আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১৭-০১-২০২০ তারিখে পত্রিকা

বিদ্রোহীদের বিষয়ে কঠোর আ.লীগ

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন

দীপক দেব
| প্রথম পাতা

-আজ শেষ হচ্ছে বেঁধে দেওয়া সময় 

-পদ দেওয়া হবে না নগর থানা ও ওয়ার্ড কমিটিতে 

-বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত আসতে পারে

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীদের জয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বিদ্রোহীদের বিষয়ে ‘হার্ড লাইনে’ যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের এ কঠোর অবস্থানের বিষয়টি এরই মধ্যে দুই সিটির বিদ্রোহী প্রার্থীদের অবহিত করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত তাদের সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যদি তারা দল মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে নিজেদের সমর্থনের বিষয়টি পরিষ্কার না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের মতো কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। 

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার উত্তরের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে ও বুধবার দক্ষিণের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বশীল নেতারা। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন দল মনোনীত প্রার্থীকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে তার পক্ষে কাজ করার বিদ্রোহীদের বিষয়ে

পরামর্শ দেওয়া হয়। এজন্য তাদের আজ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে দলের সিদ্ধান্ত মেনে না নিলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বহিষ্কারের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দলের সিদ্ধান্ত মানলে সিটি নির্বাচনের পর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তর ও দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং থানা ও ওয়ার্ড কমিটি করা হবেÑ তাতেও তাদের মূল্যায়ন করা হবে। এ সুযোগ তাদের নেওয়া উচিত বলেও মনে করেন নগর আওয়ামী লীগের নেতারা। 
বুধবার ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কার্যালয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিদ্রোহী প্রার্থী ও দলীয় নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় করেন আমির হোসেন আমু। সেখানে থানা পর্যায়ের নেতারা বিদ্রোহীদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ার দাবি জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দুই দিন সময় বেঁধে দিয়ে বিদ্রোহীদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেন আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দল মনোনিত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ না করলে বিদ্রোহীদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে ৫০ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে কিন্তু মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির (ডিএসসিসি) ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ৪২টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন প্রায় ৭২ জন। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে তাদের ডেকে পাঠানো হলে এর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ জন সাড়া দিয়েছেন। বাকিরা কেন্দ্রর ডাকে কোনো সাড়া দেননি। 
জানতে চাইলে সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সাইদ আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, নেতাদের সামনে বলেছি- আপনারা বার বার বলেন, বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্ষমা করে দেন। এ জন্যই তাদের (বিদ্রোহী) তলব করার পরও তারা আসেননি। এবার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমু ভাই বলেছেনÑ শুক্রবার পর্যন্ত দেখা হবে, তারা কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত না মানলে তাদের বহিষ্কার করা হবে। তিনি বলেন, আমু ভাইয়ের কথা শুনে মনে হয়েছে এবার দল হার্ড লাইনে হাঁটবে। আজ শুক্রবার যে কোনো সময় আবার বিদ্রোহীদের নিয়ে আমির হোসেন আমু বসবেন বলে দলটির একটি সূত্র থেকে জানা গেছে। 
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটিতে (ডিএনসিসি) ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৫টিতে মোট ৩৯ জন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। মঙ্গলবার উত্তরের বিদ্রোহীদের নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বসে দুই দিন সময় বেঁধে দেন আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাহবুব-উল আলম হানিফ আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, তাদের দুই দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তারা যদি বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। 
একই কথা বলেছেন মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। তিনি আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, তাদের (বিদ্রোহী) বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, সামনের কমিটিতে তাদের মূল্যায়নের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তারপরও এখন পর্যন্ত তাদের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তাদের সামনে ভালো সুযোগ এসেছিল সেটা তারা কাজে লাগাতে পারল না। ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটিতে ভোট হবে। দুটিতেই ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোটগ্রহণ করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।