আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৩-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

দেশেও টিউলিপের হাসি!

এমএ মালেক, শ্রীপুর (গাজীপুর
| প্রথম পাতা

তুরস্কের জাতীয় ফুলের নাম টিউলিপ। নেদারল্যান্ডসেও টিউলিপ ফুলের ব্যাপক আবাদ হয়। বর্তমানে নেদারল্যান্ডসই প্রধান টিউলিপ ফুল উৎপাদনকারী দেশ। টিউলিপকে নিয়েই সেখানে গড়ে উঠেছে শিল্প। তাই দেশটি প্রতি বছরই পালন করে টিউলিপ উৎসব। শীতপ্রধান এসব দেশ এবং এশিয়ার ভারত, আফগানিস্তানসহ কয়েকটি দেশ ছাড়া দৃষ্টি জুড়ানো টিউলিপ ফুলের দেখা মেলা ভার। ছয় ঋতুর আমাদের এ দেশে এক 
সময় তো এ ফুলের কথা কল্পনা করা যেত না। তবে এখন দুয়ার খুলে দিয়েছেন এক ফুলচাষি। তিনি তার বাগানে টিউলিপ ফুটিয়ে দেশজুড়েই এর চাষের সম্ভাবনা তৈরি করেছেন। 
কথা হচ্ছিল গাজীপুরের শ্রীপুরের ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেনকে নিয়ে। তার বাগানে দীর্ঘ শীতের ক্লান্তি ভুলিয়ে এখন উঁকি দিচ্ছে টিউলিপ। স্বর্গীয় এক অনুভূতি বিরাজমান দেলোয়ারের ফুল বাগানে। দৃষ্টিনন্দন এসব টিউলিপ দেখতে উৎসুক মানুষেরও যেন বাড়ছে আগ্রহ। তার পুরো বাগানজুড়েই এখন টিউলিপময় ভালোবাসার গল্প। ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেন তার এ ফুল বাগানের নামকরণ করেছেন ‘মৌমিতা ফ্লাওয়ার্স’। এর আগে ২০১২ সালে তিনি জার্বেরা, চায়না গোলাপ ও বিদেশি বিভিন্ন ফুল চাষে সফল হয়ে ফুল চাষ সম্প্রসারণে ভূমিকা রেখেছিলেন। একজন সফল ফুলচাষি হিসেবে তিনি ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকে ভূষিত হন। সম্প্রতি তিনি দেশে প্রথমবারের মতো ভাইরাসমুক্ত সবজির চারা উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছেন।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের দেশে প্রতি বছর ব্যাপক ফুলের চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা মিটাতে হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ফুল আমদানি করে। ফুলচাষে জড়িয়ে রয়েছে কৃষি অর্থনীতির একটি অংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ফুল চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠলেও আমরা পিছিয়ে পড়ছিলাম। অর্থনীতির ও চাহিদার কথা চিন্তা করেই বিভিন্ন বিদেশি ফুল দিয়ে তিনি তার স্বপ্নের যাত্রা শুরু করেন। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও তিনি থেমে থাকেননি। তাই পেয়ে যাচ্ছেন একটির পর একটি সফলতা। জার্বেরা, চায়না গোলাপের পর তিনি টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে আবার পেয়েছেন সফলতা। পরীক্ষামূলক কাজ শেষে তিনি শুরু করবেন এ ফুল চাষ সম্প্রসারণের কাজ। টিউলিপ বর্ষজীবী ও বসন্তকালীন ফুল হিসেবে পরিচিত। প্রজাতি অনুযায়ী এর উচ্চতাও ভিন্ন হয়।
খ্যাতিমান ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেন জানান, পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির টিউলিপ থাকলেও তিনি গত ৮ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডস থেকে ১ প্রজাতির চার রঙের এক হাজার টিউলিপের বাল্ব এনে ১৫ ডিসেম্বর বাগানে রোপণ করেন। ৪৫ দিন পরিচর্যা শেষে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে টিউলিপ ফোটা শুরু হয়। দেশীয় আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে যার স্থায়িত্ব হতে পারে ২০ থেকে ২২ দিন। তার মতে, টিউলিপ ফুলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শীতের গভীরতা। সাধারণত টিউলিপ ফুল চাষে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রার প্রয়োজন। আমাদের দেশে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীত মৌসুমে তাপমাত্রা কম থাকে, বিধায় সেখানে টিউলিপ ফুল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বারি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের ফুল গবেষক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন খান জানান, টিউলিপ সাধারণত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফুল। আমাদের দেশে শীত মৌসুমে অনেকেই বাসাবাড়ির টবে বা শখের বশবর্তী হয়ে এ ফুলের চাষ করে আসছেন। তবে ফুল পাওয়া খুব স্বাভাবিক নয়। দেলোয়ারের বাগানে টিউলিপ ফুল ফোটায় এ থেকে আশার সঞ্চার হয়েছে। দেশে বাণিজ্যিকভাবে এখনও এ ফুল চাষ শুরু হয়নি। তবে শীত মৌসুমে আবহাওয়া ফুলের অনুকূলে থাকলে এ ফুলের চাষ করা যেতে পারে; বিশেষ করে উত্তরের জেলাগুলোতে। ফুল চাষি দেলোয়ারের এ উদ্যোগ সফলতার বীজ বপন করেছে দেশের কৃষকের মাঝে।
গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের উপ-পরিচালক মাহবুব আলম জানান, বর্তমানে উচ্চমূল্যে টিউলিপ ফুল আমদানী করে আমাদের দেশের চাহিদা মিটাতে হয়। একজন আদর্শ ফুলচাষী দেলোয়ারের টিউলিপ ফুল ফোটানোর সফলতায় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এ ফুলের চাষ ঘিরে। এ ফুলের চাষ সম্প্রসারনের মাধ্যমে কৃষি অর্থনীতিতেও ছোঁয়া লাগবে।