রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক নির্যাতন, গণহত্যার জেরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিপুল পরিমাণের অস্ত্র কিনে চলেছে মিয়ানমার। সামরিক শক্তি বাড়াতে চীন, রাশিয়া, ভারত ও ইসরাইল থেকে দেশটি বিপুলসংখ্যক অস্ত্র সংগ্রহ করে যাচ্ছে।
রাখাইনে ব্যাপক গণহত্যা, নির্যাতনের মুখে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার প্রেক্ষাপটে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে মিয়ানমার। এর মধ্যে দেশটির বেশ কিছু সামরিক কর্মকর্তাও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েন। রোহিঙ্গা মুসলমানদের পর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন বিদ্রোহীদের টার্গেট করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এসবের নিন্দা জানিয়ে আসছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। কিন্তু মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অস্ত্র কেনা অব্যাহত রেখেছে। ভৌগোলিক দিক থেকে এবং অস্ত্রের বাজার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছ থেকে অস্ত্র কেনায় ছাড়ও পাচ্ছে দেশটি। অর্থনৈতিক অবরোধ শিথিল করলেও মিয়ানমারের কাছে এখন অস্ত্র বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে অস্ত্র বিক্রিতে পিছপা হচ্ছে না চীন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘে মিয়ানমারকে সমর্থন দিয়ে আসছে চীন? দেশটিকে মিয়ানমারের অস্ত্রের প্রধান উৎস হিসেবে অভিহিত করেছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালে মিয়ানমারের ৬৮ শতাংশ অস্ত্রের আমদানি হয়েছে চীন থেকে। সাঁজোয়া যান, ভূমি থেকে আকাশের মিসাইল প্রযুক্তি, রাডার, ড্রোনসহ বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম ছিল এর মধ্যে। এসআইপিআরআই’র এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ গবেষক সিমন উইজেম্যান জানান, সম্প্রতি সিনো-পাকিস্তানি ‘জেএফ-১৭ থান্ডার ফাইটার জেট’ অর্ডার করেছে মিয়ানমার? এর প্রত্যেকটির মূল্য ২৫ মিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালের শেষ সময় থেকে এ ধরনের ফাইটার জেট প্রদর্শন করে আসছে মিয়ানমারের বিমান বাহিনী।
এদিকে আন্তর্জাতিক পরিম-লে মিয়ানমারের অন্যতম উদ্যোমী বন্ধু রাশিয়া? ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শেইগু মিয়ানমার সফর করেন এবং ছয়টি এসইউ-৩০ বিমান বিক্রি নিয়ে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তিটি ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বলে অনুমান করা হয়? ওই চুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছিল, এ চুক্তি রোহিঙ্গা সংকটকে তীব্রতর করবে? তবে এ ‘অভিযোগের বিষয়ে কোনো মনোযোগ’ তাদের নেই বলে তখন মন্তব্য করেছিলেন রাশিয়া সরকারের একজন মুখপাত্র। অন্যদিকে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে চীনের বিপরীতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বাড়ায় ভারত? একইসঙ্গে রোহিঙ্গা সংকটেও নির্লিপ্ত ভূমিকা রাখে দেশটি। নিরাপত্তা বিশ্লেষক অ্যান্থনি ডেভিসের মতে, মিয়ানমারের নৌবাহিনীর দিকে নজর দিচ্ছে ভারত। মিয়ানমারকে বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি সরবরাহের পাশাপাশি যৌথ মহড়ার প্রস্তাব দিয়ে আসছে দেশটি।
ডেভিড বলেন, ভারতীয়রা মূলত মিয়ানমারের বিমান বাহিনীর আধুনিক করা নিয়ে কাজ করছে এবং এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হারে অগ্রগতি হচ্ছে। এদিকে মিয়ানমারের সঙ্গে ইসরাইলের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৮ সালে রোহিঙ্গা সংকটের মধ্যেও মিয়ানমার সরকারকে পানি বিশুদ্ধকরণ সিস্টেম প্রদান করে ইসরাইল। কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ইসরাইলের অভ্যন্তরেই নানা ধরনের বিতর্ক রয়েছে। তাই ২০১৭ সালে একবার অস্ত্র বিক্রি বন্ধও হয়ে গিয়েছিল। এখন মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি আগের মতোই চলছে বলে জানিয়েছে ইয়াঙ্গুনের ইসরাইলি দূতাবাস। ডয়েচে ভেলে