উচ্চশিক্ষিত হলেই যে চকরি করতে হবে, তা ঠিক নয়। শিক্ষিত মানেই চাকরিজীবী হওয়া! এমন ধারণা পাল্টে দিয়েছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের বাছুর আলগা গ্রামের বেলায়েত হোসেন শিপু। তিনি পড়ালেখা শেষ করে সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির তাগিদে প্রায় এক যুগ আগে চাকরিতে যোগ দেন। কিন্তু তার শয়নে-স্বপনে ভাবনাÑ এলাকায় একটা কিছু করে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। ২০১৬ সালের নভেম্বরে তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে উন্নতজাতের ২৭টি ছোট-বড় গরু লালন-পালন শুরু করেন। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। তার সফলতা দেখে এলাকার অনেকে গাভী পালন শুরু করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন।
বেলায়েত হোসেন শিপু জানান, প্রথমে ২৭টি গরু কেনা বাবত ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং গরু রাখার ঘর নির্মাণ বাবত ব্যয় হয় আরও ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর কিছুদিন পরই চারটি গাভী গর্ভধারণ করে। পর্যায়ক্রমে ১০টি গাভী বাছুর দিলে তার আয় বাড়তে থাকে। তখনকার সময় দুধ বিক্রি থেকে তার প্রতিদিন আয় হতো ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। এতে গাভীর খাবার ও শ্রমিকমূল্য বাবত ব্যয় বাদে লাভ থাকত ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। লাভের টাকায় তিনি চন্দ্রকোনা বাজারে সাড়ে ১৬ লাখ টাকা দিয়ে ৫.৫ শতক জমি কিনেছেন। এ জমি রেজিস্ট্রেশনসহ অন্যান্য খরচ বাবত ব্যয় হয় আরও দুগ্ধ খামারে সফল
অন্তত লাখ টাকা। এছাড়া তিনি পাকা ঘর তৈরি করেছেন এ দুগ্ধ খামারের লাভেই। শিপু জানান, চন্দ্রকোনা বাজারের জমি কেনার সময় কয়েকটি গাভী বিক্রি করতে হয়েছিল। তাছাড়া ষাঁড়গুলো বিক্রি করে দেওয়ায় বর্তমানে তার খামারে সাতটি গাভী আছে। এর মধ্যে তিনটি গাভী দুধ দিচ্ছে। প্রথম দিকে প্রতিটি গাভী ১০ থেকে ১২ লিটার করে দুধ দিলেও বর্তমানে প্রতিটি গাভী গড়ে ৫ লিটার করে দুধ দিচ্ছে। পাইকাররা তার বাড়ি থেকে প্রতি লিটার দুধ ৫০ টাকা করে পাইকারি হিসাবে কিনে নেন। এতে করে বর্তমানে দুধ বিক্রির টাকায় তার খামারের সব গরুর খাবার খরচ চলছে। তার এ সফলতা দেখে এলাকার অনেকে গাভী পালন শুরু করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন। উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবুল খায়ের মো. আনিসুর রহমান জানান প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে উপজেলার সব খামারিকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ সেবা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, যে কেউ গবাদি পশুপাখি পালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়িতে পশুপাখি পালন করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। সহজ ব্যাংক ঋণ, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ পেলে গাভী পালন করে যে কোনো বেকার তার বেকারত্বকে দূরে ঠেলে সফল হতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।