‘ইন্টিগ্রেটেড অ্যাসেসমেন্ট ফর দ্য বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ শীর্ষক সেমিনারে বলা হয় ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন না হলে ২০২৭ সালের মধ্যে অতি দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা সম্ভব নয়
ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন না হলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কমবে বছরে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে সঠিকভাবে যদি দীর্ঘমেয়াদি এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয় তাহলে ১ দশমিক ৫ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন ‘ইন্টিগ্রেটেড অ্যাসেসমেন্ট ফর দ্য বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ শীর্ষক সেমিনারের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের আয়োজনে পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মনসুর রহমান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন না হলে ২০২৭ সালের মধ্যে অতি দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা সম্ভব নয়। দেশের ১৩৯টি বাঁধ সংরক্ষণের অভাবে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। যদি এসব বাঁধ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় তাহলে মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বন্যা ও উপকূলীয় অঞ্চল লবণাক্ততা মুক্ত রাখা সম্ভব হবে। তবে এ ক্ষেত্রে উপকূলীয় অঞ্চলের বাঁধগুলো আরও ৪ মিটার উঁচু করতে হবে; যেগুলো সংস্কারের অভাবে এখন ২ থেকে আড়াই মিটার হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষা করতে হলে বনায়নের মাধ্যমে সি-ওয়াল তৈরি করতে হবে। এতে ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আর যে কোনোভাবেই হোক সবুজ বেষ্টনী তৈরি করতে হবে। এছাড়া খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের বাঁধ সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় সøুইস গেট তৈরি করতে হবে। নীতি ও বিজ্ঞানের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।
জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘সুন্দরবন রক্ষা করতে হবে। এতে ঘূর্ণিঝড় প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষায় বাঁধ সংস্কারের বিকল্প নেই। যদিও ব্যয়বহুল বিষয়। তারপরও এর বিকল্প কিছু নেই। সাইক্লোন সেল্টারের মাস্টার প্ল্যান তৈরি হচ্ছে। মানুষের জীবন রক্ষায় এসব সেল্টারের সংস্কার জরুরি।’
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে যেভাবে ধাপে ধাপে পরিকল্পনা রয়েছে তা সোভিয়েতরাও করতে পারেনি। যে কোনো পরিকল্পনাই করা হোক না কেন, তার মূলেই রয়েছে বাংলাদেশের উন্নয়ন। শতবছরের এ পরিকল্পনা হচ্ছে একটি আমব্রেলা প্রকল্প। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে এডিপি বাস্তবায়নের মাধ্যমে। প্রকল্প ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও মেধাকে কাজে লাগাতে হবে। এটা আবেগের বিষয় নয়।
ড. শামসুল আলম বলেন, ‘ডেল্টা প্ল্যানের প্রথম ধাপে ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২১টি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এক হাজার ৫৬৪টি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে ২৪৬টিই হচ্ছে ডেল্টা প্ল্যান সংশ্লিষ্ট। এগুলোতে বরাদ্দ রয়েছে এডিপির শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ। ৮০টি প্রকল্পের মধ্যে গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পটি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।