান সরকারের কট্টর বিরোধীরাও অপকটে স্বীকার করে। আবার সামাজিক ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের পরিবেশ সূচকে কিছুটা ছন্দহীনতা, এ কথা সরকারদলীয় সমর্থক ও অনেক নীতিনির্ধারকও স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। আমাদের প্রাণসঞ্চারের কৃষি খাতও উন্নয়নের মহাসড়কে ধাবমান বাংলাদেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কৃষিপণ্যের দাম ও বাজার উন্নয়নে চোখে পড়ার মতো কোনো অগ্রগতি সাধন বা নাকে আসার মতো সুবাসে সুরভিত হয়নি খাতটি। দেশের বর্তমান কৃষিপণ্যের বাজার নিয়ে সম্প্রতি একটা জাতীয় দৈনিকের শিরোনাম ছিলÑ এক মণ ধানে এক কেজি গরুর মাংস। এই সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে চারপাশে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র মতো আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। তবে এটা আমাকে খুব বেশি অবাক করেনি। কারণ বাণিজ্যিকভাবে গরুর খামারও করে দেশের সূর্যসন্তান অর্থাৎ কৃষকরা। কেউ কেউ বলতে পারেন, এখন গরুর পালন বড় বড় শিল্পগ্রুপের দখলে চলে গেছে। তারপরও বলব, এটার প্রকৃত সুবিধাভোগী কৃষক শ্রেণি। গরুর খামারগুলোতে অনেক কৃষক বা খেটে খাওয়া মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। সার্বিকভাবে এগিয়ে যায় দেশ। 
যা হোক, বাংলাদেশে কৃষক কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে মোটেও ভালো অবস্থায় নেই। এ গরুর মাংস বাদে তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজারমূল্য অবিশ্বাস্য রকমের কম। 
অথচ দেশ কৃষকের হাড়ভাঙা খাটুনি ও গায়ের ঘামে পা ভেজানো পরিশ্রমে নিভৃতচারীর মতো এগিয়ে চলেছে। ছোট্ট একটা ভূখ-ের বাংলাদেশ সতেরো কোটির বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশ হওয়া সত্ত্বেও খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশ এখন সারা পৃথিবীতে মাছ উৎপাদনে চতুর্থ। ধান, পাট, শাকসবজি উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় দেশের কাতারে। মাথাপিছু আয় প্রায় ২ হাজার ডলার। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ২০০ দেশের মধ্যে ৪২তম অর্থনীতির দেশ। সরকার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছে, জিডিপির প্রবৃদ্ধি এ বছর হয়ে যাবে ৮ শতাংশ, যা সারা বিশ্বের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত ও অনুকরণীয়। এটা হলে আমাদের সামনে থাকবে চীন, ভারতসহ কয়েকটা দেশ। উন্নতির গতি আরও বেগবান করতে পারলে একদিন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীন ও ভারতকেও ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। 
তাই অনেকের প্রশ্ন, এ দুর্বার অগ্রগতির মাঝে কৃষকদের এ দুরবস্থা কেন? এটির প্রকৃত চিত্র বের করতে কৃষি গবেষক বা বিশেষজ্ঞ হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কৃষকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নিজের জমিতে ধান চাষ করলে বিঘাপ্রতি খরচ প্রায় ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা। অন্যের জমি লিজ বা ইজারা নিয়ে ধান চাষ করলে বিঘাপ্রতি খরচ হয় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। এটা একদম ন্যূনতম খরচ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বর্তমান বাস্তবতায় এর চেয়ে কম খরচে ধান চাষ করা অসম্ভব। 
ভাত খাওয়া ছাড়া আর কোনোভাবে যাদের ধান-চালের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই তাদের জন্য খরচের হিসাবটা একটু বিস্তারিত লিখলে বুঝতে সুবিধা হবে। ধান রোপণের জন্য নিজে চারা উৎপাদন করতে হয় বা চারা কিনতে হয়। এর জন্য বিঘাপ্রতি ১ হাজার টাকার মতো লাগে। এরপর জমি প্রস্তুতে লাগে ১ হাজার ৫০০ টাকা, রোপণ করতে লাগে ১ হাজার ৫০০ টাকা। সার-কীটনাশক বাবদ খরচ হয় ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মতো। সেচের জন্য ১ হাজার ৬০০ টাকা, আগাছা দমনে নিড়ানির জন্য লাগে ১ হাজার টাকা। এরপর ধান পাকলে কাটার জন্য চলতি ২০১৮ থেকে ২০১৯ অর্থবছরে বিঘাপ্রতি খরচ ৩ হাজার টাকা। কাটা ধান বাড়িতে আনতে পরিবহন খরচ হয় ১ হাজার ১ টাকা। ধান মাড়াই করতে লাগে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এই হলো নিজ জমিতে বিঘাপ্রতি ধান উৎপাদন খরচ। জমি লিজ নিয়ে ধান চাষে বিঘাপ্রতি আরও ৬ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়। সাধারণত এ দেশে বিঘাপ্রতি ধানের উৎপাদন গড়ে ২০ থেকে ২৫ মণ। বর্তমান বাজারে এক মণ ধানের দাম ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা। অনেক এলাকায় আরও কম। জমি নিজের হলে এবং ফলন গ্রহণযোগ্য পরিমাণে হলে ধান চাষে বিঘাপ্রতি ক্ষতি হয় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকার মতো। আর লিজ নিয়ে চাষ করলে ক্ষতি হয় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার মতো। এর অর্থ দাঁড়ালো ধানের ফলন বাম্পার হলেও কৃষক লোকসানের শিকার হচ্ছেন। আর মাঝের তিন মাসের অক্লান্ত পরিশ্রম, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কোনো মূল্যায়ন নেই; যাকে গাধার খাটুনি বললেও অত্যুক্তি হবে না। মিডিয়ায় এসেছে কোনো কোনো কৃষক ধান কাটতে গরু-বাছুর পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছেন।
তাছাড়া এবার প্রথম কৃষক নিরুপায় হয়ে দুঃখে-কষ্টে পাকা সোনালি ধানক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। একজন কৃষক তার স্বপ্নের জাল বুনা ধানের ক্ষেতে কখন আগুন দেন তা বুঝতে মনোবিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে ছাত্রলীগ, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এমনকি এক ডিসিকেও ধান কেটে দিতে দেখা গেছে। এটা ভালো উদ্যোগ; কিন্তু যা প্রকৃত সমস্যা সমাধানের তুলনায় খুব অপ্রতুল। একটা বিষয় জাতি হিসেবে আমাদের বারবার পিছিয়ে দিচ্ছেÑ আমরা কোনো সমস্যা প্রকট আকার ধারণ না করলে আমাদের টনক নড়ে না। আমরা কী সারাজীবন সমস্যা তৈরি হওয়ার পর তার সমাধান করব, নাকি সমস্যা তৈরি হওয়ার আগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেই সমস্যার টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান করব। দেশকে এগিয়ে নিতে সমস্যা তৈরি হওয়ার আগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় পদার্পণ না করলে এ ধরনের নানাবিধ সমস্যা আমাদের অক্টোপাসের মতো আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে উন্নয়নের গতিকে রুদ্ধ করে ফেলবে।
অন্যদিকে এবার ধান কাটার ভরা মৌসুমে ঝড়-বৃষ্টি, দেশের অনেক কৃষক এখনও ফসল ঘরে তুলতে পারেনি। তারপরও কৃষক আমাদের জন্য কাদা খুঁচবে, ধান চাষ করবে। যেন ধান চাষ করা তাদের কাছে মরণনেশা, ধান চাষ ছাড়া তাদের কোনো গতি নেই। 
ধান তো বিক্রি করতে না পারলে রেখে দেওয়া যায় বা বাঙালির প্রধান খাদ্য হওয়ায় তা খাওয়া যায়। কিন্তু সেসব কৃষিপণ্য পচনশীল বা রাখি করে রাখা যায় না যেমনÑ শাকসবজি, ফলমূল। যশোর, ঝিনাইদহ, রংপুর অঞ্চলে রবি বা শীত মৌসুমে মুলা-কপি বা অন্যান্য অনেক শাকসবজির দাম এক টাকায় এক মণ হয়ে যায়। এমনও হয়, বিক্রি না হওয়ায় কৃষক নিরুপায় হয়ে গরু-ছাগল দিয়ে খাইয়ে দেন। 
অথচ সেই শাকসবজি ঢাকা বা মহানগরগুলোতে ৪০ টাকার অধিক কেজি দরে বিক্রি হয়। ওদিকে আমের মৌসুম পুরোদমে শুরু না হতেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের কেজি দেড় টাকা। কৃষকের মাথায় হাত; অনৈতিক ব্যবসায়ীদের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা রাখতে পকেটে হাত। 
ফড়িয়া, মধ্যস্বত্বভোগী ও বাজারজাতকরণের দুর্বল কাঠামোর কারণে কৃষক এর ফলভোগ করতে পারে না। তাদের জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য থেকে যায় অধরা।
ভাবতে অবাক লাগে, এ দেশে ১ কেজি ধান বিক্রি করে কৃষক পাচ্ছে ১২ দশমিক ৫ টাকা। সেখানে নদীমাতৃক, সাগরসমৃদ্ধ পানির প্রাচুর্যের দেশে হাফ লিটার পানি বিক্রি করে বড় বড় শিল্পপতিরা পাচ্ছেন ১৫ টাকা!
কিন্তু অবাক করা কা-, মোট জনসংখ্যার ৭০ থেকে ৭৮০ ভাগ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত হওয়ার পরও দেশে ধানের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কোথাও তেমন কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নেই। আছে শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় উড়ো উন্মাদনা। আন্দোলন দূরে থাক দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে দাবি তোলারও তেমন কোনো আয়োজন নেই। ভাবটা যেন এমন এ দেশে কোনো কৃষকই নেই, কোনো ধান চাষ নেই; সবাই সিঙ্গাপুরের মানুষের মতো সু্যুট-কোট পরা চাকরিজীবী হয়ে গেছে। এ দেশের মানুষ ট্রল আর পাল্টা ট্রলে খুব পারদর্শী। কোনো ভিডিও, ছবি বা লেখা দিয়ে কীভাবে ভাইরাল হওয়া যায়, সেই চিন্তা অধিকাংশ তরুণ বা উঠতি বয়সি তরুণ-তরুণীদের মাঝে। এ দেশের সন্তানদের মা-বাবা, অভিভাবক, তরুণ প্রজন্ম বুঁদ হয়ে আছে বিসিএসের পরীক্ষা ও চাকরি নিয়ে। এ চাকরি উন্মাদনা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (ঝঁংঃধরহধনষব উবাবষড়ঢ়সবহঃ এড়ধষং) এবং দেশের প্রগতি ও প্রকৃত উন্নয়নে কত বড় প্রতিবন্ধকতা, তা এ দেশ আরও দশ-বিশ বছর পরে টের পাবে।
এ দেশের মানুষ দেশের ফুটবলের কোনো খোঁজ রাখে না; কিন্তু স্প্যানিশ লিগ, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগসহ ইউরোপীয় লিগ নিয়ে রাতের ঘুম হারাম করে। বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্কে হলিউডের সিনেমার টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি করে। অন্যদিকে বাংলা সিনেমা ভালো হোক, মন্দ হোক নাক সিটকানো তাদের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এ বাঙালি বেমালুম ভুলে যায় যে নাক দিয়ে সে নাক সিটকায়, সে নাকও যেমন তার তেমন এ দেশের সিনেমা ও দেশও তার। ২০১৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জার্সির রং ও ডিজাইন নিয়ে, চেতনা নিয়ে ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় কী সাংঘাতিক ধরনের কাদা ছোড়াছুড়ি দেখেছে দেশের জনগণ। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা সমুদ্রের প্লাস্টিক সংগ্রহ ও সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণের থিম নিয়ে অসাধারণ জার্সি বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। 
আমরা বাঙালি, মাছে-ভাতে বাঙালি। কিন্তু অনেকের ভাব-ভঙ্গি এমন যেন তারা এ দেশের নাগরিক নয়, তারা ভাত খায় না, শুধু মুরগি ভাজা (ফ্রাইড চিকেন) খায়। এত এত শক্তিশালী সুশীল সমাজ দেশে। তাদের মানববন্ধন, সমাবেশে প্রেসক্লাবে জ্যাম নিত্যদিনের ঘটনা। অথচ কৃষক ও কৃষির উন্নয়নে দৃশ্যত কোনো কর্মতৎপরতা নেই। কৃষকের কোনো ভাষা নেই, তাদের কোনো মাধ্যম নেই। আফসোস আছে তাদের কোনো সমাজ নেই। সুখের কথা বর্তমান সরকার কৃষি উন্নয়ন ও কৃষকের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু প্রকৃত কৃষক এসব মহৎ উদ্যোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনিক লোক ও অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে। অনেক দিন থেকে শুনছি শস্যবিমা চালু করা হবে, যা এখনও আলোর মুখ দেখেনি।
তারপরও আমরা আশাবাদী। বর্তমান তরুণ সমাজকে যদি সরকার যথাযথ প্রশিক্ষিত ও দক্ষ-যোগ্য করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করে; তবে সামনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা সক্ষম হব। এক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষা সর্বাধিক গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। কৃষি খাতকে ঢেলে সাজাতে কৃষি তথা কৃষকবান্ধব নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ কৃষি একটা দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার নিউক্লিয়াস বা প্রাণ। আর কৃষি ব্যবস্থার চালিকাশক্তি কৃষক। কৃষকদের অবমূল্যায়ন বা অবহেলা করে কখনও কৃষির উন্নয়ন সম্ভয় নয়। এক্ষেত্রে সরকারকে কৃষি বাঁচাতে কৃষকদের চাষাবাদে ভর্তুকি বা বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। 
কৃষকবান্ধব প্রযুক্তির প্রচলন, প্রধান প্রধান খাদ্যশস্যের ওপর উচ্চতর গবেষণা করে অধিক ফলনশীল জাত উদ্ভাবনে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। একটা বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে, তাহলো কৃষি জমির মালিকানাসংক্রান্ত জটিলতা তথা অধিক জনসংখ্যার কারণে জমি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খ-ে বিভক্ত হওয়ায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ সম্ভব হয় না। তাই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খ-ে বিভক্ত জমি একত্র করে সমষ্টি চাষাবাদ (ঈড়সসঁহরঃু ঈঁষঃরাধঃরড়হ) ব্যবস্থাকরণে রাষ্ট্রীয়ভাবে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
কৃষকের পণ্য উৎপাদন খরচ কমাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ঝামেলাহীনভাবে বিক্রির জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। সরকারি উদ্যোগে আলুর কোল্ডস্টোরেজ বা হিমাগারের মতো শাকসবজি ও পচনশীল কৃষিপণ্যের জন্য হিমাগার নির্মাণ করতে হবে। মৌসুমে প্রয়োজনের অতিরিক্ত উৎপাদিত পচনশীল পণ্য হিমাগারে রেখে অমৌসুমে তা বিক্রি করার ব্যবস্থা করা। এতে কৃষক যেমন ন্যায্যমূল্য পাবে, তেমনি ভোক্তারা প্রত্যাশিত মূল্যে কৃষিপণ্য কিনতে পারবে, যা বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও মুদ্রাস্ফীতি রোধে সহায়তা করবে। তাছাড়া কৃষক যাতে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় এজন্য সঠিক মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সর্বোপরি একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, কৃষির ওপর টিকে থাকে একটা রাষ্ট্র। তাই সরকারকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কৃষকদের ন্যায্য দাবি ও চাহিদা পূরণে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। কারণ কৃষক বাঁচলে বাঁচবে কৃষি। কৃষি বাঁচলে বাঁচবে দেশ। 

খালিদ ফেরদৌস 
এমফিল গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়