ফিলিস্তিনের কাছে ০-২ গোলে হেরে ষষ্ঠ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ মিশন শুরু করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ; টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের কাছে হারটা প্রত্যাশার হলেও বুধবার ম্যাচ শেষে অন্ধকার মুখে গণমাধ্যমপর্বে এসেছিলেন ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে, তার অধীনে লাল-সবুজ দল আগেও হেরেছে, কিন্তু এমন হতাশ জেমিকে কখনও হতে দেখা যায়নি! দলের এমন নৈপুণ্যে কোনো কোচ হতাশ না হয়ে থাকতে পারেন? এ ম্যাচে ভুলের দায় শোধ করতে হয়েছেÑ মনে করেন ব্রিটিশম্যান।
তবে ২০১৮ আসরের চেয়ে ফিলিস্তিনের বর্তমান দলটি খর্বশক্তিরই; মাঠের নৈপুণ্যেও মন জয় করতে পারেনি দর্শকদের। তারপরও স্বাগতিকদের ২-০ গোলে হারাতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি ফিলিস্তিনিদের। বল পজিশনে তুলনামূলক এগিয়ে থাকলেও গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ জেমি ডে শিষ্যরা; ছিল কিছু ভুলও। ফিলিস্তিনের মতো দলের বিপক্ষে ভুল করলে মাশুল দিতে হবেই; কারণ মান বিচারে তারা যোজন দূরত্ব এগিয়ে, ঘরোয়া ফুটবলের মানও অনেক উন্নত।
সব কিছু মিলিয়ে ফিলিস্তিনকে এগিয়ে রাখলেও ‘হারানো সম্ভব’ মনে করেছিলেন জেমি ডে! কারণ, মূল জাতীয় দল আসেনি এবার! তারপরও দুই বছর আগের মতোই দুই গোলে হার। হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও স্বাগতিকদের সেমিফাইনাল স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়নি। জামালদের চোখ থাকবে আজ ফিলিস্তিন-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের প্রতি। জেমি শিষ্যরা কায়মনে প্রার্থনা করবে লঙ্কানদের হার, এবং সেটা যেন দুই গোলের বেশি ব্যবধানে হয়। তাতে রবিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হার এড়াতে পারলেই গোলগড়ে শেষ চারে পা রাখবে বাংলাদেশ। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা ১-০ বা ২-০ গোলে জিতলে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ হবে ‘ডু অর ডাই’।
এ অবস্থায় স্বাগতিক ফুটবলাররা কতটা প্রস্তুত চ্যালেঞ্জ নিতে? ফিলিস্তিনের কাছে হারের পর বৃহস্পতিবার অনুশীলন করেননি ফুটবলাররা, ক্লান্তির ধকল কাটাতে হোটেলে সুইমিং করেছেন।
সমালোচনা হয়েছে গোল দুটি হজম নিয়ে, দুটিই রক্ষণের ভুলে। দুই উইং দিয়ে পর্যাপ্ত বলের জোগান ছিল না, প্রতি আক্রমণে গিয়ে নিচে নামতে না পারার ব্যর্থতা ছিল, রক্ষণভাগের অগোছাল ফুটবল ক্ষতি করেছে। তবে এসব বিষয় নিয়ে কেউ কাউকে দোষ দিতে রাজি না। কোচ জেমির সাফ কথা, প্রতিপক্ষের শক্তি বিবেচনায় রক্ষণাত্মক ছকে খেলেছে বাংলাদেশ। ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল পায়নি।
জাতীয় দলে নির্ভরযোগ্য স্ট্রাইকার নেইÑ দায়িত্ব নেওয়ার পর মাস দুয়েকের মধ্যে সমস্যাটা দেখেছিলেন তিনি। নাবীব নেওয়াজ জীবন না থাকায় গেল ম্যাচে স্ট্রাইকিং পজিশনে খেলেছেন সাদ উদ্দিন; ঘরোয়া ফুটবলে আবাহনীর রাইটব্যাক পজিশনে খেলেন, মতিনের বদলি নামা সুফিলও বসুন্ধরা কিংসে রক্ষণভাগে খেলেন। ফলে জাতীয় দলে স্ট্রাইকার না থাকায় ভুগতে হচ্ছে জাতীয় দলকে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের আগ পর্যন্ত জাতীয় দল বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ৪ ম্যাচে ৮ গোল হজম করেছে, দিয়েছে দুইটি। গেল মাসে নেপাল এসএ গেমসে ৪ ম্যাচে হজম করেছে ৩টি, দিয়েছে ২টি; একটি আবার আত্মঘাতী। সমস্যাটা স্ট্রাইকিং পজিশনে দক্ষ খেলোয়াড়ের অভাব।
ফিলিস্তিন ম্যাচে সহজ সব ভুলের মাশুল দিলেও ফুটবলারদের মধ্যে হতাশাবোধ নেই! দল সূত্রে জানা গেছে, কোচ বৃহস্পতিবার খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথাও বলেননি। ফুটবলাররা নাকি যথারীতি ফেইসবুক নিয়েই সময় কাটিয়েছেন। স্টেডিয়াম পাড়ায় গুঞ্জন, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের পরপরই প্রিমিয়ার লিগ শুরু হবে। ক্লাব ফুটবলে খেলে বড় অঙ্কের পারিশ্রমিক পাচ্ছেন ফুটবলাররা, অর্থ উপার্জনের সহজ মাধ্যম ফুটবলারদের। ইনজুরি হয়ে গেলে মৌসুম-শেষ এমন অবস্থায় ঝুঁকি নেয়া কঠিন। তাই পা বাঁচানো ফুটবল খেলছেন মতিন, রবিউল, মামুনুলরা!