আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১৭-০১-২০২০ তারিখে পত্রিকা

এবার ভোটের তারিখ নিয়ে প্রচারণায় প্রার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
| প্রথম পাতা

বিভিন্ন সম্প্রদায় ও ছাত্রদের পর এবার মেয়র প্রার্থীরা সরস্বতী পূজার জন্য ভোট পেছানোর অনুরোধ জানিয়েছে। তবে ৩০ জানুয়ারি ভোট করার বিষয়ে আগের অবস্থানে রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরের আলুব্দী ঈদগাহ মাঠে উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে সব ধর্মের লোক বাস করে, সবারই উৎসব পালনের অধিকার রয়েছে। অমি অবশ্যই মনে করি, সরস্বতী পূজার কারণে যদি নির্বাচন পেছানোর দরকার হয়, সেটা করতে হবে। আমি নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমার পক্ষ থেকে, দলের পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি, যদি সম্ভব হয় তাহলে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দিন। কারও ধর্ম পালনে যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে।
৩০ জানুয়ারি ভোটের তারিখ রেখে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সে অনুযায়ী প্রার্থীরা প্রচারও চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদও ভোটের তারিখ পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়েছিল। তবে তাতে সাড়া দেয়নি নির্বাচন কমিশন।
এর মধ্যে ভোটের তারিখ পরিবর্তনের জন্য হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ। কিন্তু সেটা খারিজ হয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার আপিল করেছেন তিনি।
পূজার জন্য ভোট পেছানোর দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীও কয়েক দিন ধরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে আসছেন। তবে নির্বাচন কমিশন ৩০ জানুয়ারি ভোট করার জন্য অনড়।
নির্বাচনি প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আতিকুল বলেন, আমি যদি বলতাম, আমার নেতাকর্মীরা যদি বলত, তাবিথ আউয়ালের কোনো পোস্টার ঢাকা শহরে থাকত না। আমি দলের নেতাকর্মীদের অনুরোধ করব, আমাদের কোনো পোস্টার ছেঁড়া লাগবে না, কাউকে বাধা দেওয়া লাগবে না। আমি বরং ওয়েলকাম করব, প্রয়োজন পড়লে আমি পোস্টার লাগিয়ে দেব কিন্তু ছিঁড়ব না।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেছেন, ৩০ জানুয়ারি সরস্বতী পূজার দিনে নির্বাচন হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মনের ক্ষোভ ভোটে প্রকাশ করবেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর পশ্চিম তেজতুরীপাড়ায় নির্বাচনি প্রচারণার সময় তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, পূজার ব্যাপারে আমরা আগে থেকেই জানি যে, বছরের কখন পূজা হবে। পরিকল্পনার সময় (নির্বাচন) নির্বাচন কমিশনও জানত (পূজার দিন সম্পর্কে)। আমরা মনে করি, ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন কমিশন এ ধরনের একটা তারিখ দিয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়, বর্তমান সরকার সব ধর্মকে একভাবে দেখে না, একভাবে সম্মান করে না। অথচ সংবিধান অনুযায়ী সবাইকে সমানভাবে দেখতে হবে।
এদিকে নগরবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে সমাধানের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, হেল্পলাইন চালু করব, যাতে ঢাকাবাসী যে কোনো অভিযোগ দিতে পারে। তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া হবে। হেল্পলাইনের মাধ্যমে সমাধান না পেলে তারা সরাসরি মেয়রকে ফোন করতে পারবে। মেয়র সঙ্গে সঙ্গে সমাধান দেবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর আজিমপুর-নিউমার্কেট এলাকার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৩ নম্বর গেটের সামনে থেকে নির্বাচনি প্রচারণা শুরুর আগে সাংবাদিকদের এমন প্রতিশ্রুতির কথা জানান শেখ ফজলে নূর। তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে মেয়র হিসেবে নয়, একজন সেবক হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২৪ ঘণ্টা ঢাকাবাসীর সেবা করব।
ভোটারদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বলেন, সার্বক্ষণিক ঢাকাবাসীর দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানো হবে। ৯০ দিনের মধ্যেই নাগরিকদের সব ধরনের মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করতে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুরান ঢাকা নিয়ে তার বিস্তারিত পরিকল্পনা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, অতীতে কোনো মেয়র পুরান ঢাকা নিয়ে আলাদা করে কোনো পরিকল্পনা করেননি। অন্যদিকে, বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, ইসলামপুরে ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালাতে গেলে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হয়। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী আবদুল হাই, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা বাবুসহ ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বেশ কয়েকজন আহত হন। 
আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, যত ষড়যন্ত্রই হোক আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনি মাঠে থাকব। জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই চালিয়ে যাব। কারণ, জনগণ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আমরা জনগণকে নিয়েই লড়াই করব। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনে এসব বিষয়ে প্রায় প্রতিদিনই অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কমিশন থেকে এখনও কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখছি না। আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। ইশরাক বলেন, আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকা মহানগরীতে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ মুখিয়ে আছে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য। আমরা যে এলাকায় গিয়েছি সেখানেই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষের উচ্ছ্বাস দেখেছি। এ অবস্থা দেখে ক্ষমতাসীনরা নতুন নতুন ষড়যন্ত্রের ফন্দি আটছে।
তিনি বলেন, আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতেই সরকার ভুয়া একটি মামলা নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করছে। আমি গেল জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দিলে একইভাবে এ মামলাটি নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করেছিল। আমাদের নেতাকর্মীদের প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। কর্মীদের পুলিশে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। তবে আমি এতে ভীত নই।