কারণে-অকারণে শিশু-কিশোরদের হাতে মোবাইল তুলে দেব না। এক সময় আসবে ওরা এতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে, তখন চাইলেও তাদের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিতে পারব না। তখন শিশু-কিশোররা নানারকম পর্নগ্রাফি, নেট জঙ্গিবাদ, আত্মহত্যা বিষয়ে প্রচারণা দেয়Ñ এমন সব সাইট তথা সাইবার প্রযুক্তিতে আসক্ত হয়ে পড়ে। তখন হাজারো নসিহত, পরামর্শ, উপদেশ আর কাজে আসে না
লেখাটি সবার জন্যই হতে পারত। কিন্তু ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের এক জরিপ প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে বাংলাদেশের ৬৮ শতাংশ নারী সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রযুক্তি ব্যবহারের সঙ্গে সমান্তরাল হারে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। মিথ্যা সংবাদ, গুজব, উগ্রবাদ, গ্যাংকালচার, আত্মহত্যা, পর্নোগ্রাফি, সাইবার বুলিংÑ এসবই এখন সাইবার অপরাধের সামগ্রী। আর এ অপরাধের প্রধান শিকার আমাদের শিশু-কিশোর এবং নারী সমাজ।
বাস্তবিক অর্থে আমরা কখনও প্রযুক্তির বিরুদ্ধে বলতে পারি না। কারণ আধুনিক এ দুনিয়ায় প্রযুক্তি ছাড়া তো আমরা বাস করতে পারব না। প্রযুক্তি নিজে স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ। মানুষের ক্ষমতাকে প্রযুক্তি সীমাহীন গুণে বাড়িয়ে দিতে পারে, দিয়েছেও, এখনও দিয়েই চলেছে। প্রযুক্তির কোনো দোষ নেই। দোষ তো আমাদের। প্রযুক্তিকে আমি ভালো কাজেও ব্যবহার করতে পারি, মন্দ কাজেও ব্যবহার করতে পারি। যখন ভালো কাজে ব্যবহার করি, তখন প্রযুক্তি শতগুণ ভালো, আর যখন মন্দকাজে কেউ তা ব্যবহার করে, তখন প্রযুক্তি শতগুণ মন্দ হয়ে দেখা দেয়। যখন শতগুণ মন্দ হয় প্রযুক্তি, তখন আমাদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটে। এ অবক্ষয়ের প্রধান শিকার হয় আমাদের শিশু-কিশোর, বিশেষ করে মেয়েরা।
আজ তাই প্রযুক্তির বিরুদ্ধে কথা উঠছে। কথা উঠছে প্রযুক্তির জনকদের কাছ থেকেই। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর এক প্রতিবেদনে বলেছে, মানবাধিকারের জন্য ‘ফেইসবুক ও গুগল’ এক ভয়াবহ হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। তারা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মানবজাতি এখন একটা ফাঁদের মধ্যে পড়েছে’। এ বছর ১৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেশন ট্রেড কমিশন ফেইসবুক কর্তৃপক্ষকে ৫০০ কোটি ডলার জরিমানাও করেছিল। অভিযোগÑ ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ তার ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছে। ফেইসবুক হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তার বিরুদ্ধে চড়াও হয়েছে এখন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নীতিনির্ধারকরাই।
মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াক ওয়াশিংটনে এক সাক্ষাৎকারে সবাইকে পরামর্শ দিয়েছেন, ‘কীভাবে ফেইসবুক ছাড়া যায় তা খুঁজে দেখতে।’ তিনি দুঃখ করে বলেছেন, ‘ফেইসবুকে মানুষ তার জীবনের সবকিছুই এখন দিয়ে দিচ্ছে। মানুষ মনে করে, এসব সাইটে তাদের প্রাইভেসি আছে।’ (দৈনিক ইত্তেফাক, ১২ জুলাই ২০১৯)। আসলে এখানে কোনো প্রাইভেসি নেই।
ইউনিসেফ এবং শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতাবিষয়ক জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি (এসআরএসজি) প্রকাশিত এক জরিপে অংশগ্রহণকারী তিন-চতুর্থাংশ মানুষ বলেছিলেন, ‘ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অনলাইন উৎপীড়নের সবচেয়ে পরিচিত স্থান। এদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের একজন সাইবার নিপীড়নের কারণে স্কুল বাদ দেওয়ার কথা জানিয়েছিল।’ (প্রথম আলো, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯)।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, সাইবার অপরাধ এখন আমাদের স্কুলে ঢুকে গেছে। এ অপরাধ স্কুল থেকে আমাদের শিশু-কিশোরদের বের করে নিয়ে যাচ্ছে। ‘হে আমাদের শিশু-কিশোর ছেলেমেয়েরা, সাবধান।’ সাবধান না হলে আমরা যে কেউ এ সর্বনাশে পড়ে যেতে পারি। এক জরিপ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ শিশু ১১ বছর বয়সের আগেই ইন্টারনেট বিশ্বে যুক্ত হয়ে যায়। এ দেশের প্রায় ৬৩ শতাংশ ছেলেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে, আর মেয়েরা এক্ষেত্রে ৪৮ শতাংশ। এ দেশের ৩৭ শতাংশ শিশুরই স্মার্টফোন আছে। ৮১ শতাংশ শিশুর আছে ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট। ৬২ শতাংশ শিশুর রয়েছে ইমো অ্যাকাউন্ট। প্রতিদিন ৩৩ শতাংশ সময় তারা মেসেজ আদান-প্রদান করে এবং ৩০ শতাংশ সময় এরা ব্যয় করে ভিডিও দেখে। এ শিশু-কিশোর ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত মানুষের বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ করেছে। ১৪ শতাংশ শিশু-কিশোর ইন্টারনেটে পরিচয় হওয়া ‘বন্ধুদের’ সঙ্গে সরাসরি দেখা করেছে। ১৭ শতাংশ শিশু-কিশোর অপরিচিতিদের সঙ্গে ভিডিওতে কথা বলেছে। ১১ শতাংশ শিশু-কিশোর ছেলেমেয়ে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনের ‘বন্ধুদের’ জানিয়েছে। আর এসব শিশু-কিশোরের মধ্যে ১৬ শতাংশের অ্যাকাউন্ট হ্যাকও হয়েছে। (ইউনিসেফের এ জরিপের তথ্য নেওয়া হয়েছে ঢাকার দৈনিক যুগান্তর, সমকাল, কালের কণ্ঠ, প্রথম আলো, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সংখ্যা থেকে)।
এ থেকে যে ভয়টা আমাদের কাছে এসেছে তাতে দেখা যায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে আমাদের কিশোর ছাত্রছাত্রীরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ‘নায়েম’ এ বিষয়ক একটি জরিপ করেছিল। এতে দেখা যায়, ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থী স্বীকার করেছে, যে সময়টুকু এখন তারা ফেইসবুক কিংবা অন্যান্য সাইটে ব্যয় করছে, আগে এ সময়টায় তারা পড়ালেখা করে কাটাত। ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় অত্যধিক সময় ব্যয় করার কারণে তারা সময়মতো অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে পারেনি। ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের সময় কাটায় স্কুলের আঙিনাতেই, আর ১৩ শতাংশ শিশু-কিশোর-কিশোরীকে পাওয়া গেছে যারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেছে একেবারে পাঠদান চলাকালে চুপিচুপি শিক্ষকের উপস্থিতিতেই। এ হলো ভয়াবহ দিক। ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষায় খারাপ করছে, তাদের মন চলে যাচ্ছে অন্যদিকে। এ ফাঁকে নানা অপসংস্কৃতি, অপরাজনীতি, উগ্রবাদ আকর্ষণ করে গ্রাস করে ফেলছে তাদের মন-মনন, চিন্তা এবং জীবন।
এখন উন্নত বিশ্ব এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা দেশের গণমাধ্যম থেকেও প্রশ্ন করা হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়া আশীর্বাদ না অভিশাপ? (দেখুন কলকাতা থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক সানন্দার ৩০ মে, ২০১৯ সংখ্যার প্রচ্ছদ কাহিনি)। সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো দিকগুলো হলোÑ সামাজিক যোগাযোগটা চলে এসেছে হাতের মুঠোয়, একটা সৃষ্টিশীলতার মঞ্চ তৈরি হয়েছে, যে কেউ এতে অবদান রাখতে পারে, প্রধান খবর থেকে শুরু করে উত্তেজক খবর সবই মুহূর্তের লগ-ইন-এ ভেসে ওঠে। বিনামূল্যে বাণিজ্য ও সওদা এখন এক জনপ্রিয় উপাখ্যান এ মাধ্যমের। আমরা কেউ তা অস্বীকার করতে পারব না।
কিন্তু পাশাপাশি এর একটা উল্টো দিকও আছে। আর তার প্রধান দিক হলো এর প্রতি আসক্তি, সীমাহীন আসক্তি। সোশ্যাল মিডিয়ার সামাজিক কুপ্রভাবের মূলে রয়েছে এ আসক্তি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা, ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমোতে যাওয়ার সময় পর্যন্ত ২৪টি ঘণ্টা আমাদের হাত থেকে মোবাইল সরছেই না, এমনকি ঘুমের মধ্যেও অনেক অ্যাপ জেগে উঠে আমাদের ডাকতে থাকে, ঘুমেরও বারটা বাজে! শুধু আমাদের কিশোর-কিশোরী এবং তরুণরাই নন, আমাদের অভিভাবকদেরও যদি বলা হয়, একটি দিন মোবাইল বন্ধ করে থাকুন, অনেকেই এ পরীক্ষায় পাস করতে পারবেন না।
নামে সোশ্যাল মিডিয়া; কিন্তু কার্যত এর ব্যবহারকারীরা বেশিরভাগই অসামাজিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। শিশু-কিশোররা তো বটেই, জ্যেষ্ঠরাও একটা মোবাইল ফোন, কিংবা একটা মেসেজ অথবা একটা মেইল করেই অতিনিকটবর্তী স্বজনকেও দূরবর্তী করে দিচ্ছেন। শত ব্যস্ততার কথা বলছেন অনেকেই; কিন্তু বাস্তবে আমাদের চারপাশে কী ঘটছে, অথবা আমার দায়িত্ব ও সচেতনতাটুকু মার খাচ্ছে নাকি, তা ভেবে দেখার বিষয়।
এটম বোমার মতো ছড়িয়ে পড়েছে সাইবার বুলিং। ব্যঙ্গাত্মক ছবি, হাসির মোড়ক, কৃত্রিম শব্দ ইত্যাদিও মাধ্যমে আঘাত হেনে চলেছে শিশু-কিশোর, বিশেষ করে মেয়েদের ওপর। এর কারণে অনেক মেয়েই চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে, যা আমাদের বেদনার্ত করেছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সাইবার অপরাধ। প্রোফাইল হ্যাকিং হচ্ছে, বিশেষ করে মেয়েদের হেনস্তা করতে সাইবার অপরাধের মাত্রা হারিয়ে ফেলেছে। প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে পারিবারিক অসন্তোষ। মানসিক দূরত্বও সৃষ্টি করছে এ সোশ্যাল মিডিয়া।
ফেইসবুকে বা কোনো গণমাধ্যমে কাউকে নিয়ে মানহানিকর বা বিভ্রান্তিমূলক কিছু পোস্ট করলে, ছবি বা ভিডিও আপলোড করলে, কারও নামে অ্যাকাউন্ট খুলে বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট দিলে, কোনো স্ট্যাটাস দিলে কিংবা শেয়ার বা লাইক দিলেও সাইবার অপরাধ হতে পারে। কাউকে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে হুমকি দিলে, অশালীন কোনো কিছু পাঠালে কিংবা দেশবিরোধী কোনো কিছু করলে তা সাইবার অপরাধ হবে। আবার ইলেকট্রনিক মাধ্যমে হ্যাক করলে, ভাইরাস ছড়ালে কিংবা কোনো সিস্টেমে অনধিকার প্রবেশ করলে সাইবার অপরাধ হতে পারে। এছাড়া অনলাইনে যে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে, তা-ও সাইবার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এর শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ৭ বছর কারাদণ্ড ও ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
এসব থেকে আমাদের বাঁচার উপায় কী! বাঁচার উপায় আমাদের বলে দিচ্ছে অতিমাত্রায় মোবাইল হাতে নিয়ে বসে থাকা অথবা মোবাইল হাতে নিয়ে চলা থেকে আমাদের নিজেদের (অভিভাবকদের), আমাদের শিশু-কিশোর ছেলেমেয়েদের বিরত থাকতে হবে, বিরত রাখতে হবে। কিন্তু এটা সহজ কাজ নয়। প্রথমে প্রত্যেককেই একটা তালিকা করতে হবে এ বিষয়ে যে, আজ কত ঘণ্টা পড়েছি (পত্রিকা ও বইও এর অন্তর্ভুক্ত), কতক্ষণ শান্তিতে ঘুমিয়েছি (অর্থাৎ ঘুম ভেঙে কতবার মোবাইল ফোন ‘রিসিভ’ করেছি), তা এর থেকে বাদ যাবে। আর কতক্ষণ অবকাশ ও খাওয়া-দাওয়ায় কাটিয়েছি এবং বাকি সময়টা আমরা কোন কাজে ব্যয় করলাম, তা হিসাব করতে হবে। হিসাবটা বের হয়ে যাবে তখনই, যখন আমি নিজেই বুঝব। আমি মোবাইল নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কতক্ষণ কাটিয়েছি। সত্যিকার অর্থে এ নিয়ে নিজেকে নিজের মুখোমুখি করলে আমি নিজেই বুঝতে পারব, নেট থেকে আমি কতখানি দূরে আছি অথবা কতবেশি ঝুঁকে আছি নেটের সঙ্গে।
বারবার ফোন বা ল্যাপটপ চেক করার প্রয়োজন নেই। এগুলো আমাকে আমার মূল কাজ থেকে দূরে সরিয়ে নেবে। আর ওখানে জড়িয়ে আমি ‘ব্যস্ত আছে-ব্যস্ত আছি’ সুরের মধ্যে পড়ে যাব। আমাদের মনে রাখতে হবে, বেশি ব্যস্ত থাকা কিন্তু ভালো নয়। আমাদের নিজেদেরই বুঝতে হবে ব্যস্ত থাকার কথা বলে যাদের আমরা এড়িয়ে যাচ্ছি, তারাই আমার আপনজন। আপনজনকে এড়ালে এমন একদিন আসবে, যখন যাদের নিয়ে এতদিন ব্যস্ত ছিলাম, সময় পার হলে আর কোনো কারণেই তাদের আর আপন করে পাব না।
কারণে-অকারণে শিশু-কিশোরদের হাতে মোবাইল তুলে দেব না। এক সময় আসবে ওরা এতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে, তখন চাইলেও তাদের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিতে পারব না। তখন শিশু-কিশোররা নানারকম পর্নগ্রাফি, নেট জঙ্গিবাদ, আত্মহত্যা বিষয়ে প্রচারণা দেয়Ñ এমন সব সাইট তথা সাইবার প্রযুক্তিতে আসক্ত হয়ে পড়ে। তখন হাজারো নসিহত, পরামর্শ, উপদেশ আর কাজে আসে না। শিশু-কিশোরদের তৈরি করে ফেলতে হবে আগে থেকেই, বড় হয়ে গেলে বাধা দিয়ে লাভ হয় না। তখন সে অভিভাবকদের বলে বসবে, ‘আমি তো কম বুঝি না’! তবু শিশু-কিশোরদের বোঝাতে হবে অত্যধিক নেটে থাকলে তার মধ্যে একটা একাকিত্ব এসে যাবে, তখন সে আর কারও সঙ্গে মিশতে পারবে না। তার ওজন বেড়ে যেতে থাকবে। চোখেও সমস্যা দেখা দেবে। সে একটা অজানা-অচেনা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকবে। প্রাকৃতিকভাবে মানুষের যে স্বাভাবিক আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে, সেটা সে হারিয়ে ফেলবে। লেখাপড়া ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি তার মনোযোগ কমে যাবে। নানারকম বিষণ্নতায় তাকে পেয়ে বসবে। নেতিবাচক ধারণায় সে বেশি অভ্যস্ত হয়ে পড়বে। গুজবে কান দেবে। অহেতুক কথা, ফালতু মন্তব্য, টিপ্পনী, খোঁচা দিয়ে মন্তব্য, গালাগালÑ এ রকম শত অশিক্ষা-কুশিক্ষা ও বর্বরতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে নিজের অজান্তেই।
পাদটীকা : আমরা অনেকেই জানি না, ‘সেলফি’ নামক ছবি তোলার আনন্দযজ্ঞ করতে গিয়ে বিশ্বে এ পর্যন্ত ২৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সেলফি তুলতে গিয়ে এ মৃত্যুগুলো ঘটেছে। সেলফি বর্তমানে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরাই বেশি তুলে থাকে। এ-ও এক ধরনের নেশা। এ থেকে তাদের বের করে আনতে হবে। আমাদের সবারই, বিশেষ করে অভিভাবক শ্রেণির এসব ব্যাপারে সচেতনতা এখন এক অপরিহার্য বিষয়। এর ব্যত্যয় হলে আর রক্ষা নেই। হ
ষ পিআইডি নিবন্ধ