দেখে মনে হয় যেন হলুদ গাঁদা ফুলের শয্যা পাতিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু এগুলো গাঁদা ফুল নয়, দিগন্তব্যাপী সরিষার খেত। বাতাসে দোল খাচ্ছে সরিষার ফুল, পাতা। সেই সঙ্গে এর ফুলের সুমিষ্ট ঘ্রাণ; মৌমাছির ওড়াউড়ি। সকালের নরম আলোয় সরিষা খেতের পাশে গেলে মন ভরে ওঠে। মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে তৃপ্তিতে শ্বাস টানেন কৃষক; স্বপ্ন দেখেন ভালো ফলনের।
সরেজমিন দেখা যায়, গেল বছরের তুলনায় এ বছর ফুলবাড়ী উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে দিগন্ত জোড়া হলুদের সমারোহ। কৃষকের সাফল্যের হাতছানি মিশে আছে সরিষার ক্ষেতের মাঝে। এবার অভাবনীয় সাফল্যের আশায় বুক বেঁধেছেন তারা। কুটিচন্দ্রখানা গ্রামের সরিষা চাষি নরেশ, তরুণ চন্দ্র ও ইব্রাহীম মিয়া রাজু জানান, তারা এবার সরকারিভাবে সার ও বীজ পেয়েছেন। তাই তারা সরিষার বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছেন। এ কৃষক জানান, জমিতে সরিষা তাদের দ্বিতীয় ফসল। এর আগে ওই একই জমিতে তারা অন্য ফসল ফলিয়েছিলেন। সরিষা মাড়াই করে আবার অন্য ফসল চাষ করবেন।
উপজেলার বিদ্যাবাগিশ গ্রামের হালাল ও জিয়া উদ্দিন জানান, গেল বছর সরিষার আবাদ করে তেমন ফলন পাইনি। কিন্তু এবার কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ও সরকারিভাবে সার ও বীজ পেয়ে সরিষার আবাদ করেছি। শীত থাকার পরও সরিষা খেতের সমস্যা হয়নি। জমিতে গিয়ে সরিষার খেত দেখলে মনটা ভরে যায়। আশা করি এবার ফলন বেশি হবে। উপজেলার রাশ মেলা গ্রামের সরিষা চাষি আনোয়ারুল, সাইফুর বলেন, এ ব্লকে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুবকর সিদ্দিকের পরামর্শে তারা সরিষা চাষ করেছেন। এবার ফলনও ভালো হয়েছে। তাদের প্রত্যাশা বেশ লাভ হবে। কাশিপুর ইউনিয়নের সরিষা চাষি আতাউর রহমান ফুলবাড়ীতে সরিষার
বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তায় এবার বারি-১৪ জাতের সরিষার চাষ করেছি তিন বিঘা জমিতে। তবে সরিষার ফলনে দৃষ্টি যেন জুড়িয়ে যায়। আশা করি প্রতি বিঘা জমিতে ৬ থেকে ৭ মণ সরিষা পাব। মধ্য কাশিপুর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবার শীতে সরিষা চাষে সমস্যা হয়নি। ৩৩ শতক জমিতে সরিষার ফলন ভালো হয়েছে। ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুর রশিদ বলেন, মাঠ পর্যায়ে এবার সরিষার আবাদী জমির পরিমাণ ৭৫০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা বেড়ে ৯৮৫ হেক্টর সরিষা চাষ হয়েছে। সঠিক সময়ে কৃষকের পরামর্শ প্রদান করে সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এবার শীতের তীব্রতা থাকার কারণে ও সঠিক পরামর্শের কারণে ফলন ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।