আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৩১-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

ভেতরেই শুধু ক্রিকেটীয় উন্মাদনা

স্পোর্টস ডেস্ক
| খেলা

শুরু হয়ে গেছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। তবে শুরুর আগে কিছু আনুষ্ঠানিকতাও সারতে হয়েছে ১০ দেশের অধিনায়কদের, যেখানে ছিল (প্রথম ছবি) ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ। সেখানে ছিলেন বাংলাদেশের মাশরাফিও। ডানের ছবিতে উদ্বোধনী পর্বে স্ট্রিট ক্রিকেটে চ্যালেঞ্

ইংল্যান্ডে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল; ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ তো বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগ। এরপর রাগবি ও ফিল্ড হকির। উপমহাদেশে ফুটবলকে টপকে ক্রিকেট জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকলেও ইংল্যান্ডে খেলাটির অবস্থান চার নম্বরে। তাই তো ২০ বছর পর আঁতুড়ঘরে বিশ্বকাপ ফিরলেও খুব বেশি উত্তাপ দেখা যাচ্ছে না ইংল্যান্ডের রাস্তায়।

বাংলাদেশে বিশ্বকাপ হলে পুরো ঢাকা শহর যেমন রং মাখে, ক্রিকেট বিশ্বকাপ ঘিরে লন্ডন শহরের সেই বাস্তবতা নেই; ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার উদ্বোধনী ম্যাচ ভেন্যু ওভাল স্টেডিয়াম ঘিরেই দেখা মিলেছে বিশ্বকাপের রং। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের বিপুল সমারোহের শহরে ক্রিকেট খেলার বিশ্বকাপের মতো আসরও সমুদ্রের বুকে এক বালতি জলের মতো ছোট ব্যাপার। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে খেলতে নামা স্বাগতিক ইংল্যান্ডের জন্য গলা ফাটাতে মানুষেরও কোনো কমতি নেই। একদম ভরপুর গ্যালারি আর ক্রিকেটীয় উন্মাদনাতেই শুরু হয়েছে ওয়ানডে ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই।
আগের দিন সন্ধ্যায় লন্ডন শহরে অল্প সময়ে এখানকার তাল বুঝে ফেলা শক্ত ছিল, আনকোরা হলে যা হয়। সহজ পথেও চক্কর অবধারিত। যদিও বন্ধু-বান্ধব আর স্বজনরা বিস্তর পরামর্শ দিয়ে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, তবু লন্ডন মেট্রোর ম্যাপ (এখানে যা টিউব নামে পরিচিত) প্রথম দেখায় হিজিবিজি লাগাই স্বাভাবিক। সেই হিজিবিজি টিউবের চক্করে বার দুয়েক ঘুরপাক খেয়ে বার্কিং থেকে ওভাল স্টেডিয়ামে আসতে বেশ অনেকক্ষণ লেগে গেল। রাস্তাতেই দেখলাম টস হয়ে গেছে, শুরু হয়ে গেছে বিশ্বকাপ। হ্যাপা আর কাকে বলে! বাংলাদেশি গণমাধ্যমে লিখেছেন একুশ তাপাদার।
তবে ওভাল টিউব স্টেশন থেকে নেমেই সব পানির মতো সহজ। স্টেশনের একদম গাঘেঁষা কেনিংটন ওভাল স্টেডিয়াম। তড়িঘড়ি মিডিয়া অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড সংগ্রহ করে ঢুকতে চোখে পড়ল অনেকগুলো লম্বা লাইন। কেউ ঢুকছে গ্যালারিতে। কেউ গ্যালারি থেকে বেরিয়ে লাইন দিয়েছে গলা ভেজানো আর গা গরম করার দোকানে। কারও আবার পেট পুঁজোর তাড়া। পুরো পরিবেশেই চার-ছক্কা, হইহই ব্যাপার। 
কিন্তু সেই কলরবের মধ্যেও আছে অদ্ভুত মাপঝোক। কোন স্কেলে কোন রব উঠলে চড়া শোনাবে না, আবার একদম নেতিয়ে পড়াও যাবে না এ যেন সবারই জানা। যেন কোরাসের তাল মিলিয়েই চলছে উত্তাপের উঠানামা। সুশৃঙ্খল আর সুচারুভাবে।  বাঙালির ক্রিকেট প্রেম যেমন এখন গুরুতর পর্যায়ে। যেকোনো কিছুতে মার-মার, কাট-কাট পরিস্থিতি। তীব্র জাতীয়তাবোধের তাড়নায় উত্তেজনার পারদ সর্বদা থাকে চূড়ায়। এখানে তার বালাই নেই। পুরো আমেজই বিপরীত। খেলা দেখা নিছক বিনোদন আর ঘটা করে আনন্দ করার উপলক্ষ। জেসন রয়, জো রুট, ইয়ন মরগ্যানদের প্রতিটি বাউন্ডারিতে তাই হুল্লোড় চলল, মরগ্যানকে যখন আবার ছেঁটে ফেলে ভোঁ দৌড় দিলেন ইমরান তাহির, তার জন্যও তালি কম পড়েনি। বাংলাদেশে যেমন কেউ ভালো করতে থাকলে তালি, পা হড়কালে গালি চলে তীব্র। এখানে তালি থাকলেও নেই গালি, এই থাকাতেই ক্রিকেটীয় উন্মাদনার পরিমিতিবোধ আভিজাত্যের সঙ্গে ধরা দেয়।
ক্রিকেটের জন্মভূমি ইংল্যান্ড। বাইশ গজে ব্যাটে-বলের এই খেলার সঙ্গে লেপ্টে আছে আভিজাত্যের তকমা। তকমাটা অবশ্য টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গেই বেশি। যদিও হালের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের রমরমা বাজার ওয়ানডে ক্রিকেটকে দিয়েছে ঐতিহ্যের পোশাক। মাস দেড়েক ঐতিহ্য, ব্রিটিশ আভিজাত্য আর উন্মাদনার এক মিশেল দেখার আশা তাই করা যেতেই পারে। তবে উপমহাদেশীয় দলগুলো মাঠে নামার পর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে উদযাপন প্রকাশের তফাতও হয়তো দেখা যাবে।