দক্ষিণ আফ্রিকার মার্করামকে বিদায়ের পর পেসার জফরা আর্চারের সঙ্গে উল্লাসে মেতেছেন জ্যাসন রয়। গতির ঝড় তোলা জফরা ২৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের জয়ের ভিত গড়ে দেন। বৃহস্পতিবার ওভালে ষ ক্রিকইনফো
বড় জয় দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করল এবারের আসরের হট ফেবারিট ইংল্যান্ড। বেন স্টোকসের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০৪ রানের ব্যবধানে হারায় স্বাগতিকরা। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে চার ব্যাটসম্যানের ফিফটিতে ভর করে ৮ উইকেটে ৩১১ রান করে ইংল্যান্ড। জবাবে জফরা আর্চার, লিয়াম প্লাঙ্কেট ও বেন স্টোকসের বোলিং তোপে ৩৯.৫ ওভারে ২০৭ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
স্বাগতিকদের বিশাল সংগ্রহের জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ছিল সাবধানী। অতিরিক্ত সাবধানী হতে গিয়ে তারা বিপদও ডেকে আনে চতুর্থ ওভারে। পেসার জোফরা আর্চারের গতির কাছেই পরাস্ত হন প্রোটিয়া ওপেনার হাশিম আমলা! আর্চারের বাউন্সার গিয়ে আঘাত হেনে বসে আমলার হেলমেটের গ্রিলে। ওই আঘাতে অস্বস্তিতে ভোগায় বাধ্য হয়েই রিটায়ার্ড হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। আমলার বদলে নামা এইডেন মার্করামও (১১) ফাঁদে পড়েন আর্চারের! বাড়তি বাউন্সের বাইরের বলে লোভনীয় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন সিøপে দাঁড়িয়ে থাকা জো রুটের হাতে। ১ ওভার বিরতি দিয়ে বল করতে এসে দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিসের (৫) উইকেটটিও তুলে নেন আর্চার। পুল করতে করতে গিয়ে ফাইন লেগে মঈন আলীর তালুবন্দি হন ডু প্লেসিস। চতুর্থ উইকেটে ৮৫ রানের জুটি গড়ে দলকে টেনে তোলার রাসি ফন ডার ডুসেন ও কুইন্টন ডি কক। এ জুটি ভেঙ্গে ইংল্যান্ডকে ব্রেক থ্রু এনে দেন লিয়াম প্লাঙ্কেট। দলীয় ১২৯ রানের মাথায় প্লাঙ্কেটকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি সীমানায় রুটের ক্যাচে পরিণত হন ডি কক। সাজঘরে ফেরার আগে ৭৪ বলে ৬টি চার ও দুই ছয়ে ৬৮ রান করেন প্রোটিয়া ওপেনার। এরপর রাসি ফন ডার ডুসেন ছাড়া কেউই বুক চিতিয়ে ব্যাট করতে পারেননি। দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬১ বলে ৫০ রান করেন ডুসেন। অন্যরা ছিলেন উইকেটে আসা-যাওয়ায়।
রিটায়ার্ড হার্ট থেকে ফিরে আসা আমলাও সুবিধা করতে পারেননি। ব্যক্তিগত ১৩ রানে প্লাঙ্কেটের দ্বিতীয় শিকার হন। অপর ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ফেহলুকায়ো ২৪ ও কাগিসো রাবাদা ১১ রান করেন।
২৭ রানে ৩ উইকেট নেন জফরা আর্চার। আর লিয়াম প্লাঙ্কেট ও স্টোকস প্রত্যেকেই পেয়েছেন ২টি করে উইকেট। ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ সংগ্রহ, ২ উইকেটের সঙ্গে ২ ক্যাচ নিয়ে দুর্দান্ত ফিল্ডিং করা বেন স্টোকস ম্যাচ সেরা হন।
এর আগে কেনিংটন ওভালে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি ইংল্যান্ডের। ইনিংসের প্রখম ওভারেই ফিরে যান জনি বেয়ারস্টো। রানের খাতা খোলার আগেই ইমরান তাহিরের করা ওভারের দ্বিতীয় বলে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসবন্দি হন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম স্পিনার হিসেবে উদ্বোধনী ম্যাচের প্রথম ওভারে বল করেন ইমরান তাহির। বেয়ারস্টো ফিরে যাওয়ার পর জেসন রয় ও জো রুটের হাফসেঞ্চুরিতে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় উইকেটে ১০৬ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটসম্যান। এবারের বিশ্বকাপে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্যক্তিগত অর্ধশত পূরণ করেন রয়। ৫১ বলে হাফসেঞ্চুরি করার পর ৫৩ বলে ৫৪ রান করে আউট হন তিনি। ১৯তম ওভারে আন্দিল ফেহলুকায়োর বলে ফাফ ডু প্লেসিসের হাতে ক্যাচ হন তিনি। এর পরের ওভারেই ফিরে যান রুট। কাগিসো রাবাদার বলে ডুমিনির হাতে ধরা পড়ার আগে ৫৯ বলে ৫১ করেন রুট। এ দুই সেট ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যাওয়ার পর চতুর্থ উইকেটে ১০৬ রানের জুটি গড়েন বেন স্টোকস ও অধিনায়ক ইয়ন মর্গান। ৩৭তম ওভারে তাহিরের বলে মার্করামের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন মর্গান। এ ম্যাচে ৭ হাজার রানের মাইলফলক পূরণ করা ইংলিশ অধিনায়ক ৬০ বল খেলে ৪টি চার ও তিন ছয়ে ৫৭ রানে আউট হয়ে গেলেও ইনিংস লম্বা করেন স্টোকস। দলকে ৩০০ পার করিয়ে ৪৯তম ওভারে এনগিদির বলে আমলাকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন স্টোকস। ৭৯ বলে ৯ বাউন্ডারিতে ৮৯ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন এ অলরাউন্ডার। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বাধিক ৩ উইকেট নিয়েছেন লুঙ্গি এনগিদি। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন ইমরান তাহির ও কাগিসো রাবাদা।