আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৩-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

সংসার সুখের হয় মায়ের পরশে

জুবায়ের আহমেদ
| সভ্যতা ও সংস্কৃতি

 

গুণিজনেরা বলেন, সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে। কথাটি চিরন্তন সত্য হলেও একটি সংসার সত্যিকার অর্থেই সুখী সংসার হিসেবে গণ্য হয় ভালো মায়ের কল্যাণে। ভালো মা বলতে শুধু একটি পরিবারের ভালো মা-ই নয় বরং নবদম্পতির অর্থাৎ স্বামীর মা ভালো হওয়া এবং স্ত্রীর মা ভালো হওয়াকেই বোঝাতে চেয়েছি। একটি সংসার সুখের হতে গেলে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের মাকেই ভালো হতে হয়, অন্যথায় সংসার সুখের বদলে দুঃখের সাগরে ভেসে যায়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দুষ্ট শাশুড়ির কারণে সংসার নরকে পরিণত হওয়ার বহু ঘটনা বিদ্যমান, যদিও ভালোর সংখ্যাও কম নয়।
একটি পরিবারে পুত্রবধূ আসার আগ পর্যন্ত সে পরিবারটিকে সুখী পরিবার হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। এ সময়ে সংসারে অভাব থাকলেও সবাই সব বিষয়ে একমত থাকে, সুখে-দুঃখে পাশে থাকে একে-অপরের। বাবা-মা যখন সন্তানদের বড় করে ঘরে পুত্রবধূ আনেন কিংবা মেয়েকে অন্যের ঘরে পাঠান, মূলত তখনই একটি সংসারের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা বোঝা যায়। স্বামীর মা যদি ভালো না হয় পুত্রবধূ সুখী হতে পারে না, আবার পুত্রবধূ যদি নিজেও খারাপ হয় কিংবা শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে নাও পারে কিন্তু পুত্রবধূর মা যদি ভালো হয়, তখন একমাত্র ভালো মায়ের কারণেই মেয়েটিও নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে মায়ের সহযোগিতায় ও শাসনে। সে সঙ্গে শ্বাশুড়ি ভালো হলে এবং পুত্রবধূকে নিজের মেয়ের মতো মনে করলে পুত্রবধূ খারাপ হলেও তাকে মানিয়ে নেওয়া যায়, সংসারমুখী করা যায়।
বাংলাদেশে বহু ঘটনা বিদ্যমান, যেখানে দেখা যায়Ñ স্বামীর মায়ের কারণে অশান্তি সৃষ্টি হয়, আবার বহু ঘটনা দেখা যায়, মেয়ের মা ভালো না হওয়ায় সংসারে অশান্তি লেগে থাকে। সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত থাকা এক কনস্টেবল আত্মহত্যা করেছেন এবং তিনি আত্মহত্যা করার আগে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেনÑ আমার ভেতরের যন্ত্রণাগুলো অনেক বড় হয়ে গেছে, আর সহ্য করতে পারছি না, প্রাণটা পালাই পালাই করছে ... আপনারা পাত্রী পছন্দ করার আগে পাত্রীর ‘মা’ ভালো কিনা সঠিকভাবে খবর নেবেন। কারণ পাত্রীর মা ভালো না হলে, পাত্রী কখনোই ভালো হবে না। ফলে আপনার সংসারটা হবে দোজখের মতো। আত্মহত্যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না হলেও একজন সুস্থ মানুষ আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতিতে থাকেন, তা সহজেই অনুমেয়। আত্মহত্যা করা ব্যক্তিটি হয়তো বিস্তারিত বলে যাননি, তবে মৃত্যুর আগে যেহেতু তিনি শাশুড়িকেই ইঙ্গিত করে দোষারূপ করে গেছেন, এতে সহজেই বলা যায় মেয়ের সংসারে কতটা বাজে প্রভাব ফেলেছে মা, যার দরুন নরকে পরিণত হয়েছিল মেয়ের সংসার। আবার কখনও কখনও শাশুড়িসহ শ্বশুরবাড়ির নানামুখী অত্যাচারের কারণে বহু নারী আত্মহত্যা করার ঘটনাও ঘটেছে বাংলাদেশে।   
একজন মা শুধু ছেলেমেয়ের শ্বাশুড়িই হন না, মাও হন। আর এই মা, ভালো মা হলে সংসার সুখের হবেই, সাংসারিক সুখ, দুঃখ, কান্না হাসির মাঝেও সংসার সুখের হয়, আর্থিক অভাব-অনটন থাকলেও সংসার সুখের হয়, ছেলেমেয়েরা ভুল পথে পরিচালিত হলেও ভালো মায়ের কারণে সন্তানরা সঠিকপথে আসতে বাধ্য হয়, কেননা মায়ের মাধ্যমেই সন্তান ভালোবাসা শেখে, সততা শেখে, সম্মান করা শেখে। আবার মায়ের আস্কারা পেয়েই বহু সন্তান নষ্ট হয়ে যায়, সঠিকভাবে শাসন করতে না পারার কারণেই বহু ছেলেমেয়ে ভুল পথে পা বাড়ায়। মেয়ে স্বামীর সংসারে ছোটখাটো বিষয়গুলোতে সমস্যায় পড়ার পর মায়ের সঙ্গে এসব বলার পর মায়ের আস্কারা পেয়েই মেয়েরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে, নিজেদের সংশোধন করা কিংবা পরিস্থিতি বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বদলে অশান্তির সৃষ্টি করে, আবার ছেলে মা ও পুত্রবধূ ভালো হোক কিংবা মন্দ হোক, মানিয়ে না নিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে, নষ্ট হয় ছেলের সংসার, নষ্ট হয় মেয়ের সংসার। নিজের মেয়েকে অন্যের পরিবারে সুখে দেখতে চাওয়া মা-ও নিজের পুত্রবধূর সঙ্গে সমস্যার সৃষ্টি করে, যা কাম্য নয়। একজন ভালো মায়ের কল্যাণেই সংসার সুখের হয়, ভালো মা মানেই সুখী পরিবার, ভালো মা মানেই আদর্শ সমাজ ও দেশ গঠনের কারিগর।