আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৩১-০৫-২০১৯ তারিখে পত্রিকা

নুসরাতের ভাইয়ের অভিযোগ

আদালতেও হুমকি দিচ্ছে ‘খুনিরা’

আলোকিত ডেস্ক
| প্রথম পাতা

- মামলা নারী নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে 
- ওসির জামিন ঠেকাতে প্রস্তুত রাষ্ট্রপক্ষ

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির ‘খুনিরা’ আদালতে গিয়েও বাদীকে হত্যার হুমকি দিয়েছে বলে নুসরাতের ভাই অভিযোগ করেছেন। বৃহস্পতিবার মামলা শুনানির জন্য অভিযোগপত্রভুক্ত ১৬ আসামিসহ এ মামলায় মোট গ্রেপ্তার ২১ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। উপস্থিত ছিলেন বাদীও। বাদী নুসরাতের ভাই আবদুল্লাহ আল নোমানের অভিযোগ, আসামিরা আদালতে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার পরিবারকে আক্রমণ করে আসামিরা হুমকি দিচ্ছে। খবর বিডিনিউজের 

বাদীর আইনজীবী রফিকুল ইসলাম খোকনও একই অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, আসামিদের হাজতখানা থেকে এজলাসে আনা হলে তাদের মধ্যে কয়েকজন হট্টগোল করে। তারা বাদী ও তার আইনজীবীদের অশালীন ভাষায় গালমন্দ করে। তিনি বলেন, এক পর্যায়ে কয়েকজন আসামি তেড়ে এসে মামলার বাদী ও আইনজীবীদের হত্যার হুমকি দেয়। আইনজীবীরা বিষয়টি আদালতকে জানালে বিচারক আদালতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ দেন পুলিশকে। পরে পিবিআই আদালতে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এদিন ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের সোনাগাজী আমলি আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসাইন মামলাটি ফেনীর নারী ও নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তরের আদেশ দেন। এছাড়া ১০ জুন মামলার পরবর্তী শুনানির দিনও তিনি ঠিক করে দেন। ওই দিন অভিযোগপত্রের ওপর শুনানি হবে। 
আদালত পরিদর্শক মো. গোলাম জিলানী বলেন, এদিন সোনাগাজী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক) মাকসুদ আলমের পক্ষে আদালতে জামিন আবেদন করেন আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু। কিন্তু এ আদালতে এ ধরনের মামলায় জামিন দেওয়ার এখতিয়ার নেই বলে আদেশ দেন বিচারক। তিনি ১০ জুন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে জামিনের আবেদন করার পরামর্শ দেন। বাদীর নিরাপত্তা সম্পর্কে জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আদালতে আসামিরা হট্টগোল করেছে, শুনেছি। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। তবে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ধরনের শঙ্কা নেই। নুসরাতের পরিবারকে ঘটনার দিন থেকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, নুসরাতের পরিবার এখন পাবলিক প্রোপারটি। পুলিশের পাশাপাশি জনগণই তাদের নিরাপত্তা দেবে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এটি তদারকি করছেন। তাছাড়া আমি যতদিন ফেনীতে আছি, কোনো ধরনের নিরাপত্তা শঙ্কা থাকবে না। নুসরাতের পরিবারকে সর্বাত্মক নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
মামলা নারী নির্যাতন ট্রাইবুনালে : নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার মামলা অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে হস্তান্তর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ফেনীর সোনাগাজী আমলী আদালতের বিচারক জাকির হোসেন এ মামলার পরবর্তী তারিখ ঠিক করে দিয়েছেন ১০ জুন। সেদিনই আলোচিত এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ট্রাইবুনালে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু।
শাহজাহান সাজু বলেন, ‘ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম থেকে হত্যার ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচারণা চালান। কিন্তু তাকে আসামি করা হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘অভিযোগপত্রের শুনানির দিন আইনজীবীরা পিবিআই’র কাছে জানতে চাইবেন কেন তাকে আসামি করা হয়নি। প্রয়োজনে মামলার বাদী নুসরাতের ভাই নোমানের সঙ্গে আলাপ করে অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি জানানো হবে।’ 
ওসি মোয়াজ্জেমের জামিন ঠেকাতে প্রস্তুত রাষ্ট্রপক্ষ : ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানি ঘটনার ভিডিও ধারণ এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে আইসিটি আইনে দায়ের করা মামলায় সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন ঠেকাতে প্রস্তুত আছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) মাহবুবে আলম এ কথা জানান। বৃহস্পতিবার তিনি নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেনের আগাম জামিন আবেদনের বিরোধিতা করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। জামিনের বিরোধিতার ব্যাপারে আমার অফিসের (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) যারা আছেন, তারা প্রস্তুত। খুব শক্ত হাতে এটার (জামিন আবেদনটি) বিরোধিতা করা হবে। নুসরাত হত্যা মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট হয়েছে, এটা বুধবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করেছে। একজন পুলিশ অফিসার (সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম) যিনি নাকি এগুলো ভিডিও করেছেন। এটা গর্হিত অপরাধ। নুসরাতের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তাকেও (সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম) মূল মামলায় আসামি করার জন্য। সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমকে মামলায় আসামি করার তদন্ত কর্মকর্তার আওতাধীন। মোয়াজ্জেম যাতে জামিন না পায়, আমরা খুব জোরেশোরেই সে চেষ্টা করব। ১১, ১২ ও ১৩ জুন মোট তিন দিন হাইকোর্টের বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের বেঞ্চ বসবেন। তখন জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে। আগাম জামিন চেয়ে বুধবার হাইকোর্টে আবেদন করেন আসামি মোয়াজ্জেম হোসেন। মোয়াজ্জেমের পক্ষে আবেদনটি দায়ের করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সালমা সুলতানা।