মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার খুলনা টাইগার্সের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও রাজশাহী রয়্যালসের অধিনায়ক আন্দ্রে রাসেল হাসিমুখে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ট্রফি উন্মোচন করেন ষ আলোকিত বাংলাদেশ
দেখতে দেখতে বঙ্গবন্ধু বিপিএল চলে এলো একেবারে শেষপ্রান্তে। এর মাঝে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা কে হাসবে শেষ হাসি। খুলনা টাইগার্স, নাকি রাজশাহী রয়্যালসÑ কোন ঘরে যাবে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের মুকুট? সেটি জানতে অপেক্ষা করতে হবে কয়েক ঘণ্টা। মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হতে যাওয়া ফাইনালে যেই দলই জিতুক বিপিএল পাবে নতুন চ্যাম্পিয়ন। পাঠক, আপনি যদি পরিসংখ্যানে বেশিমাত্রায় বিশ্বাসী হোন তাহলে আজ বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ফাইনালে খুলনার পক্ষেই যাবে আপনার ভোট! চলতি টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত তিনবার মুখোমুখি হয়েছে এ দুটো দল। লড়াইটা শেষ হয়েছে খুলনা টাইগার্স ২ জয়, রাজশাহী রয়্যালস ১। শুধু দলীয় লড়াইয়ে নয়, একক কৃতিত্বেও ফাইনালের আগ পর্যন্ত খুলনা বেশ দাপটের সঙ্গে এগিয়ে কার ঘরে যাবে
থাকছে। মুশফিকুর রহিম, রাইলি রুশো কিংবা মোহাম্মদ আমিরকে নিয়ে আলাদা কোনো পরিকল্পনা নেই রাজশাহী রয়্যালসের। দলটির অধিনায়ক আন্দ্রে রাসেল জানিয়েছেন, আলাদা করে নয়; পুরো খুলনা টাইগার্সকে নিয়ে পরিকল্পনা করছেন তারা। শুধু আমির নন, ব্যাট হাতে দারুণ ফর্মে রয়েছেন মুশফিক এবং রুশো। ফর্ম খুঁজে পেয়েছেন খুলনার ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তও। এদের সঙ্গে খুলনা দলের বাকি ক্রিকেটারদের নিয়েও পরিকল্পনা সাজাচ্ছে রাজশাহী। কোনো ধরনের খুঁত রাখতে চাইছে না তারা।
বৃহস্পতিবার লন্ডন থেকে আনা বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ট্রফি উন্মোচন করেন মুশফিক ও রাসেল। সে সময় ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার বলেন, আমরা আলাদা করে কোনো খেলোয়াড়ের জন্য পরিকল্পনা করছি না। আমাদের লক্ষ্য যত দ্রুত সম্ভব উইকেট তুলে নেয়া। কারণ আপনি জানবেন না আজ কার দিন। যার দিন তাকে সেদিন আটকাতে পারবেন না। ফেভারিটের প্রশ্নে রাসেল বলেন, ‘এটি একটা অদ্ভুত প্রশ্ন। কারণ ফাইনালে যারা যাবে তাদের প্রতি আপনার প্রত্যাশা থাকবে যে জিতবে। আমাদের মাথাতেও জয় ছাড়া অন্য কিছু নেই। গত ম্যাচে আমরা দল হিসেবে খেলেছি। আমরা যেটি পারি সেটাই দেখাব এবং আশা করি আমরা দারুণভাবে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করব। রাজশাহী দলপতির ভাষায়, ‘টস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি দেখেন গত কয়েকটি ম্যাচে যারা প্রথমে ব্যাট করেছে তারা কিন্তু ভালো রান করেছে। আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে যখন আমরা উইকেট হারিয়েছি এবং ব্যাকফুটে চলে গেছি। আমরা যদি প্রথমে ব্যাট করতে পারি তাহলে ১৭০ রানের মতো করার চেষ্টা করব। টসের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। যখন কয়েনটি ওপরে ছুড়ে মারা হবে এবং মাটিতে পড়বে তখনই আসলে বোঝা যাবে। দেখা যাক কী হয়।’
বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলে রাজশাহী রয়্যালসকে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিয়েছেন আন্দ্রে রাসেল। দলের এমন কঠিন পরিস্থিতি থেকে দলকে টেনে তোলার নজির অবশ্য নতুন নয় এ ক্যারিবিয়ানের জন্য। তাই প্রতিটি দলই তাকে নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা করে থাকে। আর ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে তো আরও বেশি; কিন্তু রাসেলকে নিয়ে আলাদা কিছু করার কথা ভাবছে না খুলনা টাইগার্স। প্রতিপক্ষের সব খেলোয়াড় নিয়েই পরিকল্পনা করার কথা জানিয়েছেন খুলনার কোচ জেমস ফস্টার।
আগের দিন ২২ বলের ইনিংসে রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ চালান তিনি। সেখান থেকে চার বল বাকি থাকতেই দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। সাতটি বিশাল ছক্কায় করেন ৫৪ রান।
অথচ খুলনা কোচ রাসেলের এমন ইনিংস নিয়ে আলাদা কোনো কিছুই চিন্তা করছেন না। আট-১০টা খেলোয়াড়কে নিয়ে যেভাবে আলাদা পরিকল্পনা করেন রাসেলকেও সেভাবেই দেখছেন। ফস্টারের ভাষায়, ‘আমরা সবার জন্যই পরিকল্পনা করে থাকি। দলে থাকা ১১ জন খেলোয়াড়ের জন্যই। প্রতিটা ম্যাচের আগেই আমরা এটি করে থাকি।’
এর আগে রাজশাহীর বিপক্ষে আমাদের দারুণ ম্যাচ হয়েছে। শেষের দিকে যেমন দেখিয়েছে তার চেয়েও কঠিন ছিল ম্যাচটা। তারা খুব সিরিয়াস এবং খুব ভালো দল এবং আমাদের কাল ভালো খেলতে হবে। এর জন্য যতটা পারা যায় প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা খুব আত্মবিশ্বাসী।
টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় শীর্ষ দুই ব্যাটসম্যান খুলনার। ১৩ ম্যাচে ৪৭০ রান নিয়ে এক নম্বরে আছেন মুশফিকুর রহিম। সমান সংখ্যক ম্যাচে ৪৫৮ রান নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রাইলি রুশো। এ তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে অবশ্য রাজশাহী রয়্যালসের শোয়েব মালিকের নাম। ১৪ ম্যাচে শোয়েব মালিকের রান ৪৪৬। ব্যাটিংয়ের শীর্ষ ১০-এ আছেন রাজশাহীর রয়্যালসের আরও দুই ব্যাটসম্যান। ১৪ ম্যাচে ৪৩০ রান নিয়ে লিটন দাস এবং ৩৬০ রান নিয়ে অলরাউন্ডার আফিফ হোসেন। এ তালিকায় দাপুটে অবস্থান খুলনা টাইগার্সের। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির শীর্ষ ১০-এ তিনজনই খুলনার। তালিকায় সবচেয়ে বেশি ২০ উইকেট নিয়ে যৌথভাবে এক নম্বরে রংপুর রেঞ্জার্সের মুস্তাফিজুর রহমান ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের রুবেল হোসেন।
আজ শুরু হওয়া ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামছে বিশেষ বিপিএলের। গেল ছয় আসরের মধ্যে সবচেয়ে তিনবার শিরোপা জিতে ঢাকা। ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স নামে দু’বার ও একবার ঢাকা ডায়নামাইটস নামে। দু’বার শিরোপার স্বাদ নেয় কুমিল্লা ভিে