নির্বাচন মানেই উৎসব। সচেতন নাগরিক হিসেবে ভোটাধিকার প্রয়োগে ভিন্ন ধরনের আনন্দ ও গৌরব বোধ করেন মানুষ। ঢাকাবাসীর জন্য আনন্দ সংবাদ হচ্ছে, যথসময়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো এবং বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হলো। আলোকিত বাংলাদেশে প্রকাশ, ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বেসরকারি ফলাফলে জয় পেয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই মেয়র প্রার্থী। উত্তরে বিজয়ী হয়েছেন আতিকুল ইসলাম এবং দক্ষিণে শেখ ফজলে নূর তাপস। শনিবার মধ্যরাতে বেসরকারিভাবে তাদের নির্বাচিত ঘোষণা করেন সিটি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা। এবারের নির্বাচনে প্রধান দুই দল বিপুল সমারোহে প্রচারণা চালালেও ভোটের হার আশানুরূপ হয়নিÑ এই বিষয়টি বিস্ময়ের উদ্রেক করেছে বৈকি।
এবার দুই সিটিতে ভোটকেন্দ্র ছিল ২ হাজার ৪৬৮টি। তবে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি তুলনামূলক কম দেখা গেছে। ভোটগ্রহণের পরপরই কিছু কেন্দ্রে ভোটারদের প্রবেশে বাধা এবং পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। তবে আওয়ামী লীগের দাবি, বিএনপির পোলিং এজেন্টরা নিজেরাই কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে গিয়ে নাটক করছে। লক্ষণীয় বিষয়, এবারই প্রথম ইভিএম মেশিনে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। ইভিএম নির্বাচন নিয়ে অনেকের আপত্তি থাকলেও নির্বাচন কমিশন তাদের উদ্যোগে অটল থেকেছে। সঙ্গত কারণেই এ নিয়ে অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করেছে ভোটারদের মধ্যে, যান্ত্রিক জটিলতাসহ তৈরি হয়েছে বিতর্কও। অর্থাৎ ইভিএম নিয়ে কথিত সংশয় একেবারে কাটানো সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করা যাবে না। লক্ষণীয় বিষয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা ভোট দিতে গেলে তার আঙুলের ছাপ মেলেনি ইভিএম মেশিনে। পরে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে তিনি ভোট দেন। ইভিএমের কারণে এমন জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে অনেক সাধারণ ভোটারদেরও। এদিকে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করে ফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি। প্রতিবাদে গতকাল রোববার রাজধানীতে হরতাল আহ্বান করে দলটি। তবে নির্বাচন নিয়ে যতই বিতর্ক-উৎকণ্ঠা আর রাজনৈতিক অস্থিরতা কাজ করুক না কেন, ঢাকাবাসীর প্রত্যাশা নির্বাচিত মেয়ররা সব বাধা উপেক্ষা করে জনগণের উদ্দেশে দেওয়া তাদের ইশতেহারগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করবেন।
নির্বাচিত মেয়রদের নাম আমরা জেনে গেছি, কিন্তু এখনও শহরজুড়ে নির্বাচনি পোস্টারগুলো শোভা পাচ্ছে। প্রায় সব পোস্টারই লেমিনেটেড ও পলিথিনে মোড়া, যেগুলো পরিবেশের জন্য মারাত্মক দূষণের কারণ হতে পারে বলে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাই নগরবাসীর চাওয়া, অনতিবিলম্বে এই পোস্টারগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। উল্লেখ্য, নির্বাচনি প্রচারণায় প্রায় প্রত্যেক প্রার্থীই গড়ে তুলবেন আধুনিক ঢাকা, বাসযোগ্য ঢাকা, সুস্থ ঢাকা ইত্যাদি নানা সেøাগান দিয়েছেন। এখন যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের ওপর জনগণের প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্ব। ঢাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে যানজট, সড়ক দুর্ঘটনা, নিরাপত্তহীনতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বর্ষায় জলাবদ্ধতা, মশাবাহিত বিভিন্ন রোগসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। এসব সংকট দূর করে শান্তিময় ঢাকা গড়তে নির্বাচিত মেয়ররা আন্তরিকভাবে কাজ করবেনÑ এমনটাই প্রত্যাশা। হ