দেখতে দেখতে শেষ হওয়ার সময় হয়ে এসেছে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের। চলতি আসরজুড়ে অন্যতম আলোচিত নাম ইমরুল কায়েস, বলা হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় দলের এই ওপেনার তার ক্যারিয়ারের সেরা বিপিএল মৌসুম শেষ করল। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের অনেকেই এই বিপিএলে ভালো করেছেন, তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ ব্যাটসম্যান। জাতীয় দলে যারা নিয়মিত বল করেন তাদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান সবচেয়ে সফল এই বিপিএলে। তবে ব্যাটসম্যানদের তালিকাটা দীর্ঘ, মুশফিকু র রহিম, লিটন দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, তামিম ইকবালরা আছেন বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় ওপরের দিকে।
মুশফিকুর রহিম : মুশফিকুর রহিম এবারই প্রথম বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ফাইনাল খেলছেন। খুলনার হয়ে দাপুটে ব্যাটিং করেছেন পুরো আসরে। দুটো সেঞ্চুরি অল্পের জন্য মিস করেছেন। তার গড় ৭৮.৩৩। যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অনেক বেশি। স্ট্রাইক রেটও বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানদের গড় স্ট্রাইক রেটের চেয়ে বেশি যেটা ১৫০ ছুঁই ছুঁই। ১৩ ইনিংসে করেছেন ৪৭০ রান।
ইমরুল কায়েস : জাতীয় দলে কখনোই নিয়মিত না হওয়া ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস বিপিএলকে নিজের জন্য একটা প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে নিয়েছেন বলেই জানিয়েছেন। ১৩২ স্ট্রাইক রেটে ৪৯ গড়ে ৪৪২ রান তুলেছেন এই ওপেনার। ৪টি ফিফটি করেছেন তিনি। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে ক্রিস গেইল, লেন্ডল সিমন্স, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের ছাপিয়ে ইমরুল কায়েস হয়েছেন সেরা পারফর্মার।
লিটন দাস : জাতীয় দলে লিটন দাস এখন নিয়মিতই একাদশে জায়গা পান, কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স বিচার করে তার প্রতি নির্বাচকদের যে প্রত্যাশা সেটা পূরণ করতে পারেননি। এবারের বিপিএলেও লিটন দাস ছিলেন অন্যতম দুর্দান্ত পারফর্মার। ১৪ ম্যাচ খেলে তিনি রান তুলেছেন ৪৩০। গড় ৩৩। স্ট্রাইক রেট ১৩৯.২৬। ৪৬টি চার ও ১৪টি ছক্কা মারা লিটন দাস ৩টি ফিফটিও হাঁকিয়েছেন।
বোলিংয়ের সেরাদের তালিকায় বেশিরভাগ সফলরাই বাংলাদেশের। মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, মেহেদী হাসান রানা, শহীদুল ইসলাম, এবাদত হোসেনরাই এই তালিকায় আছেন। এবার যে বিষয়টা লক্ষ্য করা গেছে সেটা হলো স্পিন
বোলারদের চেয়ে পেস বোলাররাই বেশি সফল।
মোস্তাফিজুর রহমান : এবারের বিপিএলে মোস্তাফিজুর রহমানের শুরুটা ভালো না হলেও ধীরে ধীরে নিজেকে শ্রেয়তর একটা জায়গায় নিয়ে এসেছেন তিনি। ১২ ম্যাচে ৩১২ রান দিয়ে ২০টি উইকেট নিয়েছেন এই ফাস্টবোলার। তার বোলিং গড় ছিল ১৫.৬০। ইকোনমি রেট ৭।
রুবেল হোসেন : রুবেল ও মোস্তাফিজ এ বিপিএলের ফাইনালের আগ পর্যন্ত যৌথভাবে সর্বোচ্চ (২০) উইকেট শিকারি। রুবেলের ইকোনমি রেট ৭.৩১। তিনি রান দিয়েছেন ৩৫৭। রুবেল হোসেনের গড় ১৭.৮৫। রুবেল হোসেন এবার নিয়মিত টপ অর্ডারের উইকেট নিয়েছেন এবং আগের চেয়ে বেশ কম খরচে বোলিং করেছেন।
মেহেদী হাসান রানা : মেহেদী হাসান রানাকে ক্রিকেট বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের আসরের বিস্ময়। ১০ ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়েছেন এই পেস বোলার। বোলিং গড় ১৮.৮৯। একটি ম্যাচে ২৩ রান দিয়ে চারটি উইকেটও নিয়েছেন তিনি। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের কোয়ালিফায়ার পর্যন্ত পথচলায় ইমরুল কায়েসের পাশাপাশি এই পেস বোলারেরও অবদান ছিল। যদিও শেষ ম্যাচে ৪ ওভারে ৪৭ রান দিয়েছেন যেখানে হেরে গিয়ে ফাইনালে উঠতে পারেনি রানার দল। এছাড়াও বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে অন্যতম পারফর্মার ছিলেন সৌম্য সরকার, যিনি ১২ ম্যাচে ৩৩১ রানের পাশাপাশি ১২টি উইকেটও নিয়েছেন।
ইনজুরির কারণে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তুলনামূলক কম ম্যাচ খেলতে পেরেছেন। এই বিপিএলে ১৭০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করে ৭ ম্যাচে তার সংগ্রহ ২০১ রান। কিন্তু তার পরিসংখ্যান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে মানানসই। স্ট্রাইক রেট ১৭০, গড় ৪০। এছাড়া চমক দেখিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, যিনি এক ইনিংসে এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ রান নেওয়া ব্যাটসম্যান। ৫৭ বলে করেছেন অপরাজিত ১১৫ রান যা কোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটারের বিপিএলের এবারের একমাত্র সেঞ্চুরি।
কে হতে পারেন ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট?
২০১১-১২ মৌসুমে শুরু হয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। এবারের আসরের আগে আয়োজিত হয় মোট ছয়টি আসর। ছয়টি আসরের মধ্যে তিনবারই বিপিএলের টুর্নামেন্ট সেরা ক্রিকেটার হন সাকিব আল হাসান। প্রতি আসরেই তিনি ব্যাট ও বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছেন। চলতি মৌসুমে অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বিচারে সাকিবের অনুরূপ পারফর্ম করেছেন সৌম্য সরকার। কিন্তু তার দল শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে টিকেনি।
সেদিক থেকে বিচার করলে মুশফিকুর রহিম, লিটন দাসদের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, কারণ এই দুজনের দলই ফাইনাল খেলছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গেম ডেভেলপমেন্টের সাবেক ন্যাশনাল ম্যানেজার নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, বিপিএলের এই আসর জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটার ও যারা জাতীয় দলে খেলেন না তাদের জন্য একটা বড় সুযোগ ছিল। এই বিপিএলে আন্তর্জাতিক বড় নাম আগের আসরগুলোর তুলনায় কম ছিল। তাই এখানে নিজেদের মেলে ধরতে পেরেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।