আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১৭-০১-২০২০ তারিখে পত্রিকা

১১৫তম জন্মবার্ষিকী আজ সংরক্ষণের অভাবে হারানোর পথে বন্দে আলীর সাহিত্যকর্ম

কাজী বাবলা, পাবনা
| শেষ পাতা

‘আমাদের ছোটো গাঁয়ে ছোটো ছোটো ঘর, থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর’Ñ এ পঙ্ক্তিগুলো বিখ্যাত শিশু সাহিত্যিক ও কবি বন্দে আলী মিয়ার। আজ তার ১১৫তম জন্মবার্ষিকী। ১৯০৬ সালের এই দিনে পাবনা শহরের রাধানগর মহল্লায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৩ সালে বন্দে আলী মিয়া পাবনা শহরের রাধানগর মজুমদার একাডেমি থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৯২৭ সালে কলকাতার বৌবাজারে ইন্ডিয়ান আর্ট একাডেমি থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। ১৯৩০ সালে কলকাতা করপোরেশন স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং দীর্ঘ ২০ বছর চাকরি শেষে ১৯৫০ সালে অবসরে যান। পরে তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহী বেতারে চাকরি করেছেন। এ সময় তিনি গল্পের দাদু নামের একটি শিশুতোষ প্রোগ্রাম করতেন। ১৯৭৯ সালের ২৭ জুন ৭৩ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহীর কাজিরহাট অঞ্চলের বাসভবনে ইন্তেকাল করেন এ কবি। পরে তাকে নিজগ্রাম পাবনার রাধানগরে দাফন করা হয়। 

কবি বন্দে আলী মিয়া শিশুদের জন্য ১০৫টি শিশুতোষ গ্রন্থসহ ১৩৬টি গ্রন্থ রেখে গেছেন। শিশু সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য কবি বন্দে আলী মিয়া ১৯৬২ সালে বাংলা 
একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। সাহিত্যকর্মে তার অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯০ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয় তাকে। সরকারিভাবে কবির জন্মবার্ষিকী পালন না করা হলেও দিনটি স্মরণ করবেন পাবনায় তার ভক্ত-অনুরাগীরা। কবির মৃত্যুর পর যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস হতে চলেছে কবির পাবনা শহরের রাধানগর মহল্লার বসতবাড়ি কবিকুঞ্জ ও রেখে যাওয়া সাহিত্যকর্ম। 
কবির মৃত্যুর পর সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় থেকে তার পরিবারকে সামান্য কিছু টাকা ভাতা দেওয়া হতো। কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কবির মেয়ে আফরোজা বেগম বলেন, কবি বন্দে আলী মিয়া ছিলেন একাধারে গীতিকার, উপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার ও  চিত্রশিল্পী। কবির অনেক লেখা এখনও তাদের কাছে পড়ে আছে যেগুলো সরকারি উদ্যোগে ছাপার দাবি জানান তিনি। কবির প্রতিবেশী সাইফুল ইসলাম তারা বলেন, কবির বাড়ির সঙ্গে পাবনার ঐতিহ্যবাহী সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজ। এ কলেজে বর্তমান সরকারের উন্নয়নে কয়েকটি ছাত্রছাত্রীর থাকার হল হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, একটি হল কবির নামে নামকরণ করা হোক।   
কবির নাতি সাইফুল ইসলাম রিটন বলেন, পারিবারিক উদ্যোগে যতটুকু সম্ভব হয় তারা কবির বাড়ি ও তার রেখে যাওয়া সাহিত্যকর্ম সংরক্ষণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে তাদের দাবি, সরকারি উদ্যোগে ট্রাস্ট বোর্ডের মাধ্যমে কবির কর্মগুলো সংরক্ষণ করা হোক। এদিকে সরকারি উদ্যোগে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কবির জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালনের দাবি জানিয়েছেন কবি বন্দে আলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আমিরুল ইসলাম রাঙা। পাবনাবাসীর দাবির মুখে এক সময় পাবনা পৌরসভার উদ্যোগে কবি বন্দে আলী মিয়ার নামে পাবনা বাইপাস সড়কের ও পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের নামকরণ করা হয়। কিন্তু সড়কটির নামফলকটি এখন আর নেই। এছাড়াও কবি বন্দে আলী মিয়া শিশুশিক্ষা নিলয় এবং জেলার আটঘরিয়া উপজেলায় কবি বন্দে আলী মিয়া নামে একটি উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কবি বন্দে আলী মিয়া স্মরণ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ড. মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বলেন, পাবনা শিক্ষানগরী হিসেবে সারা দেশে পরিচিত। যেহেতু কবি বন্দে আলী মিয়া কবিতা-গল্প লেখকের পাশাপাশি ছিলেন একজন চিত্রশিল্পী, সে অর্থে পাবনায় কবির নামে একটা আর্ট একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানাই। কবির লেখা বিভিন্ন গান রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে তা সংরক্ষণের উদ্যোগ এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ভবন বা ছাত্রছাত্রীদের হল তার নামে করারও দাবি জানাই।