সম্প্রতি বিজ্ঞান পত্রিকা ‘জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল অঙ্কোলজি’তে প্রকাশিত হয়েছেÑ সপ্তাহে আড়াই থেকে ৫ ঘণ্টার ব্যায়াম তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমিয়ে দেয় বিবিধ ক্যান্সারের আশঙ্কা। এ গবেষণা প্রকাশ্যে আসার পর আলোড়ন পড়ে গেছে দুনিয়াজুড়ে ক্যান্সার চিকিৎসক মহলে। নতুন বছরের ব্যায়ামে ক্যান্সার কমে
গোড়ায় তারা বলেন, ব্যায়াম যে ক্যান্সারের আশঙ্কা কমায়, তা নিয়ে একটি ধারণা ছিল। কিন্তু এই প্রথম এত বড় প্রমাণ মিলল।
প্রকাশিত গবেষণাপত্রের লেখক ১৩ জন চিকিৎসা বিজ্ঞানী, যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি, ইউরোপের তিনটি ও অস্ট্রেলিয়ার একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের। তাদের মূল কাজ ছিল শুয়ে-বসে অবসর কাটানো আর ব্যায়ামসহ কায়িক পরিশ্রমে ঘাম ঝরাতে অভ্যস্তÑ এ দুই শ্রেণির মানুষের মধ্যে ক্যান্সার কতটুকু ছড়ায়, তার তুলনামূলক নিরীক্ষণ। ১০ বছর ধরে পৃথিবীর ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৪৫৯ জনের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা দেখেছেন, গড়ে সাপ্তাহিক ঘণ্টা তিনেকের ব্যায়াম ক্যান্সারে শঙ্কাই শুধু কমায় না, ক্যান্সার আক্রান্তের সেরে ওঠার সম্ভাবনাও অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়।
কী বলছে গবেষণার ফল? : ৩২ থেকে ৯১ বছর বয়সি যে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষের (৫৩ শতাং, মহিলা) ওপর সমীক্ষা চালানো হয়, তাদের কেউই গোড়ায় ক্যান্সারের শিকার ছিলেন না। গবেষণাপত্র বলছে, এদের মধ্যে ৫০ হাজার ৬২০ জন ক্যান্সারের শিকার হন গবেষণা চলাকালীন। দেখা গেছে, সাত রকমের ক্যান্সারের আশঙ্কা পরিসংখ্যানগতভাবে কমাতে সক্ষম ব্যায়াম। কোলন ক্যান্সার ৮ থেকে ১৪ শতাংশ, স্তন ক্যান্সার ৬ থেকে ১০ শতাংশ, অ্যান্ডোমেট্রিয়াম ক্যান্সার ১০ থেকে ১৮ শতাংশ, কিডনি ক্যান্সার ১১ থেকে ১৭ শতাংশ, মায়েলেমা ১৪ থেকে ১৯ শতাংশ, নন-হজকিন্স লিম্ফোমা ১১ থেকে ১৮ শতাংশ (মহিলাদের ক্ষেত্রে) এবং লিভার ক্যান্সার ১৮ থেকে ২৭ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে নিয়মিত ব্যায়াম।
ব্যায়ামের সঙ্গে ক্যান্সারের সম্পর্ক : বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, স্থূলতা বা ওবেসিটির সঙ্গে ক্যান্সারের যে সম্পর্ক রয়েছে, তার আন্দাজ ছিলই। গবেষণায় প্রমাণিত, অনুমানটা সত্যি। গবেষণাগত সাতটি ক্যান্সারের পাশাপাশি মহিলাদের ক্ষেত্রে ডিম্বাশয় ও জরায়ুর ক্যান্সার এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ফুসফুস ও প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্যান্সারের সঙ্গে ওবেসিটির সম্পর্ক নিবিড়। ব্যায়াম যেহেতু ওবেসিটি কমায় অথবা হতেই দেয় না, তাই নিয়মিত ঘাম ঝরালে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কাও কমে। স্থূলতা ক্যান্সারের টিউমারকে উৎসাহ দেয়। স্থূলতা কমলে বা না থাকলে ক্যান্সার দমে যায়।
জিনের প্রভাব : ব্যায়াম জিন এক্সপ্রেশনকেও দারুণভাবে প্রভাবিত করে। ক্যান্সারের প্রচ্ছন্ন জিনকে প্রকট করে স্থূতা। ব্যায়াম সেই জিনকেই ঘুম পাড়িয়ে রাখে। তাই যার শরীরে ক্যান্সারের জিন আছে, তিনিও যদি নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাহলে সেই খলনায়ক জিন বাড়াবাড়ি করে না। ফলে ক্যান্সারও হয় না। হলেও দ্রুত সেরে যায় চিকিৎসায়। আর শুয়ে-বসে থাকলে (সিডেন্টারি জীবনযাত্রায়) সেই জিন উৎসাহ পায় ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদির নিয়ন্ত্রক জিনের মতোই। একেবারে তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে গোটা ব্যাপারটা প্রমাণ করল গবেষণা।
ক্যান্সারের খাবারে ঘাটতি : বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যায়াম স্বাভাবিক বিপাকের সহায়ক। টিউমার জন্মাতে দেয় না। টিউমার জন্মালেও তা পুষ্টি পায় না। স্বাভাবিকভাবে মাংসপেশী যদি শরীরে উৎপাদিত গ্লুকোজের ৭০ শতাংশ পায়, তাহলে ঝামেলা থাকে না। কিন্তু আধুনিক জীবনযাত্রায় তা হয় না। নিয়মিত ব্যায়াম পেশিতে পর্যাপ্ত রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে এ ব্যাপারটিকে নিশ্চিত করে। ফলে মেদ কমে, কোষ-স্তরে কমে প্রদাহও। পাশাপাশি স্বাভাবিক কোষ অতিরিক্ত অক্সিজেন পায়। আর ক্যান্সারের টিউমার কোষ তার খাদ্য থেকে বঞ্চিত হয়। সূত্র : ওয়েবসাইট