আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৩-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

হাশরের মাঠে হবে ঈমানের পরীক্ষা

মোহাম্মদ নিজামুল ইসলাম নিজাম
| সভ্যতা ও সংস্কৃতি

আসলে ঈমান হচ্ছে ত্রুটিমুক্ত বীজের মতো। অপরিপক্ব ত্রুটিযুক্ত বীজ দ্বারা যেমন ভালো চারাগাছ উৎপন্ন হওয়ার আশা করা যায় না। ঠিক তদ্রƒপ অপরিপূর্ণ ত্রুটিযুক্ত ঈমান নামক বীজের দ্বারাও আমল নামক ভালো চারাগাছ উৎপন্ন হওয়ার আশা করা যায় না। পক্ষান্তরে পরিপক্ব ত্রুটিমুক্ত বীজের দ্বারা যেমন ভালো চারা উৎপন্ন হয়, তদ্রƒপ পরিপূর্ণ ত্রুটিমুক্ত ঈমান দ্বারাও আমল নামক চারাগাছ বের হয়

আল্লাহ তায়ালা সব মানুষকে কেয়ামতের ময়দানে একত্রিত  করে হাশরের মাঠে ঈমানের পরীক্ষা নেবেন। এ পরীক্ষায় যারা পাস করবে তারাই অনন্তকালের জন্য সুখময় জান্নাতে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে যারা এ পরীক্ষায় ফেল করবে তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামের আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলতে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা হাশরের ময়দানে সব মানুষকে উপস্থিত করে বলবেন : ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা কি দুনিয়াতে আমার সঠিকভাবে ইবাদত-বন্দেগি করেছ?’ তখন কাফের, মুশরিক, মোনাফেকরা মুসলমানদের সঙ্গে এক বাক্যে স্বীকার করে বলবে, ‘আমরা আপনার ইবাদত-বন্দেগি সঠিকভাবে আদায় করেছি।’ তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের এ স্বীকারোক্তিমূলক দাবিকে যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি ঈমানি পরীক্ষা নেবেন। আল্লাহ তায়ালা সেদিন বলবেন, তোমরা যদি নিজেদের কথায় সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে আজ আমার পায়ে সেজদা করো। তখন একমাত্র খাঁটি মোমিন নামাজি ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ আল্লাহর পায়ে সেজদা দিতে সক্ষম হবে না। কেননা সেদিন আল্লাহ তায়ালা তাদের পিঠকে কাঠের মতো কঠিন ও শক্ত করে দেবেন। যার ফলে শত চেষ্টা করেও পিঠ বাঁকা করে সেজদা দিতে সক্ষম হবে না। সেদিন মোমিনদের থেকে অপরাধীদের চিহ্নিত করা হবে। যারা আল্লাহর পায়ে সেজদা দিতে সক্ষম হবে না, তারা আল্লাহর সামনে লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘গোছা পর্যন্ত পা খোলার দিনের কথা স্মরণ কর, (অর্থাৎ কেয়ামতের দিনের কথা, যেদিন আল্লাহ তায়ালা তার পায়ের গোছা খুলে দেবেন) সেদিন তাদের সিজদা করতে আহ্বান জানানো হবে, অতঃপর তারা সিজদা করতে সক্ষম হবে না। (সিজদা না করতে পেরে) তাদের দৃষ্টি অবনত থাকবে; এবং তারা লাঞ্ছনাগ্রস্ত হবে, অথচ যখন তারা সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল, তখন তাদের সিজদা করতে (অর্থাৎ নামাজের জন্য) আহ্বান জানানো হতো (কিন্তু তারা মোটেও এই আহ্বানে সাড়া দেয়নি)। অতএব, যারা এই কালামকে মিথ্যা বলে, তাদের আমার হাতে ছেড়ে দিন, আমি এমন ধীরে ধীরে তাদের জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাব যে, তারা জানতেও পারবে না।’ ( সূরা আল-কলম : ৪২-৪৪)।
আল্লাহর পায়ে সেজদা একমাত্র তারাই দিতে পারবে, যারা দুনিয়াতে গুরুত্ব সহকারে সঠিকভাবে নামাজ আদায় করেছে। পক্ষান্তরে কাফের, মোনাফেক, মুশরিক এবং মুসলমান নামধারী যারা নামাজে অবহেলা করেছিল কিংবা লোক দেখানো বা সুনাম লাভের আশায় নামাজ আদায় করেছিল, তারা হাজারো চেষ্টা করেও সিজদা করতে সক্ষম হবে না। তারা সিজদা করতে যাবে কিন্তু তাদের পিঠ কিছুতেই বাঁকা হবে না। আল্লাহ তায়ালা নামাজের ব্যাপারে গাফেলদের সম্পর্কে বলেছেন : ‘দুর্ভোগ সেসব নামাজির জন্য, যারা তাদের নামাজ সম্বন্ধে বে-খবর।’ (সূরা মাউন : ৪-৫)।
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যখন তোমরা নামাজের জন্য তাদের আহ্বান করো, তখন তারা এ নামাজকে উপহাস ও খেলা বলে মনে করে। কারণ, তারা নির্বোধ।’ (সূরা মায়েদা : ৫৮)।
বর্তমান সময়ে আমাদের অসুস্থ সমাজে একটি বহুল প্রচলিত হাস্যকর প্রবাদ বাক্য আছে। সেটা হলোÑ  ‘নামাজ না পড়লে কী হবে, ঈমান ঠিক আছে।’ আসলে একজন সুস্থ বিবেকবান মানুষের পক্ষে এমন ভিত্তিহীন কথা বলা মোটেও শোভনীয় নয়। কেননা ঈমান এমন একটি নিরেট স্বচ্ছ স্থূল অবিভাজ্য বিষয়, যা কখনও পৃথক করা যায় না। ওলামায়ে কেরাম ঈমানের ফরজিয়াত সম্পর্কে বলেছেন, ঈমানের পরিপূর্ণতা লাভ হয় তিনটি বিষয়ের ওপর আমলের মাধ্যমে। যেমন : ১. তাওহিদ, রিসালাত, আখেরাত মুখে স্বীকার করে নেওয়া। ২. অন্তরে তা পরিপূর্ণ বিশ্বাস করা। ৩. কাজে তা বাস্তবায়ন করা। এই তিনটি বিষয়ের যে কোনো একটি না থাকলে ঈমান কারও মাঝে পরিপূর্ণতা হাসিল হয় না। এখন কেউ যদি অন্তরে বিশ্বাস করে নেয় এবং মুখেও স্বীকার করে নেয় নামাজ একটি ফরজ ইবাদত। কিন্তু যদি সে কাজ বাস্তবায়ন না করে, তাহলে সে যতই নিজেকে ঈমানদার ভাবুক না কেন, তার মাঝে ঈমানের পূর্ণতা বাকিই থেকে যাবে।
আসলে ঈমান হচ্ছে ত্রুটিমুক্ত বীজের মতো। অপরিপক্ব ত্রুটিযুক্ত বীজ দ্বারা যেমন ভালো চারাগাছ উৎপন্ন হওয়ার আশা করা যায় না। ঠিক তদ্রƒপ অপরিপূর্ণ ত্রুটিযুক্ত ঈমান নামক বীজের দ্বারাও আমল নামক ভালো চারাগাছ উৎপন্ন হওয়ার আশা করা যায় না। পক্ষান্তরে পরিপক্ব ত্রুটিমুক্ত বীজের দ্বারা যেমন ভালো চারা উৎপন্ন হয়, তদ্রƒপ পরিপূর্ণ ত্রুটিমুক্ত ঈমান দ্বারাও আমল নামক চারাগাছ বের হয়। সমাজের মানুষের কাচে ত্রুটিযুক্ত বীজের যেমন কোনো মূল্য নেই। তদ্রুপ ত্রুটিযুক্ত ঈমানেরও তেমন আল্লাহর কাছে কোনো মূল্য নেই। এমন ত্রুটিপূর্ণ ঈমানের অধিকারী ব্যক্তি কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহর পায়ে সিজদা দিতে সক্ষম হবে না। কেননা সে দুনিয়াতে মুখে স্বীকার করেছে কিন্তু কাজে পরিণত করেনি। সুতরাং যার ঈমান নামক বীজ যত পরিপক্ব হবে তার আমল নামক চারাগাছ ততই ভালো হবে। তাই এই আলোচিত বক্তব্য ‘নামাজ না পড়লে কী হবে ঈমান ঠিক আছে’Ñ এমন কথা বলা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। এমন বক্তব্য আমাদের পরিহার করা উচিত।