আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৩-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

ভোট পড়েছে ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ

ভোটার উপস্থিতি নিয়ে হতাশায় সব পক্ষ

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন b

আরিফুল ইসলাম
| প্রথম পাতা

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনসহ সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন কমিশনেরও এ বিষয়ে হতাশা রয়েছে। যদিও কমিশন ভোট ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট। ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। একই সঙ্গে ভোট কম পড়া প্রসঙ্গে ইসি বলেছে, সরকারি দলের অনেকে ভোট দিতে কেন্দ্রে না যাওয়ায় এটাও একটা কারণ। এছাড়া ভোট উপলক্ষে সাধারণ ছুটি থাকায় রাজধানীর অনেক নাগরিক ছুটির আমেজ উপভোগ করায় কেন্দ্রে যায়নি; এটাও ভোট কম পড়ার অন্যতম কারণ।

সচিব বলেন, ঢাকা উত্তরে ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং দক্ষিণে ২৯ দশমিক ০২ শতাংশ ভোট পড়েছে। সে হিসাবে দুই সিটিতে গড়ে ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে কম ভোট পড়লেও অসন্তুষ্টি নেই তাদের। ভোট আরও ভালো হতে পারত মন্তব্য করে তিনি বলেন, এর জন্য সব ধরনের আয়োজন রেখেছিল কমিশন। এখানে কারও ভোট কেউ দেয়নি এটাই সব প্রাপ্তি। কারণ কাউকে অবৈধ উপায়ে ভোট দিতে হয়নি এবং কাউকে ভোটাধিকার প্রয়োগে বাধা দেওয়া হয়নি। সবকিছু ঠিক ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা যেভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন, তাতে ভোটার উপস্থিতি আরও বেশি আশা করেছিলাম। আমরা ৫০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি আশা করেছিলাম। ভোট পড়ার হারে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই।

ভোটারদের আস্থাহীনতার কারণে এত কম ভোট পড়েছে কি নাÑ জানতে চাইলে সচিব মো. আলমগীর বলেন, অনাস্থার কারণে ভোট দিতে যায়নিÑ এটা আমার কাছে মনে হয়নি। অনাস্থার কারণে যদি ভোটে না যেত, তাহলে যারা সরকারি দল তাদের তো অন্তত ভোটে অনাস্থা নেই। তাদের যদি সব ভোটার ভোট দিত, তাহলেও তো এত কম ভোট পড়ত না। তার মানে হলো, তাদেরও অনেক ভোটার ভোট দিতে যাননি। যারা সরকারকে সমর্থন করেন। আমি ভোট না দিতে গেলেও সমস্যা নেই, এ ধরনের একটা মনোভাব থেকে হয়তো অনেকেই ভোট দিতে যাননি। ভোট দিতে না যাওয়ার আরও কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, জনগণ ছুটি পেয়েছে, অনেকে ছুটি ভোগ করেছে। কেউ কেউ ফেইসবুক নিয়ে ব্যস্ত ছিল।

মো. আলমগীর বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে পর্যবেক্ষকদের তো কিছু মতামত থাকবে। ভবিষ্যতে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী করা যায়, সে বিষয়ে তাদের হয়তো পরামর্শ থাকবে। সেগুলো দেখে হয়তো কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। অনেক গোপন কক্ষে আরেকজন আগে থেকে দাঁড়িয়ে ছিল কিংবা গোপন কক্ষে গিয়ে একজনের ভোট অন্যজন ভোটার উপস্থিতি নিয়ে

দিয়েছে। এ বিষয়ে কমিশন কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করবে কি না? এর জবাবে মো. আলমগীর বলেন, আপনাদের মিডিয়ার মাধ্যমে এ অভিযোগটি আমাদের কাছে এসেছে। তাও খুবই অল্প মাত্রায়। আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেননি।
ভোটারদের না আনতে পারার ব্যর্থতা নির্বাচন কমিশনের কি নাÑ জানতে চাইলে সচিব বলেন, মোটেই নয়। কারণ ভোটকেন্দ্রে আসার দায়িত্ব ভোটারের। বিয়ের দাওয়াত দেওয়ার দায়িত্ব আমার, কিন্তু দাওয়াতে আসবেন কি না, সেটা আপনার ব্যাপার। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোয় ভোটের হার অনেক কম। অস্ট্রেলিয়ায় ভোট দিতে যায় না মানুষ। অস্ট্রেলিয়া সরকার ও নির্বাচন কমিশন কী ব্যর্থ? মোটেই নয়। এজন্য সেখানে আইন করা হয়েছে, ভোট না দিতে এলে ১০০ ডলার জরিমানা দিতে হবে। তারা ১০০ ডলার জরিমানা দেয়, এরপরও ভোট দিতে যায় না। বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এটিও আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে শুনেছি। এ বিষয়ে কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ করেননি। এ দুই অভিযোগ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিশনে লিখিতভাবে এলে তদন্ত করা হবে, না হলে করা হবে না বলেও জানান ইসি সচিব।
কমিশন সচিব আরও বলেন, দুই সিটি নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্থীদের প্রচারসামগ্রী সোমবারের (আজ) মধ্যে নিজ দায়িত্বে অপসারণ করতে হবে। যদি এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে এবং প্রার্থীদের কাজটি আমাদের করতে হয়, তাহলে তার নির্বাচনি সামগ্রী অপসারণ করাতে যে অর্থ ব্যয় হবে, তার পুরোটাই প্রার্থীকে দিতে হবে। এর আগে এক পরিপত্রে প্রার্থী নির্বাচনি সামগ্রী অপসারণের তাগিদ দিয়েছিল। কিন্তু এতে প্রার্থীদের কর্ণপাত হয়নি। শনিবারও ইসি সচিব নতুন হুঁশিয়ারি দিলেও তার কতটুকু কার্যকর হবে, এখন সেটাই দেখার বিষয়। ১ ফেব্রুয়ারি দুই সিটি ভোটে আওয়ামী লীগের মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের নিরঙ্কুশ বিজয় হয়েছে।
এদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশন মিলে দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারদের অনুপস্থিতি বিদ্যমান নির্বাচনি ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের গণহতাশা ও গণঅনাস্থার বহিঃপ্রকাশ। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাতের ভোট ডাকাতির নির্বাচন মানুষকে ভোটের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার পরিবর্তন সম্ভব সে বিষয়ে নিরুৎসাহিত করে তুলেছে। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। জনগণের ভোটকেন্দ্র বিমুখিতার জন্য দায়ী আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোট ও নির্বাচন কমিশন। এরা নির্বাচনকে তামাশায় পরিণত করেছে। অবিলম্বে অথর্ব নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করেছে বাম জোট। 
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ জনগণের মধ্যে ভয়ভীতি সঞ্চার করায় অধিকাংশ মানুষ ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট প্রদান করতে নিরুৎসাহিত হয়েছে। নেতারা বলেন, অধিকাংশ কেন্দ্রে ভয়ের পরিবেশ এবং সরকারি দলের দখলদারিত্ব সৃষ্টি করে জনমনে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছিল; যাতে জনগণ ভোটকেন্দ্রে আসতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। ভোট কেন্দ্রের চতুর্দিকে অবাঞ্ছিত ব্যক্তি ও সরকারদলীয় লোকজনের উপস্থিতিও মানুষকে ভোটবিমুখ করে তোলে। এজন্যও মানুষ ভয়ে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়নি। বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের নিশ্চিত ভোটার ছাড়া অন্যদের তাড়িয়ে দেয় সরকারদলীয় সমর্থকরা। এমনকি ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে ঢুকে, ভোটারদের ভোটটিও দিতে না দিয়ে, সরকারদলীয় কর্মীরা নিজেরাই সে ভোট দেওয়ার কাজটিও সম্পন্ন করে। এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোট প্রদানে ‘গোপনীয়তা’ বলে কোনো কিছু রক্ষা করা হয়নি। অধিকাংশ কেন্দ্রে সরকারদলীয় পোলিং এজেন্ট ছাড়া অন্যদের ঠাঁই হয়নি। ইভিএমের স্বচ্ছতা নিয়ে জনমনে যে অবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে, তা এ নির্বাচনে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিবৃতিতে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে গণআন্দোলন ও গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে।
 দুই সিটি ভোট নিয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোট দিতে পারেনি এমন অভিযোগ রয়েছে। ওই নির্বাচনে নিজের ভোট দিতে না পারায় এখন ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। বলা যায়, জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব এর পরের সব নির্বাচনে পড়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে যত যা-ই বলা হোক না কেন, নির্বাচনগুলোয় ভোটারের উপস্থিতি ধারাবাহিকভাবে কমছে। তিনি বলেন, যখন ভোটাররা দেখেন তাদের ভোট আগেই হয়ে যায়, তখন তারা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ আর পায় নাÑ এটাই স্বাভাবিক।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচনে ইভিএম ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের অবিশ^াসের কারণে ভোটাররা ভোট দিতে যাননি। ইসি নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দুই সিটিতে ইসি যে ভোটার উপস্থিতির ক