‘র্যাগ ডে’ ব্যাপারটা হলো মূলত এক ধরনের ফান্ড রেইজিং প্রোগ্রাম। গত শতাব্দীর শুরুর দিকে ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এটি শুরু হয়। চ্যারিটির জন্যই মূলত এ ফান্ড কালেকশন। যতক্ষণ পর্যন্ত পথচারী কেউ ডোনেশন না করত, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে টিজ তথা র্যাগ করে দান করতে বাধ্য করত বলেই এ দিনকে র্যাগ ডে বলার চল শুরু হয়।
এ কাজটা কখনও কখনও বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায় বলে এটা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ খোদ ইংল্যান্ডেও নানা নজরদারি করত। পশ্চিমা দুনিয়ার এ ফসল সাবেক কলোনি রাষ্ট্রগুলোতে এসে উগ্র মেলামেশাসহ আরও নানা অশ্লীল কার্যকলাপে বদলে যায়। সেখানে ফান্ড রেইজিং বা চ্যারিটির অস্তিত্ব নেই। মানে ভালোর বদলে মন্দ দিকটাই আরও পোক্ত করে এখানে রয়ে যায়।
র্যাগ ডে’র নামে হিন্দি গান বাজিয়ে টি-শার্ট পরে ছেলেমেয়ের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, নাচগান, রং মাখামাখির সঙ্গে আবহমান বাংলার মুসলমানের, এমনকি বাঙালি, হিন্দু, বৌদ্ধের যে সুদীর্ঘকালের সামাজিক চরিত্র তার কোনো মিল নেই।
বাঙালির যে মূল্যবোধ, তা গড়ে উঠেছে সম্ভ্রমের ওপর ভর করে। দেশে র্যাগ ডে বলে যা আছে, তা মূলত শত শত বছরে গড়ে ওঠা সেই মূল্যবোধের বিপরীত।
এমনকি শিক্ষা সমাপনীকে এভাবে উদযাপনের রীতিও বাঙালির নয়। প্রাচীন বাংলায় ছাত্ররা যখন ‘দ্বাদশবর্ষ গুরুগৃহে শিক্ষা সমাপনের’ অর্থাৎ স্নাতক শেষ করে বেরুত, তখন সেই সময়টা তাদের কাছে শোকাবহই ছিল। তারা এ সময়ে গুরুদক্ষিণা দিত এবং বিনয়ের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে ফিরত। ফলে এ র্যাগ ডে আমাদের দেশে যেভাবে উদযাপিত হয়, তা তো পুরোপুরিই একটা বিজাতীয় অশ্লীল সংস্কৃতি।
সেটা নিয়ে কিন্তু কোনো প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন নেই অন্যসব যাবতীয় নষ্টামি নিয়েও। র্যাগ ডে’তে যা হয়, তা তো এমনিতেই ইসলামের রীতিবিরুদ্ধ। ফলে ইসলামের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। এমনকি আরবের জাতিগত পোশাকও ইসলামের করা কোনো ম্যান্ডান্টরি ড্রেসকোড নয়। কিন্তু ইসলামের, মুসলমানের দূরতম কোনো চিহ্ন দেখলেও এ ভেকধারী সেক্যুলারদের গাত্রদাহ শুরু হয়। তাই কুয়েটের র্যাগ ডে’তে স্রেফ জোব্বা পরায় বঙ্গীয় ভেকধারী সেক্যুলারদের এত শঙ্কা, এত উদ্বেগ, এত ভয়। ভয়ের কারণ একটাইÑ এটা মুসলমান পরে। তারা ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে যে ক্রুসেডীয় চিন্তা লালন করে, প্রচার করে, এর মধ্য দিয়ে আদতে তারা চায় ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করতে। ফলে তারা ঘৃণা ছড়ায় মুসলমানের পোশাক, মুসলমানের রীতিনীতি, যা কিছু আছে এর সবকিছুর প্রতি।
এই যে এখানকার তরুণরা সেই বলয় ভাঙছে। এর মধ্য দিয়ে তাদের ঘৃণার প্রজেক্ট ফেল করছে। সেই ভয়েই পশ্চিমা দুনিয়ার ইসলামোফোবিক এজেন্ডার কোতুয়ালগিরি করা সাম্রাজ্যবাদীদের এদেশীয় তাঁবেদার দালালরা সক্রিয় হয়েছে।
পোশাকের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর এ রাজনীতিটা তো নতুন নয়। নরেন্দ্র মোদির ‘পোশাক দেখেই’ দুষ্কৃতকারী নির্ণয়ের ফর্মুলাটা দেখুন। নানা ভেদাভেদ করে আর ঘৃণা ছড়িয়ে দুনিয়ার নানা প্রান্তরে সংঘাত চাপিয়ে দিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যার এসব কারিগর, সাম্রাজ্যবাদীদের এসব দালাল, ঘৃণ্যবাদী এসব ফ্যাসিস্টকে চেনাটা আমাদের জন্য মানবতার স্বার্থেই জরুরি। থ্যাংক ইউ কুয়েট, থ্যাংক ইউ ব্রাদার্স।