মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা তার নির্বাচনের পথে বাধা নয় বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. আলমগীর।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ইসি সচিব। সাংবাদিকদের প্রশ্নে দুদকের মামলায় ইশরাকের বিচার শুরু হওয়ার প্রসঙ্গটি উঠলে ইসি সচিব বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে নির্দেশনা ছিল, কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে নির্বাচন কাজ পরিচালনাকারী বা সমর্থকদের যেন গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা না হয়; কিন্তু ইশরাক হোসেনের বিরুদ্ধে যে মামলা সেটি পুরোনো মামলা। এটি একটি
দুর্নীতির মামলা। বিষয়টি এমন নয়, এখনই তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। মামলার বিষয়ে আদালতে শুনানি হয়েছে, এটি আমাদের বা পুলিশের পক্ষ থেকে নয়। এটি আদালতে শুনানি হয়েছে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে একটি তারিখ ঠিক হয়েছে, তখন শুনানি দেবেন তারা। এর ফলে ইশরাক হোসেনের নির্বাচনের প্রচারণায় কোনো বাধা নেই। তাকে (ইশরাক হোসেন) গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। এমনকি কোনো বাধারও সৃষ্টি করা হচ্ছে না। এটি প্রক্রিয়াগতভাবে হবে। তিনি নির্বাচন করবেন, প্রচারণাও করবেন। এর কারণে তো নির্বাচন প্রক্রিয়ার কোনো বাধা নেই।
ছাত্র আন্দোলন নিয়ে ইসি সচিব বলেন, ছাত্ররা আন্দোলন কেন করছেন, কারা এটিকে সংগঠিত করছেন, সেটার তথ্য আমাদের কাছে নেই। হয়তো কেউ পেছন থেকে তাদের বোঝাচ্ছেন পূজার দিনে ভোট হচ্ছে। অথবা আদালত যে আদেশ দিয়েছেন বোঝে শুনেই দিয়েছেন এবং নির্বাচন কমিশনও বোঝে শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে নিশ্চয়ই তাদের বোঝানো হচ্ছে না। তাদের হয়তো বলা হচ্ছে, গোপন করে অন্যভাবে বোঝানো হচ্ছে। এসব কারণে শিক্ষার্থীরা ভুল বুঝতেই পারেন। কারণ তাদের তো বয়স কম। আমার ধারণা তাদের এ ভুলটা কেটে যাবে। তারা বিষয়টি বুঝতে পারবেন।
তিনি বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা, মার্চ স্বাধীনতার মাস, এরপর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের নানা প্রোগ্রাম অছে। আবার এপ্রিলে শুরু হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। মে মাসে নির্বাচনের যে তারিখ আছে, তা কোনোভাবেই করা সম্ভব নয়। শিডিউল এমনভাবে দিতে হবে, প্রতীক পাওয়ার পর প্রার্থীদের অবশ্যই কমপক্ষে ১৫ দিন সময় দিতে হবে প্রচারের জন্য। এক্ষেত্রে এক দিন কম দিয়ে ১৪ দিন সময় দিলে প্রার্থীরা আবার আদালতে যেতে পারবেন। আদালতও আইনের পক্ষে রায় দেবেন। তাই সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই কমিশন অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গতভাবে ৩০ জানুয়ারি ভোটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইসি সচিব বলেন, সরকারি ক্যালেন্ডারে ২৯ তারিখ পূজার কথা বলা আছে। ক্যালেন্ডার তো সেদিন হয়নি, এটি অক্টোবরে হয়েছে এবং নভেম্বরে এটি গেজেট আকারে প্রকাশ হয়েছে। সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে এ ক্যালেন্ডার রয়েছে। তখন কেন তারা সরকারের কাছে বলেনি পূজা ২৯ নয় ৩০ তারিখে। সরকার যদি মনে করত পূজা ৩০ তারিখে, তাহলে সেদিন পূজার তারিখ ঘোষণা হতো। আমরাও ২৯ তারিখেই শিডিউল দিতে পারতাম, কোনো সমস্যা ছিল না। সরকারিভাবে ২৯ তারিখ পূজার তারিখ দেওয়ায় সেদিন ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল না নির্বাচন কমিশনের।
নির্বাচন পেছানোর রিট আবেদন খারিজের পর আপিল আবেদন হওয়ার বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, আমাদের সবসময় আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে। যে কোনো আইনের ব্যাখ্যা বা প্রশাসনিক কোনো কাজে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আদালত সেটাকে পরিবর্তন করে দিতে পারেন। সে ক্ষমতা আদালতের আছে। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ সর্বোচ্চ আদালত। সেখান থেকে যদি অন্য কোনো সিদ্ধান্ত আসে, সেটা অবশ্যই কমিশনের মেনে নিতে হবে। আমরা আশা করব হাইকোর্ট যেসব যুক্তিতর্কের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন, সুপ্রিমকোর্টেও যারা শুনানি দেবেন, তারা নিশ্চয়ই সে যুক্তি শুনবেন। এরপরও তারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটাই কমিশনকে সবসময় মেনে নিতে হবে।