যে আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেন। আর ক্ষমাকারী বান্দার মর্যাদা আল্লাহ বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ বলেনÑ ‘তারা যেন ক্ষমা করে ও দোষত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করে দেন?’ (সূরা নুর : ২২)। ইবনে কাসির (রহ.) বলেনÑ ‘কাজের ধরন হিসেবেই তার প্রতিফল নির্ধারিত হয়। যেমন তুমি তোমার সঙ্গে অপরাধকারীকে ক্ষমা ও মার্জনা করবে, আমিও তোমাকে ক্ষমা ও মার্জনা করে দেব।’
যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালোবাসে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ভালোবাসেন। কেউ যদি তার ভাইয়ের জন্য তার পেছনে দোয়া করে, তখন তার জন্য নিযুক্ত ফেরেশতা বলেন, ‘আমিন, তোমার জন্যও তার অনুরূপ।’ বৈঠকের স্থান প্রশস্ত করে দেওয়ার প্রতিদান এর অনুরূপ। আল্লাহ বলেনÑ ‘হে ঈমানদাররা! যখন তোমাদের বলা হয়, মজলিসে স্থান প্রশস্ত করে দাও, তখন তোমরা প্রশস্ত করে দিও, আল্লাহ তোমাদের জন্য স্থান প্রশস্ত করে দেবেন।’ (সূরা মুজাদালা : ১১)।
যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের অনুরোধে তার সঙ্গে সম্পাদিত ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি বাতিল করার সুযোগ দেবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার ত্রুটিবিচ্যুতি মাফ করে দেবেন।
আল্লাহ বান্দার জন্য তেমন হবেন, যেমন সে তার মুসলিম ভাইদের জন্য হবে। রাসুল (সা.) বলেনÑ ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের কোনো প্রয়োজন পূরণ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন মেটাবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের বিপদে দূর করবে, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তার বিপদ দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষত্রুটি গোপন রাখবে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তার দোষত্রুটি লুকিয়ে রাখবেন।’ (বোখারি ও মুসলিম)। কোনো অভাবীর কষ্ট যে ব্যক্তি সহজ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহ তাকে সহজ করে দেবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তার বান্দাকে সহায়তা করতে থাকেন, যতক্ষণ সে তার কোনো ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে।’ (মুসলিম)।
সৃষ্টির কাউকে কোনো বিষয়ে ছাড় দিলে, আল্লাহ তাকে ছাড় দেন। যে ব্যক্তি কোনো দাস মুক্ত করবে, আল্লাহ সেই দাসের প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে তার অঙ্গ মুক্ত করবেন। যে ব্যক্তি পরিশোধ করার সদিচ্ছা নিয়ে মানুষের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করল, আল্লাহ তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেবেন। আল্লাহ যা দিয়েছেন তা নিয়েই যে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, আল্লাহ তাকে স্বাবলম্বী করেন এবং তিনি তার জন্য যথেষ্ট। রাসুল (সা.) বলেনÑ ‘আর যে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে স্বাবলম্বী করেন।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
বান্দা যদি হারাম ও হাত পাতা থেকে বেঁচে থাকে, আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখেন। রাসুল (সা.) বলেনÑ ‘নিশ্চয়ই যে নিজেকে চাওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখে, আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখেন।’ (বোখারি ও মুসলিম)। কেউ অপরের সঙ্গে কোমল আচরণ করলে আল্লাহও তার সঙ্গে কোমল আচরণ করেন। রাসুল (সা.) বলেনÑ ‘হে আল্লাহ! যে আমার উম্মতের কোনো কাজের দায়িত্ব পেয়ে তাদের সঙ্গে কোমল আচরণ করে, তুমি তাদের প্রতি সদয় হও।’ (মুসলিম)।
কল্যাণ কল্যাণ বয়ে আনে, বিপরীতে মন্দ টেনে আনে মন্দ। অসৎকাজের প্রতিদান সমপরিমাণ। আল্লাহ বলেনÑ ‘তোমরা যা করতে তারই প্রতিফল পাবে।’ (সূরা সাফফাত : ৩৯)।
যার হৃদয় সত্য গ্রহণে অন্ধ, হাশরের দিন আল্লাহ তার দৃষ্টিশক্তি অন্ধ করে দেবেন। আল্লাহ বলেনÑ ‘যে ইহকালে অন্ধ সে পরকালেও অন্ধ ও অধিকতর পথভ্রষ্ট।’ (সূরা ইসরা : ৭২)। সত্য জানার পরও যে ব্যক্তি তা থেকে বিমুখ হবে, আল্লাহ তার হৃদয়কে হেদায়েত থেকে বিমুখ করে দেবেন এবং তাকে সংশয় ও অপদস্থতায় বাস করাবেন। আল্লাহ বলেনÑ ‘তারা যখন বক্র পথ অবলম্বন করল, তখন আল্লাহ তাদের হৃদয়কে বক্র করে দিলেন।’ (সূরা সফ : ৫)। যে কল্যাণ ও দ্বীন থেকে বিমুখ হবে ঈমান ও কল্যাণ ছিনিয়ে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। আল্লাহ বলেনÑ ‘আর যখনই কোনো সূরা নাজিল হয়, তখন তারা একে অপরের দিকে তাকায় এবং জিজ্ঞেস করেÑ তোমাদের কেউ লক্ষ্য করেছে কি? তারপর তারা সরে পড়ে। আল্লাহ তাদের হৃদয়কে সত্যবিমুখ করে দেন; কারণ তারা এমন সম্প্রদায় যারা বোঝে না।’ (সূরা তওবা : ১২৭)। যে ব্যক্তি আনুগত্য ছেড়ে দেয় এবং তা ইচ্ছাকৃত ভুলতে চায়, আল্লাহ তাকে অপদস্থ করেন এবং তাকে তার নিজের বিষয় ভুলিয়ে দেয় এবং তাকে শাস্তিতে নিপতিত করেন। আল্লাহ বলেনÑ ‘তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, সুতরাং তিনিও তাদের পরিত্যাগ করেছেন।’ (সূরা তওবা : ৬৭)।
অন্তর বিনষ্ট হওয়ার শাস্তি আরও ভয়ানক। আল্লাহ বলেনÑ ‘তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যাধি, ফলে আল্লাহ তাদের ব্যাধিকে আরও বাড়িয়ে দেন।’ (সূরা বাকারা : ১০)।
যে ব্যক্তি তার দৃষ্টিকে দ্বীন থেকে আড়াল রাখবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাকে দেখা থেকে বিরত রাখবেন। আল্লাহ বলেনÑ ‘কখনও নয়! সেদিন তারা তাদের রব থেকে আড়ালে থাকবে।’ (সূরা মুতাফফিফিন : ১৫)। যে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে মানুষের সন্তুষ্টি চায়, আল্লাহ তার ওপর অসন্তুষ্ট হন এবং মানুষের মধ্যে তার অসন্তোষ তৈরি করে দেন। যে আল্লাহর সাক্ষাৎ অপছন্দ করে আল্লাহও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন। আর যে দ্বীনি বিষয়ে চক্রান্ত, ধোঁকা ও কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়, আল্লাহ তাকে সুযোগ দেন, অতঃপর হঠাৎ তাকে ধরেন। আল্লাহ বলেনÑ ‘আর তারা কূটকৌশল করেছিল, আল্লাহও কৌশল করেছিলেন, আর আল্লাহ শ্রেষ্ঠতম কৌশলী।’ (সূরা আলে ইমরান : ৫৪)। তিনি আরও বলেনÑ ‘তারা আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে, বস্তুত তিনি তাদের ধোঁকায় ফেলেন।’ (সূরা নিসা : ১৪২)। যে ব্যক্তি নামাজের প্রথম কাতারে যেতে বিলম্ব করবে, আল্লাহ তাকে পেছনে রাখবেন। রাসুল (সা.) বলেনÑ ‘অনেকেই বিলম্ব করতে থাকে, আল্লাহ তাদের নিজ রহমত থেকে দূরে রাখবেন।’ (মুসলিম)। যে দুনিয়ায় সিজদা থেকে বিরত থাকবে, কেয়ামতের দিন তাকে সিজদা থেকে বিরত রাখা হবে। আল্লাহ বলেনÑ ‘স্মরণ করুন সেদিনের কথা, যেদিন পায়ের গোছা উন্মোচিত করা হবে, সেদিন তাদের সিজদা করার জন্য ডাকা হবে; কিন্তু তারা সক্ষম হবে না; তাদের দৃষ্টি অবনত হবে, অপদস্থতা তাদের আচ্ছন্ন করবে। অথচ যখন তারা সুস্থ নিরাপদ ছিল, তখন তো তাদের ডাকা হতো সিজদা করতে।’ (সূরা কলম : ৪২-৪৩)।
অহংকার হচ্ছে সত্য উপেক্ষা করা এবং মাখলুকের ওপর বড়ত্ব দেখানো। অহংকারকারীদের কেয়ামতের দিন অণুর মতো করে উপস্থিত করা হবে, মানুষ তাদের পা দিয়ে পদদলিত করবে। যে মিথ্যা কিছু ছড়াবে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার চোয়াল চিরে গর্দানের পেছন পর্যন্ত নিয়ে আসবেন। (বোখারি)।
মসজিদে নববিতে প্রদত্ত খুতবার
সংক্ষিপ্ত অনুবাদ মুহিউদ্দীন ফারুকী