আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৩-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী

শিল্প সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিতে চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক
| প্রথম পাতা

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন শেষে বিভিন্ন স্টল পরিদর্শনকালে মুজিব গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অমর একুশে বইমেলার মধ্য দিয়ে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতিকে কেবল বাংলাদেশের মধ্যেই নয়, বিশ্ব দরবারে পৌঁছাতে চাই। রোববার রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন করে তিনি এ কথা বলেন। এ অনুষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিকথা নিয়ে লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন’ নামক তৃতীয় বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় জাতির জনকের শততম জন্মবার্ষিকীতে ‘মুজিববর্ষে’ জাতীয় গ্রন্থমেলাকে উৎসর্গ করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ২০১৯ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত ১০ জন কবি ও লেখকের হাতেশিল্প সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে

পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ২০১২ সালের জুনে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ২০১৭ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৯৮তম জন্মদিনে বাংলা একাডেমি দ্বিতীয় বই ‘কারাগারের রোজনামচা’ প্রকাশ করেছিল। এবার তৃতীয় বই হিসেবে ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইটির প্রকাশ করা হলো। জানা যায়, ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চীনে একটি শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। ১৯৫৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে রাজবন্দি হিসেবে বন্দি থাকা অবস্থায় এ বইয়ের লিপিবদ্ধ স্মৃতিকথাগুলো তুলে ধরেছিলেন।
মোড়ক উন্মোচন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনকের এই বইয়ে তিনি চীন সম্পর্কে যে ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন, আজকের চীন যেন সেদিনের জাতির জনকের ভবিষ্যৎ বাণীর প্রতিফলন। এ সময় জাতির জনকের শততম জন্মবার্ষিকীতে ‘মুজিববর্ষে’ জাতীয় গ্রন্থমেলাকে উৎসর্গ করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০ এর উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের শিল্প, কলা, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে আমরা আরও উন্নতমানের করে শুধু আমাদের দেশে নয়, বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিতে চাই। আমাদের সাহিত্য আরও অনুবাদ হোক। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ আমাদের সাহিত্যকে জানুক, আমাদের সংস্কৃতিকে জানুক, সেটাই আমরা চাই। বাংলা একাডেমি এ ব্যাপারে যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছে।’
একুশে বইমেলার আবেদনের কথা বোঝাতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশের এই বইমেলা, গ্রন্থমেলা বলেন আর বইমেলা বলেন, বইমেলা বলতেই একটু আপন আপন মনে হয় বেশি। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ায় ছাত্রজীবনের মতো বইমেলায় স্বাধীনভাবে বেশি সময় কাটাতে না পারায় আক্ষেপও ঝরে তার কণ্ঠে। তিনি বলেন, এই বইমেলা বা গ্রন্থমেলা এটা আমাদের প্রাণের মেলা। যদিও সত্যি কথা বলতে কি, প্রধানমন্ত্রী হয়ে সবসময় এটাই দুঃখ লাগে যে, এখন আর সেই স্বাধীনতা নেই, আগে  যেমন ছাত্রজীবনে এখানে দিনের পর দিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতাম এবং ঘুরে বেড়াতাম বইমেলায়। পুরো সময়টা পারলে থাকতাম। সেটা আর এখন হয়ে ওঠে না। এই একটা দুঃখ এখনও থেকে যাচ্ছে। সেই স্বাধীনতা আর পাচ্ছি না। তারপরও আমি বলব এ বইমেলা আসলেই ভালো লাগে।
বাংলা একাডেমি প্রকাশিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চীন সফরের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতার সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব কারাগারে যে খাতা কিনে দিতেন তাতেই বঙ্গবন্ধু তার লেখা শুরু করেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কারাগারে যখন তিনি ছিলেন আমার মা সব সময় লেখার খাতা কিনে দিয়ে কিছু  লেখার জন্য অনুরোধ করতেন। সেই থেকে তার লেখা শুরু।
বইয়ের বিশেষ একটি দিক নজরে আসার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক নেতা যিনি এত অত্যাচারিত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন পাকিস্তানি শাসক দ্বারা। কেবল তিনি এই নির্যাতন ভোগ করেই বিদেশে গেলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে পাকিস্তানি শাসকরা যে তাকে এত অত্যাচার করেছে বা এখানে এত কিছু করেছে সে বিষয়ে কিন্তু  কোনো কথা কারও কাছে বলেননি। বরং তিনি বলছেন আমাদের দেশের  ভেতরে যা হচ্ছে সেটা আমরা তো বিদেশে এসে দেশের বদনাম করতে পারি না। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে দেখি আমাদের দেশে অনেকেই বিদেশিদের কাছে আমাদের দেশের বদনাম করতে গেলেই যেন আরও  বেশি উৎসাহিত হয়ে যা না ঘটে তাও আরেকটু বেশি করে বলে। এই প্রবণতাটা আমরা দেখি।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ প্রকাশিত হলেও চীন সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখাটি সব থেকে পুরোনো বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী মেলা ঘুরে দেখেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৯ বিতরণ করেন। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৯ সালের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার  পেয়েছেন ১০ জন কবি ও লেখক।
এবার কবিতায় মাকিদ হায়দার, কথাসাহিত্যে ওয়াসি আহমেদ, প্রবন্ধ ও গবেষণায় স্বরোচিষ সরকার, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, অনুবাদে খায়রুল আলম সবুজ, আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণে ফারুক মঈনউদ্দীন, বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞানে নাদিরা মজুমদার, নাটকে রতন সিদ্দিকী, শিশুসাহিত্যে রহীম শাহ এবং ফোকলোরে সাইমন জাকারিয়াকে পুরস্কৃত করা হয়। ১৯৬০ সাল থেকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার  দেওয়া হচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, সচিব মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপুস) সভাপতি আরিফ  হোসেন ছোটন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী।