নরওয়ের ব্রিমুনডাল উপত্যকায় মিয়োসা হ্রদের তীরে কাঠের তৈরি ১৮ তলার ভবনটির উচ্চতা সাড়ে পঁচাশি মিটার। বিশ্বে অন্য কোথাও এত বড় কাঠের বাড়ি নেই। এ প্রকল্প আবাসন ব্যবসায়ী আর্তুর বুখার্টের স্বপ্ন ছিল। তিনি বলেন, কাঠ দিয়ে কী করা সম্ভব, এ ভবন তার প্রতীক? জটিল ভবন, বহুতল ভবনও বটে। নির্মল ও আরও স্পষ্ট এ ভাবনা মানুষ ও প্রকৃতির স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। ১৫ তলায় লাইফ আটলে ভিকেনের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। চারপাশে কাঠের সংস্পর্শ তিনি খুবই উপভোগ করেন। লাইফ বলেন, এভাবে কাঠের অনুভূতি, তার গন্ধ পাওয়া যায়। এত কাঠ যেন মনে আবেশ এনে দেয়। কাঠ জীবন্ত, ইস্পাত ও কংক্রিট মৃত। তাই মনে হয়, এ ভবনটি যেন আপনার সঙ্গে বেঁচে রয়েছে। বহু বছরের মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে এ ভবনটিকে তীব্র বাতাস ও চরম আবহাওয়ার ধাক্কা থেকে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাঠ দিয়ে নির্মাণে পারদর্শী একটি কোম্পানি বাড়িটি ডিজাইন করেছে।
প্রকল্পের সমন্বয়ক ওস্টেন এলিগসাস স্থাপত্যের ক্ষেত্রে একেবারে নতুন এ প্রচেষ্টায় শামিল ছিলেন। তিনি বলেন, এর আগে আমরা কখনো এমন কাজ করিনি। তাই এটা যে সম্ভব, সেই বিশ্বাস রাখা জরুরি ছিল। অনেক পরিশ্রম ও বিনিদ্র রজনীর পর আমরা সঠিক দিশা দেখতে পেয়েছি। এত হালকা উপকরণই ছিল সবচেয়ে বড় সমস্যা। বাতাসের ধাক্কা, বাইরের সব শক্তি ভবনটিকে হেলিয়ে দিতে বা তা স্থানান্তর করতে পারত।
ভবনটির ভার সামলাতে থামগুলি মাটির আরও গভীরে বসাতে হয়েছে। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাও বড় বিষয় ছিল। মোটা কাঠের থামগুলি এমনকি ইস্পাতের তুলনায়ও আরও বেশিক্ষণ আগুনের শিখা সামলাতে পারে। কাঠ দিয়ে নির্মাণের ক্ষেত্রে এটাও বড় সুবিধা।
ভিয়েনা শহরেও ৮৪ মিটার উঁচু একটি কাঠের বহুতল ভবন তৈরি করা হচ্ছে? ফ্রান্সের বোর্দো শহরেও পরিবেশবান্ধব কাঠ দিয়ে একটি গোটা বসতি গড়ে তোলা হচ্ছে? লন্ডন শহরে স্থপতিরা প্রায় ৩০০ মিটার উঁচু ওক কাঠের ভবন পরিকল্পনা করছেন। নরওয়ের প্রকল্পের সমন্বয়ক ও্যস্টেন এলিগসাস মনে করেন, এমন প্রবণতা পরিবেশবান্ধব নির্মাণের প্রতীক বলে আমি মনে করি। পরিবেশের কথা ভাবতে হবে। ভবিষ্যতে নির্মাণের ক্ষেত্রে কাঠ পরিবেশবান্ধব উপকরণ হতে পারে। শুধু উঁচু ভবন নয়, যে কোনো বাড়িতেই তা ব্যবহার করা যায়। কাঠের এ বহুতল ভবনে হোটেল ও কনফারেন্স রুমও রয়েছে? এখনও পর্যন্ত কাঠের তৈরি বহুতল ভবন ব্যতিক্রম রয়ে গেছে। কিন্তু মিয়োসা টাওয়ারকে ভবিষ্যতের ফ্ল্যাটবাড়ির ভালো দৃষ্টান্ত হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। ডয়েচে ভেলে
